Advertisement
E-Paper

ওয়াগার ও-পারে আত্মঘাতী হানায় হত ৫৫

তখন সবে শেষ হয়েছে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর্ব। ওয়াগা সীমান্তে পাকিস্তানের প্যারেড গ্রাউন্ড ছেড়ে যেতে শুরু করেছেন পর্যটকেরা। হঠাৎ প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল গোটা এলাকা। ভারতের অমৃতসর ও পাকিস্তানের লাহৌরের মাঝে এই সীমান্তকেই এ বার আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য বেছে নিল জঙ্গিরা। ওয়াগা সীমান্তে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পতাকা উত্তোলন দেখতে রোজই হাজির হন বহু মানুষ। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সন্ধে সওয়া ছ’টা নাগাদ হঠাৎ সেখানেই বিস্ফোরণ ঘটায় এক আত্মঘাতী জঙ্গি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৬
মৃতদেহের সারি। বিস্ফোরণের পরে লাহৌরের একটি হাসপাতালে। ছবি: এএফপি

মৃতদেহের সারি। বিস্ফোরণের পরে লাহৌরের একটি হাসপাতালে। ছবি: এএফপি

তখন সবে শেষ হয়েছে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর্ব। ওয়াগা সীমান্তে পাকিস্তানের প্যারেড গ্রাউন্ড ছেড়ে যেতে শুরু করেছেন পর্যটকেরা। হঠাৎ প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল গোটা এলাকা। ভারতের অমৃতসর ও পাকিস্তানের লাহৌরের মাঝে এই সীমান্তকেই এ বার আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য বেছে নিল জঙ্গিরা।

ওয়াগা সীমান্তে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পতাকা উত্তোলন দেখতে রোজই হাজির হন বহু মানুষ। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সন্ধে সওয়া ছ’টা নাগাদ হঠাৎ সেখানেই বিস্ফোরণ ঘটায় এক আত্মঘাতী জঙ্গি। ওই ঘটনায় সীমান্তরক্ষী রেঞ্জার্স বাহিনীর তিন জওয়ান, ১১ জন মহিলা ও বেশ কয়েকটি শিশু-সহ ৫৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পঞ্জাব পুলিশ। আহতের সংখ্যা আপাতত ২০০। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা পাক সরকারের। জঙ্গি গোষ্ঠী জুনদাল্লাহ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।

পঞ্জাব পুলিশের আইজি মুস্তাক সুখেরা জানিয়েছেন, সওয়া ছ’টা নাগাদ ওয়াগার প্যারেড গ্রাউন্ডের একটি গেটে আসে ওই জঙ্গি। গেটের পাশেই রয়েছে রেঞ্জার্স বাহিনীর চেকপোস্ট ও একটি রেস্তোরা।ঁ গেটে তাকে আটকেও ছিল রেঞ্জার্স বাহিনী। প্যারেড গ্রাউন্ড ছেড়ে যেতে শুরু করেছেন পর্যটকেরা। ভিড়ের সুযোগ নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায় ওই জঙ্গি।

আহতদের প্রথমে নিকটবর্তী ঘুরকি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কয়েক জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় লাহৌরের সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পঞ্জাবের সব হাসপাতালে জরুরি পরিষেবার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। বিস্ফোরণ নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।

প্যারেড দেখে ফিরছিলেন ইমদাদ হুসেন। তাঁর কথায়, “হঠাৎ ওয়াগা সীমান্ত বাজারের কাছে প্রচণ্ড শব্দ হল। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। জ্ঞান ফেরার পরে চোখে অন্ধকার দেখছিলাম। চিৎকার শুনে কয়েক জন আমাকে ঘুরকি হাসপাতালে নিয়ে আসেন।” স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে পতাকা উত্তোলন দেখতে গিয়েছিলেন সামিনা বিবি। ঘুরকি হাসপাতালে শুয়ে কেবলই স্বামী-সন্তানদের নাম করে কেঁদে চলেছেন তিনি।

পুলিশ সূত্রে খবর, ওয়াগা-সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ও শিয়া সম্প্রদায়ের উপরে জঙ্গিরা হামলা চালাতে পারে বলে সম্প্রতি জানিয়েছিলেন গোয়েন্দারা। সে কথা মেনে নিয়েছেন পঞ্জাব পুলিশের আইজি মুস্তাক সুখেরাও। তাঁর দাবি, নিরাপত্তার সব সম্ভাব্য ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। পর্যটকদের ভিড় থাকাতেই ওই আত্মঘাতী জঙ্গি বিস্ফোরণ ঘটানোর সুযোগ পেয়েছে। এই ঘটনায় প্রায় পাঁচ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়েছে।

ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমকে ফোন করে বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে জুনদাল্লাহ জঙ্গি গোষ্ঠীর মুখপাত্র আহমেদ মারওয়াত। সম্প্রতি আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী ওয়াজিরিস্তান ও দেশের অন্য কয়েকটি প্রান্তে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছিল পাক সেনাবাহিনী। সেই অভিযানের বিরুদ্ধেই এই হামলা বলে দাবি করেছে জুনদাল্লাহ।

এই জঙ্গি গোষ্ঠী পাকিস্তান তালিবানেরই একটি অংশ। তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধান হাকিমুল্লা মাসুদ তার দেহরক্ষী ও গাড়িচালক লতিফ মাসুদকে সংগঠনে দ্বিতীয় স্থান দেওয়ার চেষ্টা করে। ফলে ভাঙন ধরে পাকিস্তান তালিবানে। বিচ্ছিন্ন হয়ে জুনদাল্লাহ গোষ্ঠী গড়ে তোলে হাকিমুল্লা। ২০১৩ সালের ১ নভেম্বর মার্কিন ড্রোন বিমানের হামলায় নিহত হয় ওই জঙ্গি নেতা।

২০১৩ সালে পেশোয়ারের গির্জায় বিস্ফোরণ, গিলগিট-বালটিস্তানে বিদেশি পর্যটক হত্যা-সহ বেশ কয়েকটি জঙ্গি হানায় জড়িত ছিল জুনদাল্লাহ। গত মাসে কোয়েটায় জমিয়ত-উলেমা-ই-ইসলাম দলের নেতা মৌলানা ফজলুর রহমানের উপরে হামলা চালায় তারা। ফজলুর রহমান রক্ষা পেলেও তিন জন নিহত হন।

বিস্ফোরণের পরে ওয়াগা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফকে সতর্ক করা হয়। সীমান্তের এ পারে আপাতত হামলার কোনও আশঙ্কা নেই বলে জানান বিএসএফের ডিজি ডি কে পাঠক। তবে ঘটনাটি নিয়ে উদ্বিগ্ন নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মতে, জঙ্গিদের হয়তো সীমান্ত পেরিয়ে ভারতেই হামলা চালানোর মতলব ছিল। রেঞ্জার্স বাহিনী আত্মঘাতী জঙ্গিকে পাক এলাকায় আটকে দেওয়ায় সে সেখানেই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, অন্য সম্ভাবনাও রয়েছে। নওয়াজ শরিফ আগেই পাক সেনা ও মোল্লাতন্ত্রের সুরে সুর মিলিয়েছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জে কাশ্মীর নিয়ে বাগ্যুদ্ধ ও সীমান্তে গুলির লড়াইয়ের পরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এমনিতেই শীতল। যেটুকু বেঁচে রয়েছে তাও শেষ করতে চাইছে পাক জঙ্গিরা। এখনও ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বেশির ভাগ ওয়াগা সীমান্ত দিয়েই হয়। সেখানে হামলা চালালে তা-ও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া জঙ্গিরা সীমান্তে রেঞ্জার্সের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠানকেও নিশানা করে থাকতে পারে।

পাকিস্তানের অনুরোধে আপাতত তিন দিন ওয়াগায় বন্ধ থাকবে সীমান্তরক্ষীদের কুচকাওয়াজ ও পতাকা উত্তোলনের পর্ব। অনেকের মতে, ভারত-পাক সম্পর্ককে এ ভাবেই স্তব্ধ করতে চায় জঙ্গিরা। তারা সফল হবে কি না, তা বলবে ভবিষ্যৎই।

suicide attack wagah border pakistan 55 killed injury death attack international news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy