Advertisement
E-Paper

হাত কেটে নেব, দলের বিড়ম্বনা ফের দুধকুমার

দলে তাঁকে নিয়ে বিতর্ক ছিলই। এ বার প্রকাশ্য সভায় তৃণমূলের কর্মীদের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়ে দলের অস্বস্তি আরও বাড়ালেন বিজেপির বীরভূমের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। রামপুরহাটে বৃহস্পতিবার প্রকাশ্য দলীয় মঞ্চে দুধকুমারের ওই হুমকির পরেই বিতর্ক আরও জোরালো হয়েছে বিজেপির অন্দরে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪৪
বিজেপির সভায় দলের বীরভূম জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

বিজেপির সভায় দলের বীরভূম জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

দলে তাঁকে নিয়ে বিতর্ক ছিলই। এ বার প্রকাশ্য সভায় তৃণমূলের কর্মীদের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়ে দলের অস্বস্তি আরও বাড়ালেন বিজেপির বীরভূমের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল।

রামপুরহাটে বৃহস্পতিবার প্রকাশ্য দলীয় মঞ্চে দুধকুমারের ওই হুমকির পরেই বিতর্ক আরও জোরালো হয়েছে বিজেপির অন্দরে। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ অবশ্য সাফ জানিয়েছেন, বিজেপি দুধকুমারের ওই ধরনের মন্তব্য অনুমোদন করে না। এর আগে এক বার তৃণমূল বাড়ি পোড়ালে পাল্টা গোটা পাড়া জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলে বিতর্ক বাধিয়েছিলেন দুধকুমার। তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করে জেলায় নিজেদের পোক্ত জায়গা করে নেওয়ার পথে দুধকুমারের এই ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য দলের ক্ষতিবৃদ্ধিই করবে বলে বিজেপির একাংশ মনে করছে। বিশেষ করে যখন, পাড়ুইয়ের মতো কিছু জায়গায় ইতিমধ্যেই বিজেপির হাতে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগও উঠছে। রাজ্যের এক বিজেপি নেতার কথায়, “এই ধরনের মন্তব্য করলে তো লোকে বলবে, কেষ্ট (অনুব্রত) মণ্ডলের সঙ্গে তা হলে আপনাদের দলের নেতাদের ফারাক কী?” কিন্তু দলেরই অন্য একটি অংশের যুক্তি, বীরভূমে দলের সংগঠন বাড়াতে গেলে অনুব্রতকে তাঁরই অস্ত্রে ঘায়েল করতে হবে। আর তা না করতে পারলে জেলায় ঘরে ঢুকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হবে!

ঠিক কী বলেছেন দুধকুমার?

কতকটা অনুব্রতর ঢঙেই তিনি বলেন, “পাড়ার ছেলেরা একটু বিজেপির হয়ে মিটিং-মিছিলে হাঁটছে। তৃণমূলের গুন্ডারা তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে এখন থেকে দাপাচ্ছে, শাসাচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে। তৃণমূলের এই সন্ত্রাসবাদী গুণ্ডাদের বলব, হাতটা গুটিয়ে নাও, হাতটা নামিয়ে নাও! আমরা সন্ত্রাস চাই না। সন্ত্রাসের কোনও শিকার যদি বিজেপির কর্মীরা হন, পার্টি করার জন্য যদি আক্রমণ আসে, ওই হাত কিন্তু ঘর থেকে বের করে নিয়ে বিজেপির ছেলেরা কেটে নেবে বন্ধু!” পরক্ষণেই অবশ্য নিজেকে সামলে নেন তিনি। তাঁর সংযোজন, “আমরা হিংসা চাই না, সন্ত্রাস চাই না। কিন্তু আমার উপরে অত্যাচার হবে, আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে, গ্রামছাড়া করবে আর আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখব এ আমরা চাই না!”

রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুলবাবু এ দিন দলীয় কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন কালনায়। বীরভূম জেলা সভাপতির নয়া মন্তব্যের খবর পেয়ে সেখান থেকেই তিনি বলেন, “আমরা রাজ্যে আইনের শাসন এবং শান্তির পক্ষে। এই ধরনের মন্তব্য দল কোনও ভাবেই অনুমোদন করে না।” বিষয়টি নিয়ে তিনি বিস্তারিত খোঁজখবর নেবেন এবং দোষী মনে হলে দলীয় স্তরে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে রাহুলবাবু আশ্বাস দিয়েছেন।

এর সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছে, অনুব্রতের দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আর কবে ব্যবস্থা নেবেন? যেখানে অনুব্রতের অস্ত্রেই তাঁর মোকাবিলা করতে গিয়ে দুধকুমার দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি করছেন দেখে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব প্রকাশ্যে তাঁর মন্তব্যের নিন্দা করেছেন। অতীতে আনিসুর রহমান বা সিপিএমের স্বয়ং রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুকেও তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হয়েছে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, “সব ব্যবস্থা তো লোক জানাজানি করে হয় না! দলীয় স্তরে অনুব্রতকে প্রয়োজনীয় বার্তা দেওয়া হয়েছে।” বীরভূমের জেলা তৃণমূলে সকলের সঙ্গে মানিয়ে চলতে বলে অনুব্রতের ডানা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিঞ্চিৎ ছেঁটে দিয়েছেন বলেই তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে।

দুধকুমারের হুঙ্কারকে গুরুত্ব না দিয়ে অনুব্রত অবশ্য এ দিন বলেছেন, “পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়! আমাদের হাত, লোহার হাত! তা কারও কেটে নেওয়ার ক্ষমতা নেই!” তাঁর আরও দাবি, যে বিজেপি কখনও পা, কখনও মুন্ডু বা কখনও হাত কেটে নেওয়ার কথা বলছে, ২০১৬ সালে মানুষই তাদের যোগ্য জবাব দেবেন। দলীয় স্তরে আলোচনা করে দুধকুমারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা ভাবা হবে বলে জানিয়েছেন বোলপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। যদিও সেখানেই প্রশ্ন ওঠে, অনুব্রত ‘পুলিশকে বোম মারার’ হুমকি দেওয়ার পরেও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এই তৎপরতা কেন দেখায়নি প্রশাসন? দলের মহাসচিব পার্থবাবুর যদিও মন্তব্য, “বাঁশগাছে তো আর আম ফলে না! সিদ্ধার্থনাথ সিংহ থেকে রাহুল সিংহেরা যে ধরনের কথাবার্তা তৃণমূলের বিরুদ্ধে বলছেন, তারই উত্তরসূরি হয়েছেন দুধকুমার!”

বস্তুত, লোকসভা ভোটের পর থেকে শাসক দলের সঙ্গে সমানে টক্কর নিয়ে বীরভূমে তৃণমূলের মাথাব্যথার কারণ হয়েছেন দুধকুমার। জেলায় বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে তিনি যে ভাবে সংগঠনকে তৈরি করার চেষ্টা করছেন, তাতে তাঁকে এক কথায় ঝেড়ে ফেলাও বিজেপির পক্ষে মুশকিল। দুধকুমারও মহা উৎসাহে অনুব্রতের মতোই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন! শুধু হুঙ্কারেই এ দিন থেমে যাননি তিনি। বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে যখন সংখ্যালঘু ভাইয়েরা দলে দলে বিজেপির পতাকার তলে আসছেন, তখন গুন্ডা বাহিনী দিয়ে তাঁদের গ্রামছাড়া করা হচ্ছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। গ্রামের মানুষকে পিটিয়ে মারছে।” এর পরেই পাড়ুইয়ে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে নিহতদের কথা তোলেন তিনি। দুধকুমারের দাবি, “শেখ রহিম, শেখ তৌসিফদের মতো সংখ্যালঘু ভাইদের কারা খুন করেছে? তৃণমূলের হার্মাদ বাহিনী, সন্ত্রাসবাহিনী। ওদের অপরাধ, বিজেপি-র পতাকা তুলে নিয়েছিল!”

ঘটনাচক্রে, এ দিনই মাখড়া ও চৌমণ্ডলপুরের সংঘর্ষের ঘটনায় তৃণমূলের দায়ের করা এফআইআরে নাম থাকা পাড়ুইয়ের বিজেপি নেতা শেখ সামাদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার জেরে দুধকুমারের প্রশ্ন, “এফআইআরে তৃণমূল নেতা মুস্তাক হোসেন এবং শেখ মুস্তফার নাম থাকলেও পুলিশ কেন গ্রেফতার করছে না?” জেলা পুলিশের এক কর্তার জবাব, “তদন্ত চলছে। তার ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

দুধকুমার অবশ্য এ বার উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর যুক্তি, “কাউকে আক্রমণ করার কথা তো বলিনি! আমরা এটা বলেছি আত্মরক্ষার অধিকার থেকে। গণতান্ত্রিক দেশে সব মানুষের রাজনীতি করার অধিকার আছে। কিন্তু কেউ বিজেপি করছে বলে ওরা যদি সন্ত্রাস করে, তার পরিণাম ভয়ানক হবে!”

doodh kumar mondal birbhum hate speech tmc bjp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy