রুশ বোমা থেকে বাঁচতে আপাতত ঠিকানা ভূগর্ভস্থ আশ্রয়স্থল। ক্রিসমাস উপলক্ষে দেশীয় পোশাকে সেজেছে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনের এক দল শিশু। ছবি: রয়টার্স।
রাশিয়ার ৩৬ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি শুরু হল আজ দুপুর থেকে। ৭ জানুয়ারি রুশ অর্থোডক্স ক্রিসমাস। সেই উপলক্ষেই গত কাল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। চলবে আজ দুপুর থেকে ৭ জানুয়ারি সম্পূর্ণ দিনটা। যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির দাবি, সবটাই রুশ প্রেসিডেন্টের রণকৌশল। রুশ সেনাদের বিশ্রাম দিতে এবং সেই সুযোগে ইউক্রেনের বাহিনীকে প্রতিহত করার ছক কষে নিতেই ছলে-বলে-কৌশলে সময় বাগিয়ে নেওয়া। যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের মতে, গোটা বিশ্বের সামনে ইউক্রেনকে আগ্রাসী প্রতিপন্ন করতে এবং সমঝোতায় নারাজ দেখাতেও এই পদক্ষেপকরেছেন পুতিন।
রাশিয়ার একটি সরকারি টিভি চ্যানেলে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘‘আজ দুপুর থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। ৭ জানুয়ারি শেষ না-হওয়া পর্যন্ত বিরতি চলবে।’’ রাশিয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বৈঠকে বসেন জ়েলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘‘এ বার বড়দিনকেও হাতিয়ার করছে ওরা। ডনবাসে আমাদের ছেলেরা এগোচ্ছে। ওরা বেশ চাপে রয়েছে। যুদ্ধবিরতির সুযোগে বিশ্রাম দেওয়া হবে রুশ সেনাদের। সেই সঙ্গে আরও বেশি যুদ্ধাস্ত্র আনানো হবে। সেনাবাহিনীর অবস্থান নতুন করে সাজানো হবে।’’ বিশেষজ্ঞেরাও বলছেন, ‘‘এই সমঝোতায় শুধুমাত্র রুশদের উপকার হবে। ইউক্রেন আবারও বঞ্চিত হবে। আচমকা এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। পুতিনের উচিত নয় এটা আশা করা যে ইউক্রেন তাদের আর্জি মানবে।’’ তবে যুদ্ধবিরতিকে পুতিনের ‘রণকৌশল’ বলে উড়িয়ে দিলেও তাঁর অনুরোধকে উপেক্ষা করার কথা বলেনি ইউক্রেন।
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে বেশিটাই রুশ ভাষায় কথা বলেছেন জ়েলেনস্কি। তাঁর কথায়, ‘‘আসল যুদ্ধবিরতির অর্থ আগ্রাসন থামানো... যুদ্ধ তখনই থামবে, যখন ওদের সেনা আমাদের জমি ছেড়ে যাবে বা আমরা ওদের ছুড়ে ফেলে দেব।’’
ইউক্রেনীয়েরা বড়দিন পালন করেন ২৫ ডিসেম্বর। এ সময়ে বা নববর্ষে যুদ্ধ বন্ধ রাখেনি রাশিয়া। বরং ১ জানুয়ারি মধ্যরাতেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে মস্কোর বাহিনী। সেই প্রসঙ্গও টেনেছেন অনেকে। এ অবস্থায় শোনা যাচ্ছে, রুশ যুদ্ধবিরতিতে ঢিলে দিচ্ছে না ইউক্রেন। বরং প্রস্তুতি আরও জোরদার করছে। আমেরিকা, ইউরোপ থেকে আরও অস্ত্র আসছে ইউক্রেনে। পেন্টাগন জানিয়েছে, ‘ব্র্যাডলি ফাইটিং ভেহিকল’ পাঠানো হয়েছে ইউক্রেনে। তবে ঠিক কত সংখ্যক অস্ত্রবাহী যান পাঠানো হয়েছে, তা জানায়নি পেন্টাগন। আরও একটি নিরাপত্তা সহযোগিতা প্যাকেজ ঘোষণা করার কথা রয়েছে হোয়াইট হাউসের।
যুদ্ধবিরতি চললেও আজ ইউক্রেনে সাইরেনের আওয়াজ থামেনি। বিশেষ করে কাল রুশ ঘোষণার পরেও আকাশপথে হামলা চলেছে পূর্ব ইউক্রেনে। তাই যুদ্ধের রাশ এতটুকু ঢিলে দিতে রাজি নয় তারা। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক সুরে বলেছেন, ‘‘পুতিন কিন্তু ২৫ ডিসেম্বর বা নববর্ষে হাসপাতাল, নার্সারি, গির্জায় হামলা চালিয়ে গিয়েছে। বিষয়টা খুবই মজার। মনে হয়, উনি কিছুটা অক্সিজেন চাইছেন।’’ আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, ‘‘ওদের ওই ঘোষণার পিছনে ঠিক কী উদ্দেশ্য, তা জানা নেই। তবে ওদের উপরে ভরসা সামান্যই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy