জঙ্গিদের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগের কথা প্রথম জানা গিয়েছিল এনআইএ সূত্রে। তার পরে এক রাজনৈতিক নেতা নিজেই এগিয়ে এসে স্বীকার করেছিলেন, জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর নেতা শাহনুর আলমের সঙ্গে তাঁর ও অন্য একাধিক নেতা-বিধায়কদের দেখাসাক্ষাৎ হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে বিএসএফ যে রিপোর্ট পাঠিয়েছিল, সেখানেও জামাত-জঙ্গিদের সঙ্গে অসমের রাজনৈতিক দলগুলির ঘনিষ্ঠতার কথা বিশদে উল্লেখ করা হয়। তার পরেও জেহাদি সংগঠনের সঙ্গে রাজ্যের নেতা-বিধায়কদের যোগসাজসের অভিযোগ আজ বিধানসভায় নস্যাৎ করে দিল তরুণ গগৈয়ের সরকার!
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে আজ বিধানসভায় একটি প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়েছে, জঙ্গি শাহনুরের সঙ্গে রাজ্যের কোনও রাজনৈতিক নেতার যোগাযোগ নেই। মুকালমুয়া থেকে উদ্ধার হওয়া নথিপত্রে শাহনুরের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার কোনও প্রমাণও মেলেনি। ধুবুরি থেকে বাংলাদেশে জেএমবি-র জঙ্গি শিবিরে প্রশিক্ষণের জন্য যুবকদের পাঠাবার ব্যাপারেও সরকারের হাতে নির্দিষ্ট তথ্য নেই। এমনকী, রসুল হক নিজে শাহনুরের সঙ্গে দেখা করার কথা কথা প্রকাশ্যে মেনে নিলেও, সরকারি প্রতিবেদনে দাবি, শাহনুরের সঙ্গে হকের দেখা করা বা অর্থ সাহায্য চাওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানা যায়নি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধৃতদের মধ্যে শাহনুর, সুজানা ও আরও তিন জন পশ্চিমবঙ্গের শিমুলিয়া এবং মকিমনগর মাদ্রাসায় অস্ত্র চালনা ও বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। অন্য ৬ জন ছিল যোগাযোগকারী। তদন্তে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের শেষ দিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা কয়েক জন জেহাদি নেতা বরপেটা ও নলবাড়ির যুবকদের বাছাই করে জেহাদি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ-ই স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্বে। তাঁর দফতর থেকে এই রিপোর্ট দেওয়া হল কি বড়সড় কোনও কেলেঙ্কারি চাপা দিতেই? এ বিষয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের দাবি, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কী প্রমাণ পেয়েছে, রাজ্যের তা জানার কথা নয়। রাজ্য পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে যে তথ্য আছে, তার ভিত্তিতেই এই রিপোর্টটি লেখা হয়েছে। জঙ্গিদের রাজনৈতিক সংস্রবের কোনও তথ্য রাজ্য পুলিশের কাছে নেই।
নলবাড়িতে শাহনুরের স্ত্রী সুজানার আত্মীয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে যে নথিপত্র মেলে, সেখান থেকেই এনআইএ প্রথম জানতে পারে জেএমবি-র বরপেটা মডিউলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদত রয়েছে। তাদের দাবি, শাহনুরকে জেরা করে জানা গিয়েছে, একাধিক বিধায়ক ও নেতার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। এমনকী সে দিসপুরের বিধায়ক আবাসেও এসে থেকেছে। তবে তদন্তের খাতিরে ওই নেতাদের নাম প্রকাশ করেনি এনআইএ। শাহনুরের সঙ্গে নেতাদের ঘনিষ্ঠতার কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরেই ধুবুরির প্রাক্তন এআইইউডিএফ বিধায়ক রসুল হক বাহাদুর জানান, তিনি শাহনুরকে চিনতেন। মাদ্রাসা ও মসজিদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে তাঁর বাড়ি এসেছিল সে। তিনি দাবি করেন, শাহনুর আরও কয়েক জন বিধায়কের সঙ্গেও দেখা করেছিল।
পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিএসএফের তরফে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়, সেখানেও বলা হয় একটি রাজনৈতিক দল ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যৌথ প্রয়াসে ধুবুরির এক দল যুবককে প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশে, জেএমবি-র শিবিরে পাঠানো হয়েছিল। এই নিয়ে চলতি বিধানসভায় সরব হয় বিজেপি। তারা দাবি করে, জেএমবি-র সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ করুক সরকার।
তবে এনআইএ এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছে না। নীরব বিএসএফও। তবে এনআইএ-র এক তদন্তকারী অফিসার রাজ্য সরকারের কথায় অবাক। তাঁর কথায়, “পুলিশি হেফাজত শেষ হওয়ার পরে আমরা শাহনুরকে জিম্মায় নেব। তখন প্রকৃত তথ্য প্রকাশ পাবে।” বিএসএফ-এর এক কর্তা জানান, “প্রথম থেকেই বিএসএফের রিপোর্টটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। রাজ্য সরকার নেতাদের বাঁচাবার চেষ্টা করছে। বিষয়টি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানানো হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy