Advertisement
E-Paper

ষড়যন্ত্রে সুদীপ্তর সঙ্গেই কুণাল, বলছে সিবিআই

সারদা কেলেঙ্কারিতে আগাগোড়াই নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছিলেন তিনি। কিন্তু সাংসদ কুণাল ঘোষের সেই দাবি আমল পেল না সিবিআইয়ের এফআইআরে। আলিপুর আদালতে জমা দেওয়া সেই এফআইআরে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অভিযোগ, সাধারণ মানুষকে সারদায় টাকা রাখার ব্যাপারে প্রলুব্ধ করতে কুণালের সঙ্গে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করেছিলেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন। সেই টাকা নয়ছয়ে সুদীপ্ত-কুণালের সঙ্গে ছিলেন সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সোমনাথ দত্তও।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৪ ০৩:২৯

সারদা কেলেঙ্কারিতে আগাগোড়াই নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছিলেন তিনি। কিন্তু সাংসদ কুণাল ঘোষের সেই দাবি আমল পেল না সিবিআইয়ের এফআইআরে। আলিপুর আদালতে জমা দেওয়া সেই এফআইআরে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অভিযোগ, সাধারণ মানুষকে সারদায় টাকা রাখার ব্যাপারে প্রলুব্ধ করতে কুণালের সঙ্গে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করেছিলেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন। সেই টাকা নয়ছয়ে সুদীপ্ত-কুণালের সঙ্গে ছিলেন সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সোমনাথ দত্তও।

কুণাল-সোমনাথ ছাড়াও সুদীপ্ত সেন সমাজের বেশ কিছু ‘প্রভাবশালী ব্যক্তি’র সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন বলে এফআইআরে অভিযোগ করেছে সিবিআই। অভিযোগে তারা বলেছে, ব্যবসার সুবিধার জন্য সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সম্পর্ক তৈরি করে দিয়েছিলেন ওই সব ‘প্রভাবশালী ব্যক্তি’। সারদা গোষ্ঠীর প্রতারণার সঙ্গে ওই সব ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি সিবিআই। তাদের অভিযোগ, ওই সব ‘প্রভাবশালী ব্যক্তি’ সারদার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ রাখেননি। প্রসঙ্গত, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-কে লেখা ৯১ পাতার চিঠিতে এই প্রমাণ লোপাটের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন কুণালও। রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগারে থাকাকালীন তিনি ওই চিঠি লেখেন।

এফআইআরে সিবিআইয়ের অভিযোগ, আমানতকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা টাকার বড় একটা অংশ মিডিয়া ব্যবসায় সরিয়ে দিয়েছিলেন সুদীপ্ত। আর তার পর সেই টাকা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ বেশ কিছু মানুষ। সমাজের উচ্চস্তরের প্রভাবশালী ওই সব ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ ব্যক্তিরা নিয়মিত সুদীপ্তর থেকে টাকা নিতেন। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নেওয়া সেই সব টাকার কোনও তথ্য-প্রমাণ সারদার ‘বুক অব অ্যাকাউন্টস’-এ অবশ্য নেই বলে জানিয়েছে সিবিআই।

সুপ্রিম কোর্ট সারদা-কাণ্ডকে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছে। সিবিআইয়ের অভিযোগ, সারদার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও অন্যান্য সুবিধা নেওয়া সমাজের ‘প্রভাবশালী’ এবং অন্য কিছু ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ ব্যক্তিও এই বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে যুক্ত। সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায়, সোমনাথ দত্ত, কুণাল ঘোষদের জেরা করে ওই সব ষড়যন্ত্রকারীর হদিশ পেতে চায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটি। ওই সব ব্যক্তির বিরুদ্ধেও ‘অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগ আনবে সিবিআই।

ইডি-কে লেখা চিঠিতে কুণালও সমাজের বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন। সেই চিঠিতে কুণালের দাবি ছিল, তিনি নিজে নির্দোষ। শুধু মিডিয়ার দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখাশোনা করা ছাড়া সারদায় তাঁর আর কোনও ভূমিকা ছিল না। কুণালের বক্তব্য, সারদার তহবিল থেকে সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে কোটি কোটি টাকা সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। অনেকে সরাসরি টাকা নেননি, তবে তাঁরা সারদার সংবাদ মাধ্যমগুলিকে পুরোদস্তুর নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। এই মামলার তদন্তে নেমে তৃণমূল সাংসদ অর্পিতা ঘোষকে ইতিমধ্যেই জেরা করেছে ইডি। নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে আর এক তৃণমূল সাংসদ মিঠুন চক্রবর্তীকেও।

তৃণমূল সাংসদ কুণালের ওই চিঠি তো বটেই, ফেরার হওয়ার আগে সুদীপ্ত সেন তাদের যে চিঠি দিয়েছিলেন, সেটিকেও হাতিয়ার করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে সিবিআই। সে কাজ শেষ হলে ওই ব্যক্তিদের সকলকেই জেরা করতে চায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তারা মনে করে, ওই ব্যক্তিরা সকলেই ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে’র অংশ।

এফআইআরে সিবিআইয়ের অভিযোগ, সুদীপ্ত-কুণাল-সোমনাথরা সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করেছিলেন সারদায় টাকা রাখার জন্য। কিন্তু এই ধারণা ছিল পুরোপুরি ভ্রান্ত। সাধারণ মানুষ তা না বুঝে টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সারদা কাণ্ডের তদন্তের ভার নিজেদের হাতে নিয়ে প্রাথমিক ভাবে রাজ্য পুলিশ এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর কাছ থেকে কিছু নথি যোগাড় করে সিবিআই। সেই নথি দেখিয়ে কলকাতার তিনটি আদালতে তিনটি পৃথক এফআইআর জমা দিয়েছে তারা। যার মধ্যে দু’টি এফআইআর হয়েছে সরাসরি সারদার চারটি সংস্থা এবং কুণাল-দেবযানী-সোমনাথ দত্ত-সহ সমাজের কিছু অজ্ঞাতপরিচয় প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। একটি এফআইআর করা হয়েছে সামগ্রিক ভাবে সমস্ত অর্থলগ্নি সংস্থার বেআইনি কাজকর্মের বিরুদ্ধে।

shibaji dey sarkar saradha case kunal ghosh sudipta sen
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy