অনিসা শাহিদ। ফাইল চিত্র।
বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে শিক্ষিকা হোন, সদ্য তালিবান-মুক্ত আফগানিস্তানে তখন সেটির থেকে নিরাপদ পেশা সম্ভবত ছিল না। কিন্তু সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে আসা মেয়ে নির্ভীক ভাবে জানিয়েছিলেন, সাংবাদিক হতে না পারলে বাড়িতে বসেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেবেন। তিনি অনিসা শাহিদ, বর্তমান আফগানিস্তানে সাংবাদিকতার অন্যতম উজ্জ্বল মুখ হিসেবে পরিচিত।
২০০১ সাল থেকে শুরু হওয়া লড়াইয়ে তালিবানদের হাতে নির্বিচারে খুন হয়েছেন একাধিক সাংবাদিক। সদ্য নিহত ভারতীয় সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকির স্মৃতি এখনও দগদগে। কিন্তু অনিসা পিছিয়ে আসেননি। সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের না-বলা ইতিহাস বিশ্বকে জানানো তাঁর কর্তব্য।
অনিসার বড় হয়ে ওঠা তালিবান জমানায়। “দিনের পর দিন অপেক্ষা করে গিয়েছি, কবে আবার স্কুলে যেতে পারব,” হাসিমুখে জানিয়েছেন তিনি। ২০০১ সালের পর, তালিবান মুক্ত আফগানিস্তানে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা। ২০০৯ সালে দেশের সব চেয়ে বড় সংবাদমাধ্যমে যোগ দেওয়া। বাবা তত দিনে মেনে নিয়েছেন মেয়ের সিদ্ধান্ত। অনিসার জবানিতে, “চাকরি শুরু করার বছর পাঁচেক পর থেকেই বাবা-মা শুধু আমার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন।”
বাক্স্বাধীনতা না থাকার দেশে সাংবাদিকতা যে নিরাপদ পেশা নয়, তা প্রতিটি পদক্ষেপে টের পান তিনি। আর তাতে জেদ বেড়ে যায় আরও। প্রতিদিন আলাদা আলাদা রাস্তা দিয়ে সংবাদমাধ্যমের দফতরে যান। সতর্ক থাকতে হয় ফোন ধরার সময়েও। একের পর এক সহকর্মীর মৃত্যু ও নিজে মহিলা হওয়ার কারণে বৈষম্যের শিকার হওয়ার মানসিক চাপও।
“অসহায় লাগে, যখন দেখি শিশুরা আহত হয়ে পড়ে রয়েছে। নির্যাতিতার চোখে জল। মনে হয় কিছুই করে উঠতে পারছি না,” অকপটে জানালেন অনিসা। গত এপ্রিলে যাঁকে আফগানিস্তানে গণমাধ্যমের শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক ও বাক্স্বাধীনতার অন্যতম মুখ হিসেবে বেছে নিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন।
আফগানিস্তানের বর্তমান অবস্থা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কিত তিনি। তালিবান ক্ষমতায় এলে শরিয়তি শাসনব্যবস্থা চেপে বসার ঘোর সম্ভাবনা। কিন্তু হার না মানা যে রক্তে রয়েছে তাঁর, তাই কাজ চালিয়ে যেতে চান শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও। “আমি চাই, দেশের সমস্ত কোণ থেকে ভাল খবর খুঁজে আনতে। আফগানিস্তানের মানুষ শান্তি চায়, তাঁদের মতো আমিও একটি শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তানে বাঁচতে চাই।” নিজের বলা কথার মতোই নিজের সিদ্ধান্তে অটল অনিসা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy