Advertisement
E-Paper

‘কান্নার অবকাশ নেই, দলের কেউ তো আমার জন্য অপেক্ষা করবে না!’

ছোট, বড়, বাচ্চা, বুড়ো, নারী, পুরুষ। সব ধরনের। বালির ঢেউ ভেঙে এগিয়ে চলেছে তারা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৮ ০৩:৩৮
ছিন্নমূল: সাহারায়। ছবি: এপি।

ছিন্নমূল: সাহারায়। ছবি: এপি।

দূর থেকে দেখ মনে হবে আকাশের গায়ে ছোট ছোট ফুটকি। আস্তে আস্তে দাগগুলো বড় হবে। মরুভূমির চোখ ঝলসানো প্রান্তরে ফুটে উঠবে অবয়বগুলো। মানুষ। ছোট, বড়, বাচ্চা, বুড়ো, নারী, পুরুষ। সব ধরনের। বালির ঢেউ ভেঙে এগিয়ে চলেছে তারা।

সাহারা মরুভূমি। প্রকৃতি এখানে নির্মম, ক্ষমাহীন। দিনের বেলা তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। রাতের বেলা হিমাঙ্কের নীচে। সেই সাহারার বুকেই ১৪ মাস আগে হাজার হাজার শরণার্থীকে ছেড়ে দিয়ে গিয়েছিল আলজিরিয়ার সেনা। খাবার বা জল, কিছুই দেওয়া হয়নি তাঁদের। মরুভূমিতে হেঁটে চলেছেন তাঁরা। গন্তব্য, নাইজারের ছোট্ট শহর আসামাকা। সেখানেই ঘাঁটি গাড়ছেন এই শরণার্থীরা। রাষ্ট্রপুঞ্জের ত্রাণকর্মীরা মাঝেমধ্যে জল আর খাবার নিয়ে আসেন। কিছু দিন পরে ফের শুরু হয় যাত্রা। যদি কোনও দেশ আশ্রয় দেয়!

কারা এই শরণার্থী?

মালি, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়ার মতো পশ্চিম আফ্রিকার হতদরিদ্র দেশগুলি থেকে আফ্রিকার অন্যান্য দেশে শরণার্থীদের অনুপ্রবেশ চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। রুটি-রুজির সন্ধানে, বা অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে দেশ ছাড়েন বহু মানুষ। গন্তব্য, উত্তর আফ্রিকার ধনী রাষ্ট্র— আলজিরিয়া, টিউনিশিয়া বা লিবিয়া। এদের মধ্যে পশ্চিমের দেশগুলোর সব থেকে কাছে থাকায় অনুপ্রবেশের সব থেকে বেশি চাপটা গিয়ে পড়ে আলজিরিয়ার উপরেই।

কয়েক বছর ধরে এমনই চলছিল। ছবিটা বদলাতে শুরু করে ২০১৭ থেকে। তত দিনে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে ঢুকতে শুরু করেছেন হাজার হাজার শরণার্থী। সেই ঢল ঠেকাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চাপ বাড়াতে শুরু করে উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর উপর। অনেক দিন ধরেই শরণার্থীদের দেশে ঢোকা বন্ধ করতে চেষ্টা চালাচ্ছিল আলজিরিয়া। এ বার ইউরোপের প্রচ্ছন্ন মদতে, মানবাধিকারের তোয়াক্কা না করেই, শরণার্থী খেদাতে শুরু করে তারা। এ বিষয়ে ইইউ-এর এক প্রতিনিধিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি রাষ্ট্রের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’’

কত জন শরণার্থীকে তাড়িয়ে দিয়েছে আলজিরিয়া? আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল অর্গ্যানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)’-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক বছরে ১১ হাজার ২৭৬ জন শরণার্থী মরুভূমি পেরিয়ে নাইজারে ঢুকেছেন। কিন্তু এই পরিসংখ্যানের উল্টো পিঠে রয়েছে মারাত্মক আর একটি তথ্য। আইওএম-এর হিসেব অনুয়ায়ী, দুই তৃতীয়াংশ শরণার্থী মরুভূমি পার হতেই পারেন না। অর্থাৎ, গত ১৪ মাসে কুড়ি হাজারেরও বেশি মানুষ সাহারা মরুভূমিতে প্রাণ খুইয়েছেন।

শুধু কি কুড়ি হাজার মানুষ? কত শত প্রাণ ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে এই পরিবেশে। আইওএমের কর্মীরা জানাচ্ছেন, শরণার্থীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও শিশু ও নারীর সংখ্যাও কম নয়। যাত্রার শুরুতে অনেক মহিলা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। প্রকৃতির সঙ্গে অসম লড়াইয়ে মা বেঁচে গেলেও পুষ্টির অভাবে তিনি বাঁচাতে পারেননি গর্ভস্থ শিশুটিকে। অধিকাংশ মহিলাই তাই জন্ম দিচ্ছেন মৃত শিশুর।

যেমন জ্যানেট কামারা। আসামাকায় রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিদের বলছিলেন, ‘‘প্রসবযন্ত্রণা যখন উঠল, সূর্য তখন মাঝ আকাশে। গরমে বালি গলে গলে যাচ্ছে। সেখানেই মৃত ছেলের জন্ম দিলাম। দু’দণ্ড বসে কান্নার অবকাশ নেই। দলের কেউ তো আমার জন্য অপেক্ষা করবে না!’’ একরত্তি দেহটি বালি চাপা দিয়ে দেন দ্রুত। পায়ের ফাঁক দিয়ে তখনও গড়িয়ে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত। ফের হাঁটতে শুরু করেন জ্যানেট। আশ্রয়ের খোঁজে।

Algeria Sahara Migrant আলজিরিয়া সাহারা মরুভূমি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy