Advertisement
E-Paper

শত্রু বাছতে কি ফের বিভ্রান্তি, প্রশ্নে সিপিএম

শত্রু বাছতে গিয়ে আবার কি চাঁদমারি গুলিয়ে যাচ্ছে! রাজ্যে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল। কিন্তু লোকসভা ভোটে বিজেপি-র উত্থানের পর সিপিএমের ভাবনাচিন্তা একটু যেন এলোমেলো! তাদের যত মাথাব্যথা যেন এখন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে! বিজেপি-র বিপদ বুঝে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সুর ধরেছেন, প্রায় তার সঙ্গেই মিলে যাচ্ছে সিপিএমের বক্তব্য। যা তৃণমূলকেই সাহায্য করছে কি না, প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৭

শত্রু বাছতে গিয়ে আবার কি চাঁদমারি গুলিয়ে যাচ্ছে!

রাজ্যে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল। কিন্তু লোকসভা ভোটে বিজেপি-র উত্থানের পর সিপিএমের ভাবনাচিন্তা একটু যেন এলোমেলো! তাদের যত মাথাব্যথা যেন এখন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে! বিজেপি-র বিপদ বুঝে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সুর ধরেছেন, প্রায় তার সঙ্গেই মিলে যাচ্ছে সিপিএমের বক্তব্য। যা তৃণমূলকেই সাহায্য করছে কি না, প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।

লোকসভা ভোটে এবং তার পরে দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে এ রাজ্যে বামেদের ভোটব্যাঙ্ক ভেঙেই মূলত বিজেপি শক্তিশালী হয়েছে। বিজেপি কেন্দ্রের শাসক দল হওয়ায় তৃণমূলের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাম কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই এখন গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাচ্ছেন। বিজেপি-র বিপদকে ছোট করে দেখলে সঙ্কট আরও বাড়বে বুঝেই তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ ধারালো করেছেন বাম নেতারা। সঙ্গে আক্রমণ জারি আছে তৃণমূলের বিরুদ্ধেও। কিন্তু মাঠে-ময়দানে বামেদের কর্মসূচির অধিকাংশই যে হেতু এখন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, তাই তৃণমূলের প্রতি সুর নরমের অভিযোগ উঠছে সিপিএমের বিরুদ্ধে।

মমতা যখন বিরোধী নেত্রী, তখন তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল সিপিএম-বিরোধিতা। যার জন্য তিনি ছুৎমার্গ ছেড়ে তখন এসইউসি বা পিডিএসের মতো ছোট বামপন্থী দলকে সঙ্গে নিয়েছেন নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য, আবার অন্য হাতে ধরে রেখেছেন কংগ্রেসকেও। তলে তলে মাওবাদীদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু এ সব বিতর্কে অবিচল ছিলেন মমতা। বিরোধী হিসাবে সিপিএমের লক্ষ্যও একই ভাবে শাসক তৃণমূলকে কোণঠাসা করা। কিন্তু কতটা বিজেপি, কতটা তৃণমূল, কার বিরোধিতায় কত দূর যাওয়া উচিত এই সব অঙ্ক বিচারে মূল লক্ষ্যটাই গুলিয়ে যাচ্ছে সিপিএমের! অভিযোগ এখন এমনই।

দেশের দুই শহরে সোমবারের ঘটনাপ্রবাহ অবশ্য সিপিএম নেতৃত্বকে আপাতদৃষ্টিতে এই অভিযোগ খণ্ডন করার সুযোগ দিয়েছে। দিল্লিতে সনিয়া গাঁধীর ডাকে জওহরলাল নেহরুর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার অবসরে মমতা বলেছেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবিলায় নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য সরিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে একজোট করা যেতেই পারে। কয়েক মাস আগে একটি টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে যেমন বলেছিলেন, প্রায় তারই পুনরাবৃত্তি করে এ দিন মমতা ফের বলেছেন, এ ব্যাপারে বামেদের সঙ্গে নিতেও তাঁর আপত্তি নেই। সিপিএম অবশ্য পত্রপাঠ মমতার প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর কথায়, “যে তৃণমূল সাম্প্রদায়িকতার প্রচার করছে, যে তৃণমূল সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে ঘর করেছে, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সে বিশ্বস্ত বন্ধু হতে পারে?”

তৃণমূলের প্রস্তাব সিপিএম প্রকাশ্যে উড়িয়ে দেবে, এর মধ্যে অস্বাভাবিকতা নেই। কিন্তু মমতার বার্তা প্রত্যাখ্যান করতে গিয়েও বিমানবাবু বারবার টেনে এনেছেন সেই সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গই। প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য জুড়ে অরাজকতা, শিক্ষায় নৈরাজ্য বা শিল্পে হতশ্রী দশার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে কেন তাঁরা তৃণমূলকে নিশানা করছেন না? সিপিএম ছেড়ে সদ্য বিজেপি-তে যোগ দেওয়া এক নেতার মন্তব্য, “বাম নেতারা আসলে খাঁচায় বন্দি বাঘ হয়ে গিয়েছেন। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থেকে তাঁদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল ধরে এনে দিলে মাংস খাওয়া। এখন শিকার করে খেতে গিয়ে মুশকিলে পড়ছেন!” রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী দল-সুলভ দুর্বার আন্দোলনে বিমানবাবুদের দেখা যাচ্ছে না বলেই প্রশ্ন উঠছে, শাসক দলের বিরুদ্ধে যখন এত হাতিয়ার ছড়িয়ে আছে চর্তুদিকে, বামেরা কেন তখন নিজেদের বেঁধে ফেলছে শুধু সাম্প্রদায়িকতার গণ্ডিতে?

এই অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য বামেরা তৈরি হচ্ছে বিধানসভায়। তাঁদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে বার্তা পাঠায় সরকার পক্ষ। যুক্তি, মুখ্যমন্ত্রী এখন কলকাতায় নেই। তাই আপাতত অনাস্থা নিয়ে আলোচনার দরকার নেই। বামেরা অবশ্য সেই আর্জি ফিরিয়ে দিয়ে অনাস্থায় অনড়। তারা ঠিক করেছে, মুখ্যমন্ত্রী থাকুন বা না থাকুন, অনাস্থা-বিতর্কে তারা তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াবে। আলোচনা হতে পারে সম্ভবত বুধবার।

কিন্তু সে সবই বিধানসভার অন্দরের কৌশল। বাইরে, মাঠে-ময়দানে তৃণমূল-বিরোধিতায় সিপিএমের দ্বিধা কি দলের নিচু তলায় বিভ্রান্তি তৈরি করছে না? সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যবাবু অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার। তৃণমূলই বাংলায় বিজেপি-কে ডেকে এনেছিল। তেল-জল দিয়ে বড় করেছিল তারাই! বিজেপি-র সঙ্গে লড়তে গেলে তৃণমূলকে উৎখাত করা অত্যন্ত জরুরি!”

বাম নেতাদেরই একাংশ মানছেন, তাঁদের সামনে আসলে উভয় সঙ্কট! বেশি বিজেপি-বিরোধিতা করতে গেলে তৃণমূলের সঙ্গে এক বন্ধনীতে পড়ে গিয়ে আখেরে শাসক দলের সুবিধা করে দেওয়ার আশঙ্কা। আবার বিজেপি-র সম্পর্কে নীরব থাকলে মেরুকরণের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়ার ভয়। তাই ভারসাম্যের কৌশল নিতে হচ্ছে। এবং এই শাঁখের করাতেই তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি!

tmc cpm relation bjp mamata bandyopadhyay cpm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy