বাংলাদেশের তরুণ নেতা শরিফ ওসমান হাদির হত্যার বিচার হবে সে দেশের ফাস্ট ট্র্যাক ট্রাইবুনালে। সোমবার এমনটাই জানিয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। হাদি হত্যার তদন্তে অসন্তুষ্ট নিহত নেতার দল ইনকিলাব মঞ্চ। সোমবার দুপুরে তারা জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারকে তারা সমর্থন করবে, নাকি এই সরকার ফেলে দিতে আন্দোলন শুরু করবে— তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। ঘটনাচক্রে, এই হুঙ্কারের কিছু ক্ষণ পরেই ইউনূস সরকার ঘোষণা করে, বাংলাদেশের ফাস্ট ট্র্যাক ট্রাইবুনালে (দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে) হাদি হত্যার বিচার হবে।
হাদির হত্যাকারীরা বাংলাদেশেই রয়েছেন, নাকি বিদেশে পালিয়েছেন— সে বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কোনও তথ্য নেই সে দেশের তদন্তকারীদের কাছে। অথচ, ইউনূস সরকারই সম্প্রতি ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় বর্মাকে ডেকে পাঠিয়ে এ বিষয়ে মন্তব্য করেছিল। হাদির হত্যাকারীরা ভারতে প্রবেশ করলে তাঁদের যেন বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে দেওয়া হয়, সে কথাও বলা হয়েছিল। অথচ রবিবার বাংলাদেশের পুলিশ জানিয়েছে, হাদি হত্যায় অন্যতম দুই অভিযুক্ত ফয়সাম মাসুদ করিম এবং আলমগীর শেখ কোথাও রয়েছেন, তা জানা নেই তদন্তকারীদের।
এ অবস্থায় সোমবার দুপুরে শাহবাগ চত্বর থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে তদন্তকারী সংস্থা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকায় প্রশ্ন তোলে ইনকিলাব ম়ঞ্চ। হাদি হত্যায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারির দাবিতে আগেই ২৪ ঘণ্টা সময়সীমা দিয়েছিল তারা। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কিছু অগ্রগতি না হওয়ায় উষ্মাপ্রকাশ করে নিহত নেতার সংগঠন। ইনকিলাব মঞ্চের অন্যতম নেতা আবদুল্লাহ আল জাবের তদন্তকারী সংস্থাগুলির সমালোচনা করে বলেন, “মানুষের করের টাকায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি চলে। যদি তারা হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে না পারে, তবে সংস্থাগুলিকে রাখারও কোনও প্রয়োজন নেই।”
অন্তর্বর্তী সরকারকেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। জাবের বলেন, “নির্বাচনের আগেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যদি আপনারা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে না পারেন, তবে মানুষ রক্ত ঝরানো শুরু করবে। তখন তা আর আটকানো যাবে না।” রবিবার ভারতীয় সময় অনুসারে বেলা সাড়়ে ১১টা নাগাদ শাহবাগ চত্বরে এই সাংবাদিক বৈঠক হয়। সেখান থেকেই তিনি হুঁশিয়ারি দেন, দুপুর আড়াইটের সময়ে তাঁরা আবার সাংবাদিক বৈঠক করবেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করা হবে, নাকি সরকার ফেলে দিতে আন্দোলন শুরু হবে— সে বিষয়ে তখনই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হবে বলে হুঙ্কার দেন তিনি।
আরও পড়ুন:
ঘটনাচক্রে, ওই হুঁশিয়ারির পরে দুপুর দেড়টার কিছু আগে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। সেখানেই তিনি জানান, হাদির হত্যার বিচার চলবে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে। পুলিশের রিপোর্ট পাোয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন হবে বলেও জানান তিনি।
তবে এই ঘোষণার পরেও অস্বস্তি কাটছে না অন্তর্বর্তী সরকারের। আইন উপদেষ্টা এই ঘোষণার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তিন দফা দাবি প্রকাশ করে ইনকিলাব মঞ্চ। তাদের দাবি, ৩০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। এর জন্য এফবিআই বা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মতো পেশাদার এবং নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সংস্থাকে যুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া সিভিল-মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের মধ্যে লুকিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের সদস্যদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে। পাশাপাশি ইউনূস সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বিশেষ সহকারী এবং আইন উপদেষ্টাকেও ‘খুনের সকল দায় নিয়ে’ পদত্যাগ করতে হবে বলেও দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।