Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সংসারের সঙ্গেই সামলান রেলগেট

মুখে হুইসল, হাতে পতাকা। লাইনের ধারে দাঁড়িয়ে তিনি। ট্রেন ছুটছে। 

সিগন্যাল বোর্ডে চোখ অর্পিতার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

সিগন্যাল বোর্ডে চোখ অর্পিতার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০১:২৮
Share: Save:

মুখে হুইসল, হাতে পতাকা। লাইনের ধারে দাঁড়িয়ে তিনি। ট্রেন ছুটছে।

ট্রেন বেরোতে না বেরোতে তাঁকেও ছুটতে হয়।

দাঁড়িয়ে থাকার বিলাসিতা তাঁর চলে না। এক ছুটে গিয়ে গেট তুলতে হয় তাঁকে। তার পরেও অবশ্য অবসর মেলে না। বৈদ্যুতিন বোর্ডে চোখ রেখে দেখতে হয় কোন ট্রেন ঢুকছে। তার সিগন্যালও যে তাঁকেই দিতে হবে। সামান্য ভুলচুক হলেই সর্বনাশ!

সকাল থেকে দুপুর তাই সজাগ অর্পিতার অক্লান্ত দৃষ্টি। অর্পিতা ঘোষ পলতার ১৮ নম্বর রেলগেটের ‘গেট উওম্যান’। রেলের খাতায় তাঁর অবশ্য পরিচয় ‘লেডি গেটম্যান’। বাবার ছেড়ে যাওয়া চাকরি করছেন তিনি। যে হেতু তাঁর বাবা গেটম্যান ছিলেন, তাই তিনি অন্য কোনও পদে সুযোগ পাননি। তবে তাতে পিছিয়ে যাননি অর্পিতা। চ্যালেঞ্জ নিয়ে পার করে দিয়েছেন সাতটি নারী দিবস। রোজ ভোরে দেড় বছরের ঘুমন্ত ছেলেকে বাড়িতে রেখে ডিউটিতে বেরোন। ফিরে সংসার সামলান।

অর্পিতার বাবা, নৈহাটির গৌতম ঘোষ স্বেচ্ছাবসর নিয়েছিলেন। অর্পিতা তখন সবে মাধ্যমিক পাশ করেছেন। অর্পিতা জানান, তখন রেল বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছিল, অসুস্থতা বা অন্য কারণে যাঁরা স্বেচ্ছাবসর নিচ্ছেন, তাঁরা ২০ বছর চাকরি করে থাকলে সেই চাকরি তাঁদের ছেলেমেয়েরা পেতে পারেন।

আবেদন করেন অর্পিতা। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে চাকরি মেলেনি। আড়াই বছর বাদে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পরেই তাঁকে ডাকে রেল। জানানো হয়, লেডি গেটম্যানের চাকরি আছে। দ্বিধা থাকলেও রাজি হন অর্পিতা। প্রথমে প্রশিক্ষণ, তার পরে কাজে পাঠানো হয় তাঁকে। অর্পিতা বলেন, ‘‘সাত বছর আগে যখন কাজে যোগ দিই, তখন হাতল ঘুরিয়ে গেট তুলতে-নামাতে হত। তার জন্য শারীরিক ভাবে যথেষ্ট সক্ষম থাকতে হয়। বছরখানেক হল মোটরচালিত গেট চালু হয়েছে।’’

শিয়ালদহ-নৈহাটি মেন লাইন অত্যন্ত ব্যস্ত। অর্পিতা জানান, দু’টি আপ এবং দু’টি ডাউন লাইনে অনবরত ট্রেন চলাচল করে। ফলে সব সময়ে

সজাগ থাকতে হয়।

রেলের গেট সামলানোর দায়িত্ব বরাবরই ছিল পুরুষদের। রেল কর্তৃপক্ষ বলছেন, তার কারণও রয়েছে। রেলগেট খোলা থাকার কারণে প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটে, আবার রেলগেট বন্ধ থাকা নিয়েও গোলমাল হয়। সব ক্ষেত্রেই

গেটরুমে হামলা হয়।

শুধু গেট সামলানোই নয়, অর্পিতার একটি বাড়তি দায়িত্বও রয়েছে। ট্রেন আসার আগে সিগন্যালও তাঁকেই দিতে হয়। অন্যান্য জায়গায় এই দায়িত্ব থাকে স্টেশন মাস্টার বা কেবিনম্যানের।

তাঁর কাজ কতটা কঠিন? অর্পিতা বলেন, ‘‘উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগাতে হয় সব সময়ে। হয়তো ট্রেন আসছে, এ দিকে গেটের সামনে মুমূর্ষু রোগী নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স হাজির। তখন অন্য গাড়ি আটকে শুধু অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য গেট খুলে দিতে হয়।’’

চাকরির পাশাপাশি কলেজের সান্ধ্য বিভাগ থেকে স্নাতক হয়েছেন অর্পিতা। বিয়ে করেছেন নৈহাটিরই যুবক রাজু সরকারকে। রাজু বেসরকারি সংস্থার কর্মী। বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি, বৃদ্ধ বাবা-মা, ছোট ছেলে। সব কিছু সামলেই ছুটছেন অর্পিতা। কর্তৃপক্ষও তাঁকে যথেষ্ট সাহায্য করেন। অর্পিতাকে শুধু সকালের শিফটেই ডিউটি দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

International Women's Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE