Advertisement
E-Paper

সরছে মহাকরণের প্রাচীন নথি, তাড়াহুড়ো ঘিরে বিতর্ক

বঙ্গভঙ্গের জেরে গণবিক্ষোভ সংক্রান্ত আগাপাশতলা পুলিশি নথি। কিংবা ব্রিটিশ আমলে বাংলার চরমপন্থীদের বোমা তৈরির কৃৎকৗশল-সংক্রান্ত গোয়েন্দা রিপোর্ট। এ সবই এতদিন পড়ে ছিল মহাকরণের ২ নম্বর ব্লকের একতলায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৪ ০২:৩১
সরানো হচ্ছে নথি। —নিজস্ব চিত্র।

সরানো হচ্ছে নথি। —নিজস্ব চিত্র।

বঙ্গভঙ্গের জেরে গণবিক্ষোভ সংক্রান্ত আগাপাশতলা পুলিশি নথি। কিংবা ব্রিটিশ আমলে বাংলার চরমপন্থীদের বোমা তৈরির কৃৎকৗশল-সংক্রান্ত গোয়েন্দা রিপোর্ট। এ সবই এতদিন পড়ে ছিল মহাকরণের ২ নম্বর ব্লকের একতলায়।

শুধু কি তাই? তদানীন্তন ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে সাগর ডিঙিয়ে কালাপানি পার হওয়া যাত্রীদের তালিকা, বিশ শতক থেকে সরকার অধিগৃহীত যাবতীয় জমির নথি, হাওড়া ব্রিজের মূল নকশা, প্রথম দিন থেকে প্রকাশিত ক্যালকাটা গেজেট, ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিবিধ সরকার-বিরোধী খবরের ইংরেজি অনুবাদ, এমনকী ১৯৫২ সাল থেকে পরের ৫০ বছরে রাজ্যের সম্পূর্ণ ভোটার তালিকা এ সবই মজুত ছিল মহাকরণে রাজ্য লেখ্যাগার বা মহাফেজখানার ভাঁড়ারে।

এ সব নথিই এ বার ঘরছাড়া হচ্ছে। লালবাড়ি সংস্কারের তাগিদে রাজ্য প্রশাসন আগেই হাওড়ার নবান্নে সরে গিয়েছে। মহাকরণের মহাফেজখানাটিকেও এ বার সরতে হচ্ছে। সেই ১৮৭৩ থেকে সরকারের চোখে গুরুত্বপূর্ণ অজস্র সংবাদপত্রের রিপোর্ট এবং ১৯০০ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত নানা ঐতিহাসিক নথি সব মিলিয়ে মোট ১৫ হাজার বান্ডিল। ভবানী দত্ত লেনের রাজ্যের প্রাচীনতম (মহাকরণকে বাদ দিলে) মহাফেজখানাতেই ওই সব নথি এ বার নতুন ঠিকানা পাবে।

মহাকরণ সূত্রের খবর, গত ১৪ জুলাই নথি সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। কাজ মিটে যাবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে। কিন্তু এই স্থানান্তর নিয়েই মাথাচাড়া দিচ্ছে বিতর্ক। মহাফেজখানার প্রাক্তন অধিকর্তা প্রণব চট্টোপাধ্যায় সরাসরি ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন তাড়াহুড়ো’ ও ‘অপেশাদারিত্বে’র অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর মতে, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ম অনুযায়ী, এমন ঘোড়ায় জিন দিয়ে কখনওই এত গুরুত্বপূর্ণ নথি সরানো যায় না।

সরকারি কর্তারা বলছেন, কলকাতা থেকে রাজধানী দিল্লিতে সরাতেও আট বছর লেগেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানি বোমার ভয়ে কাঁপতে থাকা কলকাতা থেকে ইস্পাতের ট্রাঙ্কে ভরে সব নথি পাঠানো হয়েছিল বহরমপুরে।

এ বার অবশ্য পলিথিনের প্যাকেট করে কার্ডবোর্ডের প্যাকেটে ভরা হচ্ছে নথি। প্রতিটি নথির উপরে-নীচে থাকছে কাঠের মোটা পাটাতন। কিন্তু প্রণববাবু বা মহাফেজখানার আর এক প্রাক্তন অধিকর্তা অতীশ দাশগুপ্তের মতো বিশেষজ্ঞেরা সেই ব্যবস্থায় স্বস্তি পাচ্ছেন না। প্রণববাবুর মতে, “মহাকরণের স্থাপত্যের ঐতিহ্য বাঁচাতে সংরক্ষিত নথির ঐতিহ্য নষ্ট হতে বসেছে।” তবে ধাপে ধাপে মহাকরণ থেকে নথি সরানোর যৌক্তিকতা নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। এর আগে ইতিহাসের প্রথিতযশা অধ্যাপক প্রয়াত বাসুদেব চট্টোপাধ্যায়ও মহাফেজখানা থেকে নথি সরানোর প্রক্রিয়ায় জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু অতীশবাবুর মতে, “এই কাজটা সাবধানে করা দরকার। যে কোনও নথি আর মহাফেজখানার প্রাচীন নথি এক নয়, এটা মাথায় রাখতে হবে।”

কিছু নথি এর আগে শেক্সপিয়র সরণির একটি ভবনেও সরানো হয়েছিল। ভবানী দত্ত লেনের বাড়িটিতে ইংরেজ আমলে গোটা দেশের সব থেকে প্রাচীন নথি রয়েছে। কিন্তু সেই বাড়ির দশতলায় নথিপত্র রাখাটা অত্যন্ত ঝুঁকির বলে অনেকেরই মত। কারণ ঝড়জলে সহজেই সে সব নষ্ট হতে পারে। এই বাড়িটিতে কলেজ সার্ভিস কমিশনের দফতর বসানো নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে ইতিহাসবিদদের। প্রণববাবুর মতে, “একই বাড়িতে অন্য দফতরের সঙ্গে মহাফেজখানা থাকতে পারে না। এটা রাষ্ট্রপুঞ্জের (ইউনেস্কো) নিয়মবিরুদ্ধ।”

নথির রক্ষণাবেক্ষণে এই গা-ছাড়া ভাবের পাশাপাশি এ রাজ্যে ঐতিহাসিক নথি বাছাই সংক্রান্ত আইন ‘পাবলিক রেকর্ড ল’ (১৯৯৩)-ও যথাযথ ভাবে প্রয়োগ হয়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পোড়খাওয়া সরকারি কর্তাদের আক্ষেপ, স্বাধীনতার পর থেকেই নথি সংরক্ষণ নিয়ে ক্রমশ একটা ঢিলেঢালা ভাব দেখা দিয়েছিল। সেই পরম্পরাই এখন জাঁকিয়ে বসেছে।

writers' building removal of old documents controversy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy