E-Paper

বাড়ছে গরম, কমছে শস্য উৎপাদন, সঙ্কটে সব দেশই

২০২২ সালে বিশেষ করে তিনটি গ্রিনহাউস গ্যাস বেড়েছে— কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড। এই গ্যাসগুলির বলয়ে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা আটকে পড়ে। ফলে গরম বেড়ে যায়।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৫৭
A Photograph of crops

তাপপ্রবাহের জেরে ভারতের শস্য উৎপাদন কমেছে। প্রতীকী ছবি।

বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ ক্রমশই বাড়ছে। বিপজ্জনক গ্রিনহাউস গ্যাসের ফাঁদে আটকে পড়ছে ভূপৃষ্ঠের উত্তাপ। যার জেরে বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে তাপপ্রবাহ, খরা, বন্যার ঘটনা। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই আক্রান্ত। ভারত রীতিমতো ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি ডলার। ‘ওয়ার্ল্ড মেটিয়োরোলজিক্যাল অর্গানাইজ়েশন’ (ডব্লিউএমও)-র বার্ষিক রিপোর্টে এমনটাই জানানো হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২ সালে তাপপ্রবাহের জেরে শুধুমাত্র ইউরোপে ১৫,৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে যুক্ত সংস্থা ডব্লিউএমও দাবি করেছে, ২০২২ সালে বিশেষ করে তিনটি গ্রিনহাউস গ্যাস বেড়েছে— কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড। এই গ্যাসগুলির বলয়ে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা আটকে পড়ে। ফলে গরম বেড়ে যায়। ২০২২ সালে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা রেকর্ড গড়েছে। গত আট বছরে এটি ছিল সর্বোচ্চ। ডব্লিউএমও-র সেক্রেটারি জেনারেল পেটেরি টালাস বলেন, ‘‘গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ক্রমেই বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনও ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা, প্রতিকূলতার জেরে বিশ্বের প্রায় সর্বত্র মানুষ বিপর্যস্ত।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যেমন ধরুন ২০২২ সাল, পূর্ব আফ্রিকায় বারবার খরা হয়েছে। পাকিস্তানের বৃষ্টি সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। চিনে রেকর্ড তাপপ্রবাহ। ইউরোপেও তাপপ্রবাহের জেরে আক্রান্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ। এর জেরে খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। মানুষ বাসস্থান ছেড়ে এক জায়গা থেকে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কোটি কোটি ডলার ক্ষতির মুখেপড়ছে দেশগুলি।’’

ডব্লিউএমও-র রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ২০২২ সালে ভারতে বর্ষা তাড়াতাড়ি এসে গিয়েছিল। আবার শেষও হয়েছিল দেরিতে। বর্ষা শুরু হওয়ার আগে যে প্রবল গরম পড়েছিল, তা রীতিমতো ব্যতিক্রমী। পড়শি দেশ পাকিস্তানেও একই রকম হয়েছিল। প্রবল গরমের জন্য ভারতে শস্য উৎপাদন কমেছে। একাধিক দাবানল ঘটেছে। বিশেষ করে উত্তরাখণ্ডে।

ডব্লিউএমও-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘তাপপ্রবাহের জেরে ভারত ও পাকিস্তান, দুই দেশেই শস্য উৎপাদন কমেছে। এর ফলে এই দুই দেশ গম রফতানি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। চাল রফতানিতেও কড়াকড়ি শুরু করেছিল ভারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। সামগ্রিক ভাবে গোটা বিশ্বের খাদ্য বাজারে প্রধান খাবারের অভাব দেখা দেয়। যে সব দেশ চাল, গমের জন্য অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল, তারা প্রবল সঙ্কটে পড়ে যায়।’’

পাকিস্তানের পাশাপাশি ভারতের একাংশও গত বছর ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়েছিল। বিশেষ করে জুন মাসে ব্যাপক বন্যা হয়েছিল উত্তর-পূর্ব ভারতে। ধস নামে পাহাড়ে। বন্যা ও ধসে ৭০০-রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ভারতে। বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছিল আরও ৯০০ জনের।

পুরনো রেকর্ড ভেঙে গত বছর ভয়াবহ ও দীর্ঘতম তাপপ্রবাহের সাক্ষী হয়েছিল চিন। জুনের মাঝামাঝি থেকে অগস্ট মাস পর্যন্ত চলেছিল তাপপ্রবাহ। সবচেয়ে গরম গ্রীষ্মকাল কাটিয়েছে দেশটি। স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রার থেকে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল গরম। প্রবল শুকনোও ছিল চিনের আগের গ্রীষ্ম, দ্বিতীয়-সর্বোচ্চ। দক্ষিণ চিনে গড় বৃষ্টি ২০ থেকে ৫০ শতাংশ কম হয়েছিল।

তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচেনি ইউরোপও। তিন মাস প্রবল গরমে পুড়েছে এই মহাদেশ। স্পেনে কমপক্ষে ৪৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে গত বছর। জার্মানিতে ৪৫০০ জন, ব্রিটেনে ২৮০০ জন, ফ্রান্সে ২৮০০ জন, পর্তুগালে ১০০০ জন অস্বাভাবিক গরমে প্রাণ হারিয়েছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

crops summer Global Warming hot temperature Crisis

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy