Advertisement
E-Paper

সুদীপ্তর মতে দরকার ছিল আগেই, সুবিচারের আশা কুণাল-দেবযানীর

সারদা কেলেঙ্কারি নাট্যের একেবারে কেন্দ্রীয় চরিত্র ওঁরা দু’জন। সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়। প্রথম জন মনে করছেন, সিবিআই-কে দিয়ে আরও আগেই তদন্ত করানো দরকার ছিল। সেটা হলেই ভাল হতো। আর দ্বিতীয় জনের আশা, এ বার প্রকৃত বিচার হবে। সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত রয়েছেন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। আর আলিপুর মহিলা জেলে আছেন দেবযানী।

অত্রি মিত্র ও শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৪ ০৩:৪৬

সারদা কেলেঙ্কারি নাট্যের একেবারে কেন্দ্রীয় চরিত্র ওঁরা দু’জন। সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়। প্রথম জন মনে করছেন, সিবিআই-কে দিয়ে আরও আগেই তদন্ত করানো দরকার ছিল। সেটা হলেই ভাল হতো। আর দ্বিতীয় জনের আশা, এ বার প্রকৃত বিচার হবে।

সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত রয়েছেন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। আর আলিপুর মহিলা জেলে আছেন দেবযানী। সিবিআই তদন্তের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট যে শুক্রবার রায় দিতে পারে, টিভি-র কল্যাণে এ দিন সকালে তা জেনে গিয়েছিলেন বন্দিরাও। স্বভাবতই সুদীপ্ত ও দেবযানীর কৌতূহল ছিল অন্যদের থেকে বেশি। জেল সূত্রের খবর, অন্য দিনের তুলনায় বেশ ফুরফুরে ছিলেন সুদীপ্ত। রুগ্ণতার জন্য নিজের সেলেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। জেলের টিভি দেখেই জানতে পারেন, সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তিনি জেলকর্মীদের বলেন, “ভালই হয়েছে। আরও আগে হলে ভাল হতো।”

বিভিন্ন সময়ে সুদীপ্ত অবশ্য রাজ্য সরকারের স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) বা বিশেষ তদন্তকারী দলের তদন্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। যদিও ২০১৩ সালের ১৬ এপ্রিল সারদা সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ করে গা-ঢাকা দেওয়ার আগে, ৬ এপ্রিল তিনিই সিবিআই-কে চিঠি লিখে তদন্ত করার জন্য তাদের আবেদন জানিয়েছিলেন।

এ দিন সকাল থেকে আলিপুর মহিলা জেলে চলছিল রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠান। প্রায় সব বন্দিনীর মন ছিল ওই অনুষ্ঠানেরই দিকে। শুধু এক বন্দিনীকে উতলা লাগছিল। কখন অনুষ্ঠান শেষ হবে, কখন বাড়িতে টেলিফোন করতে পারবেন! তিনি দেবযানী। বেলা ১টা নাগাদ অনুষ্ঠান শেষ হতেই জেলের পাবলিক বুথ থেকে বাড়িতে ফোন করেন তিনি। ফোনের ও-পার থেকে জবাব আসার আগেই প্রশ্ন, “সুপ্রিম কোর্ট কি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে?” উত্তর শুনেই চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে দেবযানীর। ওই জেলের এক অফিসারের কথায়, “ফোনটা রেখে দেবযানী প্রায় দৌড়তে দৌড়তে আসছিলেন। একা একাই বলছিলেন, ‘সিবিআই-কে দিয়ে দিয়েছে। সিবিআই-কে দিয়ে দিয়েছে’।” ওই অফিসার জানান, বেশ কিছু দিন ধরে পেটের অসুখে ভুগছেন দেবযানী। তাই জেলের হাসপাতালেই থাকছেন। ওই অফিসারের কথায়, “রোগে ভুগে এমনিতে বেশ কাহিল হয়ে গিয়েছেন দেবযানী। কিন্তু ফোনটা ছাড়া ইস্তক সপ্রতিভ লাগছিল তাঁকে। বলছিলেন, ‘এ বার প্রকৃত বিচার হবে’।”

সারদা কাণ্ডের আর এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র কুণাল ঘোষও আগেই জেনে গিয়েছিলেন, সিবিআই তদন্তের ব্যাপারে শুক্রবারেই ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ জানাবে শীর্ষ আদালত। দমদম সেন্ট্রাল জেলে পৃথক সেলে রয়েছেন তিনি। সেখানে টিভি নেই। দুপুরের দিকে স্নান সেরে পাশে মাওবাদী নেতা সুদীপ চোংদার ওরফে কাঞ্চনের সেলে যান কুণাল। কারণ, ওই সেলে একটি রেডিও আছে। তাতেই সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের কথা জানতে পারেন ওই তৃণমূল সাংসদ। খবরটা পাওয়ার পরেও কুণালকে বেশ ভাবলেশহীন দেখাচ্ছিল বলে জানান জেলকর্মীরা। তিনি চুপচাপ ফিরে যান নিজের সেলে। পরে অবশ্য জেলের অফিসারদের বলেন, ‘‘আমার কিছু বলার নেই। তবে স্বাগত জানাচ্ছি। এ বার সঠিক বিচার পাব।”

প্রেসিডেন্সি জেলে আছেন সুদীপ্তের ছেলে শুভজিৎ। জেলের এক অফিসারই তাঁকে সিবিআই তদন্তের বিষয়টি জানান। শুভজিতের প্রতিক্রিয়া, “তা-ই নাকি! আমি তো জানতাম না। আপনার মুখেই শুনলাম।”

খবরটি শোনার পরে শুভজিৎকে মোটেই বিচলিত দেখায়নি বলে জানান জেলের ওই অফিসার। তবে রীতিমতো দুর্ভাবনায় রয়েছেন শুভজিতের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা শুনে চিন্তা হচ্ছে। বুঝতে পারছি না, সিবিআই তদন্ত করলে কি ওকে আরও বেশি দিন জেলে থাকতে হবে!”

সিবিআই তদন্ত সম্পর্কে মন্তব্যে নারাজ সুদীপ্তের দ্বিতীয় স্ত্রী পিয়ালি সেন। তাঁর উদ্বেগ পরিবার নিয়ে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) গ্রেফতার করার পরে তিনি এখন জামিনে মুক্ত। এ দিন যোগাযোগ করা হলে পিয়ালি বলেন, “আইনকানুন বুঝি না। ছেলে, মেয়ে আর স্বামীকে নিয়েই ছিল আমার দুনিয়া। আমি চাই, আমার স্বামী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক, ফিরে আসুক। শুভজিৎও জেল থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসুক।”

সিবিআই-কে দিয়ে তদন্ত করানোর ব্যাপারে শীর্ষ আদালতের নির্দেশে দেবযানীর পরিবার খুশি। তাঁর বাবা তিমির মুখোপাধ্যায়ের আশা, সিবিআই তদন্তে সত্য উদ্ঘাটিত হবে। “আমরা অনেক দিন ধরেই সারদা সংক্রান্ত সব মামলার বিচার একটি আদালতে করার আবেদন জানিয়ে আসছিলাম। এ বার তা হবে,” বললেন দেবযানীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা।

saradha case atri mitra shibaji dey sarkar sudipta sen kunal debyani
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy