লোকসভায় বিজেপির হিমাচল প্রদেশের সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে সরব। অথচ রাজ্য রাজনীতিতে এ নিয়ে হইচই করেও সংসদে বিষয়টি এ দিন পর্যন্ত তুলতেই পারছিল না সিপিএম-সহ বাম দলগুলি। বারবার নোটিস দিলেও তৃণমূলের আপত্তিতে আটকে যাচ্ছিল তারা। শেষ পর্যন্ত সীতারাম ইয়েচুরির কৌশলে আজ রাজ্যসভায় সারদা-প্রসঙ্গ তুলতে পারল সিপিএম। তুললেন সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে তার কিছু পরেই কলকাতায় সারদা মামলায় পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে গ্রেফতার করে সিবিআই!
লোকসভায় সিপিএমের এ রাজ্যের প্রতিনিধি মাত্র দু’জন। রাজ্যসভায় ইয়েচুরির নেতৃত্বে বাংলার সাংসদরা অনেক বেশি সক্রিয়। আজকের ঘটনা তারই পরিণতি বলে মনে করছেন অনেকে। তরুণ এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ঋতব্রত যে ভাবে সারদা-কথা তুলে রাজ্যসভা সরগরম করেছেন, তাতে দিনের শেষে ইয়েচুরি, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা মনে করছেন, তাঁদের পরিকল্পনা সফল।
সোমবার থেকেই সিপিএম রাজ্যসভায় বিষয়টি তোলার চেষ্টা করছিল। ‘জিরো আওয়ারে’ পন্জি প্রকল্প, তার ফলে মানুষের প্রতারণার বিষয়টি তোলার জন্য বারবার নোটিস দিচ্ছিলেন ঋতব্রত। কিন্তু কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে তৃণমূলের আপত্তিতে তা খারিজ করে দেওয়া হচ্ছিল। তৃণমূলের যুক্তি ছিল, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং মামলাটি বিচারাধীন। তাই সংসদে এটা তোলা যাবে না। পরপর কয়েক দিন এই ঘটনায় ইয়েচুরির কথা শুনে নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থা (এনবিএফসি)-র উল্লেখ করে নোটিস দেওয়া হয়। তার পরে তৃণমূলের আপত্তি আর ধোপে টেকেনি।
সুযোগ পেয়ে আজ বক্তৃতা শুরু করেই ঋতব্রত সারদা-কাণ্ডে চলে যান। সারদায় কত মানুষ প্রতারিত হয়েছেন, কত জন আত্মহত্যা করেছেন, ক’টি সংস্থা পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি ভাবে টাকা তুলছে, এ সব খতিয়ান দিয়েই সারদার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সারদার সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের যোগের প্রসঙ্গ তোলেন ঋতব্রত। বলেন, “বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকারের শরিক দল ঢাকায় মিছিল করেছে। অভিযোগ, সারদার লুঠের টাকা সে দেশের জামাত-ই-ইসলামির জঙ্গি শিবিরকে মদতের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।”
এর পর সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি কিনেছেন বলেও মন্তব্য করেন ঋতব্রত। বলেন, “চিট ফান্ড কোম্পানির মালিকরা, যাঁরা জেলে এবং বাইরে রয়েছেন, তাঁরা এই কথা বলছেন।” এ কথা শুনেই ডেরেক ও’ব্রায়েন, সুখেন্দুশেখর রায়-সহ তৃণমূল সাংসদরা আপত্তি জানান। সুখেন্দুর দাবি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ সংসদের রেকর্ড থেকে বাদ দিতে হবে। তাঁর যুক্তি, যিনি সংসদে নেই, তাঁর বিরুদ্ধে নাম করে অভিযোগ আনা হচ্ছে। সিবিআই তদন্ত করলেও কোথাও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নাম করেনি। সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। বিচারাধীন বিষয় কী ভাবে সংসদে তোলার অনুমতি দেওয়া হল, তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।
তৃণমূলের আপত্তিতেও ঋতব্রত থামেননি। চিৎকার করে তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকার সাক্ষীদের চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু মানুষের স্বর দাবিয়ে রাখা যাবে না।” দিনের শেষে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর উল্লেখ রাজ্যসভার রেকর্ড থেকে বাদ গিয়েছে। কিন্তু সিপিএম নেতারা মনে করছেন, কাজ হাসিল। পলিটব্যুরোর এক নেতা বলেন, “আমাদের আগেই কাজটা করা উচিত ছিল। বেটার লেট দ্যান নেভার!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy