Advertisement
E-Paper

১৪ দিনে ৮৬ বার! শীর্ষ নেতার সঙ্গে ফোনে কথা ফেরার সুদীপ্তর

সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনের পলায়নপর্বে হাত ছিল তৃণমূলের এক সর্বভারতীয় নেতার এমনটাই দাবি সিবিআই এবং ইডি-র তদন্তকারীদের। তাঁদের বক্তব্য নিয়েই আনন্দবাজারের বিশেষ প্রতিবেদন।সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের ফেরার থাকাকালীন তাঁর ফোনের কল রেকর্ড হাতে পেয়ে চোখ কপালে উঠেছিল সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের। তাঁদের দাবি: ফেরার-পর্বের ১৪ দিনে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে মোট ৮৬ বার কথা হয় তৃণমূলের এক সর্বভারতীয় শীর্ষ নেতার। সিবিআইয়ের কাছে প্রশ্ন, রাজ্য পুলিশ যখন হন্যে হয়ে খুঁজছিল সুদীপ্ত সেনকে, তখন তিনি কী কারণে ওই নেতার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলছিলেন?

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩১
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের ফেরার থাকাকালীন তাঁর ফোনের কল রেকর্ড হাতে পেয়ে চোখ কপালে উঠেছিল সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের। তাঁদের দাবি: ফেরার-পর্বের ১৪ দিনে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে মোট ৮৬ বার কথা হয় তৃণমূলের এক সর্বভারতীয় শীর্ষ নেতার। সিবিআইয়ের কাছে প্রশ্ন, রাজ্য পুলিশ যখন হন্যে হয়ে খুঁজছিল সুদীপ্ত সেনকে, তখন তিনি কী কারণে ওই নেতার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলছিলেন?

সিবিআই সূত্রের দাবি, সারদার ভরাডুবির ঠিক আগে, ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল ওই শীর্ষ নেতার সঙ্গে নিজাম প্যালেসে বৈঠকে বসেছিলেন সুদীপ্ত সেন। গাড়িচালক অরবিন্দ চৌহানকে নিয়ে ওই দিন সকাল সাড়ে ৯টার সময়ে মিডল্যান্ড পার্কের অফিস থেকে রওনা হন সারদা-কর্তা। নিজাম প্যালেসে তাঁর সঙ্গে বৈঠকে ওই শীর্ষ নেতা ছাড়াও ছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা আসিফ খান এবং এক মহিলা বিধায়ক। সিবিআই সূত্রের দাবি, পরে জেরায় এই তথ্য মেনে নিয়েছেন আসিফ। তিনি গোয়েন্দাদের এ-ও বলেছেন যে, সে দিন বাড়ি থেকে নিজাম প্যালেসে আসার পথে তিনি (আসিফ) বাজার করে এনেছিলেন। ওই মহিলা বিধায়ক তা রান্নাও করেন।

কী ঠিক হয়েছিল ওই বৈঠকে?

সিবিআইয়ের দাবি, প্রাথমিক আলোচনা হয় সারদার ৫০০ কোটি টাকা কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে। এর পরে সারদার মিডিয়াগুলি কী করে চালানো হবে, সে বিষয়েও কথা হয় বলে দাবি সিবিআই তদন্তকারীদের। বৈঠকে ঠিক হয়, আপাতত দেশের বাইরে গা-ঢাকা দেবেন সুদীপ্ত। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। সুদীপ্ত যত দিন বাইরে থাকবেন, তাঁর পরিবারকে পুলিশ কোনও ভাবেই বিরক্ত করবে না বলেও ওই বৈঠকে স্থির হয়।

এই সব আলোচনার পরেই কথা ওঠে দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে। তদন্তকারীদের দাবি, সুদীপ্ত তখন বলেন, দেবযানী কলকাতায় থাকলে তাঁদের বিপদ হতে পারে। বৈঠকে তখন ঠিক হয়, দেবযানীকে নিয়েই পালাবেন সুদীপ্ত। তাঁরা কোথায় পালাবেন, তার রুটম্যাপও ওই বৈঠকে বসেই ঠিক হয়ে যায়। পালানোয় সাহায্য করতে কাজে লাগানো হয় কাশ্মীরের বাসিন্দা তথা সারদা-কর্মী রিয়াজ খানকে। সিবিআইয়ের দাবি, রিয়াজকে সারদায় ঢুকিয়েছিলেন তৃণমূলের ওই শীর্ষ নেতা-ই।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা দাবি করছেন, পরিকল্পনা মতো ২০১৩ সালের ওই দিন এবং পরদিন (৫ এবং ৬ এপ্রিল) দু’দফায় দু’টি গাড়িতে করে মোট ৫০০ কোটি টাকা নিজাম প্যালেসে পৌঁছে দেন সুদীপ্ত। ওই টাকা আসিফ খান মারফত উত্তরপ্রদেশ ও ওড়িশায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ৯ তারিখে নিরুদ্দেশ হন সুদীপ্ত।

এর মধ্যেই সারদার একটি সংবাদপত্র ‘প্রভাত বার্তা’-র কর্মীরা বিধাননগরে ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে শুরু হয় সুদীপ্তর খোঁজ। রাজ্য জুড়ে তখন বিক্ষোভ শুরু হয়ে গিয়েছে। তার আঁচ লেগেছে তৃণমূলের অফিস, এমনকী সদর দফতরেও। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান সারদার আমানতকারী ও এজেন্টরা।

এর পরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসরে নামেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁদের কাছ থেকে নির্দেশ আসার পরেই বিধাননগর পুলিশ সুদীপ্তর ফোন ‘ট্যাপ’ করে। পরে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসন্ধান করে সিবিআই তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ৯ থেকে ২৩ এপ্রিল মোট ৮৬ বার সুদীপ্তর সঙ্গে ওই শীর্ষ তৃণমূল নেতার কথা হয়। প্রশাসনের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে পুলিশ তখন হন্যে হয়ে খুঁজছে সুদীপ্তকে। সুদীপ্ত তখন অধিকাংশ সময় ফোন বন্ধ করে রাখছিলেন। ফলে টাওয়ার লোকেশন পেতে সমস্যা হচ্ছিল পুলিশের। তবে মাঝেমধ্যে তিনি ফোন খুলে তৃণমূলের ওই শীর্ষ নেতাকে ফোন করছিলেন। তখন তাঁর হদিস পেতে একটাই উপায় ছিল, ওই শীর্ষ নেতার ফোন ‘ট্যাপ’ করা। কিন্তু রাজনৈতিক কারণেই সেটা সম্ভব হয়নি বলেই ধারণা সিবিআইয়ের।

সিবিআইয়ের দাবি, পুলিশ তখন সারদার এক মহিলা হিসাবরক্ষককে দিয়ে সুদীপ্তকে ফোন করায়। একটা সময় ফোন খুলে ওই ‘মিসড কল অ্যালার্ট’ দেখে তাঁকে ফোন করেন সুদীপ্ত। তখনই তাঁর অবস্থান সম্পর্কে আন্দাজ হয় পুলিশের। সিবিআই সূত্রের আরও দাবি, একই সঙ্গে ‘ট্যাপ’ করা হয় সুদীপ্তর স্ত্রী পিয়ালি, ছেলে শুভজিৎ, পুত্রবধূ প্রিয়াঙ্কা, দেবযানীর মা ও তাঁর আইনজীবী বন্ধুর ফোনও। শেষমেশ দেবযানীর মা ও আইনজীবী বন্ধুর ফোন থেকেই জানা যায় সুদীপ্তর যাত্রাপথ।

পালিয়ে কোথায় যাচ্ছিলেন সুদীপ্ত?

কী ভাবে পালিয়েছিলেন সারদা কর্তা? কী ছিল তাঁর রুটম্যাপ? এ ব্যাপারে দেবযানী মুখোপাধ্যায় যে বয়ান দিয়েছেন, তা এসেছে আনন্দবাজারের হাতে। আগামী কাল প্রকাশিত হবে সেই বয়ান ‘পলায়ন পর্ব-২’।

subhasish ghatak saradha scam sudipto sen debjani anandabazar exclusive
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy