পুলিশের রিপোর্ট, বিভিন্ন পক্ষের আবেদন, সাক্ষীদের বয়ান-সহ নানান তথ্য জমা পড়েছে সাত বছর ধরে। হঠাৎ জানা গেল, কলকাতা হাইকোর্টের হেফাজত থেকে নন্দীগ্রাম মামলার সেই সব কাগজপত্র নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে! নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার নথি উধাওয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রহস্য দানা বেঁধেছে। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, সাত দিন অর্থাৎ আগামী বুধবারের মধ্যে এই মামলার সমস্ত ফাইল পুনরায় পেশ করতেই হবে।
২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। সেই ঘটনা নিয়ে রাজ্য তো বটেই, দেশ জুড়ে আলোড়ন ওঠে। ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ ১৫ মার্চ কলকাতা হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এই ব্যাপারে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই মামলার সূত্র ধরে হাইকোর্টে অসংখ্য আবেদন আসে। অনেক রিপোর্ট দেয় পুলিশও। গত সাত বছর ধরে তার সঙ্গে জমা পড়ে সাক্ষীদের বক্তব্যও। বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এ দিন ওই মামলার শুনানি ছিল। তখনই জানা যায়, নন্দীগ্রাম কাণ্ডের কোনও কাগজপত্রই নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
নথিপত্র লোপাটের কথা শোনার পরে ক্ষুব্ধ বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় হাইকোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রারকে ডেকে পাঠান। তাঁর কাছে জানতে চান, নন্দীগ্রাম মামলার ফাইলপত্র গেল কোথায়? রেজিস্ট্রার তাঁকে বলেন, ফাইলগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। সেগুলো কোথায় গেল, তা তিনি জানেন না। বিচারপতি জানিয়ে দেন, আগামী ৫ মার্চ, বুধবারের মধ্যে যে-ভাবেই হোক, সমস্ত নথিপত্র হাজির করতে হবে। প্রয়োজন হলে বার অ্যাসোসিয়েশন (যারা জনস্বার্থের মামলা করেছিল)-এর কাছ থেকে ফাইল সংগ্রহের চেষ্টা করতে হবে।
নন্দীগ্রাম কাণ্ডের তদন্তে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা জানতে কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে আলাদা একটি মামলা করা হয়েছিল। সেই মামলায় আগের দিন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার নতুন করে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানান। তাঁর বক্তব্য ছিল, সিবিআই যে-তদন্ত করেছে, তাতে রাজ্য সরকার সন্তুষ্ট নয়। অতএব কোর্টের ঠিক করে দেওয়া তদন্তকারী অফিসারকে দিয়ে নতুন করে তদন্ত করানো হোক।
পুলিশের গুলি চালানো-সহ নন্দীগ্রামের ঘটনাবলি নিয়ে সিবিআই চারটি মামলা করেছিল। তার মধ্যে দু’টি মামলার বিশেষ কোনও ভিত্তি নেই জানিয়ে তারা তদন্ত বন্ধ করে দেয়। একটি মামলায় তদন্ত শেষ করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুলিশের গুলিচালনা বৈধ। অন্য একটি মামলায় রাজ্য সরকার যে-হেতু অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত করার অনুমতি দিচ্ছে না, তাই সেটির তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না। সিবিআইয়ের আইনজীবী আসলাম আলি আগের দিন শুনানিতে জানিয়ে দেন, দ্বিতীয় বার একই বিষয়ে তদন্ত করা নজিরবিহীন। সিবিআই তা করতে পারে না।
সেই ব্যাপারেই এ দিন হাইকোর্টের মতামত জানানোর কথা ছিল। কিন্তু শুনানি শুরুর মুখেই জানা যায়, নন্দীগ্রাম কাণ্ডের যাবতীয় ফাইল উধাও হয়ে গিয়েছে। ফাইল লোপাট হয়ে যাওয়ায় মামলাটি আপাতত থমকে গেল। হাইকোর্টের মতো সুরক্ষিত হেফাজত থেকে কী ভাবে ফাইল হারিয়ে গেল, তা নিয়ে রীতিমতো বিভ্রান্ত উচ্চ আদালত।
আইনজীবীরা বলছেন, কলকাতা হাইকোর্ট থেকে ফাইল লোপাটের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগে বহু বার এমন ঘটনা ঘটেছে। সেই সব ফাইলের কোনও খোঁজ আর মেলেনি। এই মামলারও ফাইলপত্র আর পাওয়া যাবে কি না, আইনজীবীরা সন্দিহান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy