Advertisement
E-Paper

হিসেব লুকোচ্ছেন অমিত, অভিযোগ বিরোধীদের

ঋণ শোধ করতে তাঁর ঋণ নেওয়া। তাতেই ঋণের বোঝা বেড়ে প্রায় তিন লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে বলে দাবি করলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। মঙ্গলবার যদিও এ নিয়ে বিধানসভায় বিরোধীদের তীব্র আক্রমণের মুখে পড়লেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩২

ঋণ শোধ করতে তাঁর ঋণ নেওয়া। তাতেই ঋণের বোঝা বেড়ে প্রায় তিন লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে বলে দাবি করলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। মঙ্গলবার যদিও এ নিয়ে বিধানসভায় বিরোধীদের তীব্র আক্রমণের মুখে পড়লেন তিনি। বাজেটে অস্বচ্ছ তথ্য পেশ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেন বাম ও কংগ্রেস নেতারা। আবার রাজ্যের লগ্নির খরা নিয়ে বাম-বিজেপি একসুরে আক্রমণ করল ফিকি-র এই প্রাক্তন মহাসচিবকে।

বাম আমলে নেওয়া দু’লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণের বোঝা শোধ করতে রাজ্যকে বছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা গুনাগার দিতে হচ্ছে বলে প্রায়ই অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে অর্থমন্ত্রী। কিন্তু মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে নতুন সরকারকে কেন প্রায় এক লক্ষ টাকা ঋণ নিতে হল, সেই প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়দের বারবার খোঁচা দিয়েছেন বিরোধীরা। মঙ্গলবার বাজেট-আলোচনায় সেই খোঁচার প্রসঙ্গে অমিতবাবু বলেন, “এ পর্যন্ত ৮২ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৭৬ হাজার ৩৪৬ কোটি চলে গিয়েছে আগের জমানার ঋণের সুদ-আসল শোধ করতেই। আমাদের আমলে প্রকৃত ঋণের পরিমাণ ৬৬১৭ কোটি।” বামেদের উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, “আপনাদের পাপের বোঝা বইতেই ঋণের ফাঁদে জড়িয়েছি। তা না হলে আমাদের আমলে কত আর ঋণ করতে হয়েছে!”

অর্থমন্ত্রীর কটাক্ষের জবাবে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, “আসল প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে কিছু মনগড়া কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী, যার আগাগোড়া কিছু বোঝা গেল না।” বিধানসভা কক্ষের বাইরে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাম আমলের চেয়ে কমলো কেন? এবং উৎপাদন কমে গেলে উন্নয়ন কোথায় হল, তারও কোনও জবাব মেলেনি বলে দাবি সূর্যবাবুর। বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, “কিছু অসত্য এবং অস্বচ্ছ হিসেব পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।”

বাজেটে অসত্য তথ্য পেশ করে ‘মানুষকে ভাঁওতা’ দেওয়া হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়েছেন কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মাও। পণ্য প্রবেশ কর থেকে গঠিত বিশেষ তহবিল, বিশেষ পিছিয়ে পড়া এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প (বিআরজিএফ) থেকে রাজস্ব সংগ্রহ বাজেটে প্রায় সব ক্ষেত্রেই নানা অসঙ্গতি রয়েছে বলে দাবি করেন রাজ্যের প্রাক্তন ওই আমলা। অর্থমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “কার পাপ কে বইছে তা নিয়ে বিতর্ক করে লাভ নেই। ৩৪ বছরের বাম সরকার আর সাড়ে তিন বছরের তৃণমূল সরকারের যৌথ উদ্যোগে রাজ্যের ঘাড়ে এখন তিন লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা, এটাই বাস্তব।”

বাজেট-বিতর্কে অংশ নিয়ে বিজেপি বিধায়ক বলেন, “গত বাজেটে রাজস্ব ঘাটতি নির্মূল করার কথা ঘোষণা হয়েছিল। অথচ বছর শেষে ঘাটতি ছাড়িয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। শিল্প, বাণিজ্য-সহ নানবিধ আর্থিক কর্মকাণ্ড বাড়লে আয় বাড়ে। কিন্তু এ রাজ্যে গত বছর ১৭ হাজার কোটির বিনিয়োগ এসেছিল। এ বার তা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১০ হাজার কোটিতে। ফলে ঘাটতি হতে বাধ্য।” বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুর কথায়, “কোনও দেশ উন্নত হয় বৃহৎ শিল্পায়নের মাধ্যমে। শুধু কৃষির উপর ভরসা করে কেউ উন্নতি করতে পারে না। এখানে সরকারের নীতির জন্যই শিল্প আসছে না। ফলে আয় কমছে, উন্নয়ন চোখে পড়ছে না। কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।”

অমিতবাবুর দাবি ছিল, গত তিন বছরে ৮২ হাজার কোটি টাকার শিল্প হয় বাস্তবায়িত হয়েছে, অথবা হওয়ার পথে। অর্থমন্ত্রী এমন দাবি করলেও তাঁরই দফতরের পেশ করা আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্ট যে ভাবে এক বছরের ব্যবধানে রাজ্যে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ কম হওয়ার তথ্য দিয়েছে, তা নিয়ে রা কাড়েননি অমিতবাবু। যে বছর মুখ্যমন্ত্রী লগ্নি টানতে সিঙ্গাপুর গিয়েছেন, সল্টলেক স্টেডিয়ামে ‘বেঙ্গল গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ করেছেন, সেই আর্থিক বছরেই কেন লগ্নি কমে গেল অর্থমন্ত্রী তা নিয়ে ব্যাখ্যা না দেওয়ায় বিরোধী বিধায়কদের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়।

তার মধ্যেই অমিতবাবু বলে চলেন, “ফাঁকা আওয়াজ দিচ্ছি না। ৪৩০টি শিল্প প্রকল্প গত তিন বছরে এ রাজ্যে কাজ শুরু করেছে অথবা শুরু করতে চলেছে।” তাঁর এই দাবি শুনে বিরোধী দলনেতা তাঁঁকে শিল্প প্রকল্পের তালিকা বিধানসভায় পেশ করতে বলেন। অর্থমন্ত্রী একটি ফাইল দেখিয়ে বলেন, “এই তো রয়েছে।” যদিও তিনি বিধানসভায় তা পেশ করেননি।

পরে সাংবাদিকদের বিরোধী দলনেতা বলেন, “তালিকা চেয়েছিলাম। অর্থমন্ত্রী তা-ও দিতে পারলেন না। হয়তো দেখা যাবে ওই তালিকার ৮০% প্রকল্প বাম আমলেই শুরু হয়েছিল।”

amit mitra state budget west bengal finance minister
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy