Advertisement
E-Paper

রুশ মদতেই বুক-এ দড় জঙ্গিরা, দাবি আমেরিকার

বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র হানায় সরাসরি রুশ মদতের অভিযোগ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এ বার সেই অভিযোগ আরও জোরালো করল মার্কিন সেনা-গোয়েন্দাদের একটি রিপোর্ট। একটি মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইউক্রেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটি দল কয়েক সপ্তাহ আগেই রাশিয়ায় বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হানার প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৯

বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র হানায় সরাসরি রুশ মদতের অভিযোগ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এ বার সেই অভিযোগ আরও জোরালো করল মার্কিন সেনা-গোয়েন্দাদের একটি রিপোর্ট। একটি মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইউক্রেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটি দল কয়েক সপ্তাহ আগেই রাশিয়ায় বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হানার প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ভবিষ্যতে ইউক্রেনের আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় যাত্রিবাহী বিমান ফের ক্ষেপণাস্ত্র হানার মুখে পড়তে পারে বলেও ওই রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে।

ন্যাটো বাহিনীর মার্কিন কম্যান্ডার জেনারেল ফিলিপ ব্রিডলাভ পেন্টাগনের একটি বৈঠকে বলেছেন, সীমান্তে কোনও ক্ষেপণাস্ত্রবাহী গাড়ি তাঁরা দেখেননি। তবে পশ্চিম রাশিয়ায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষণ নিতে দেখেছেন তাঁরা। ঘটনাচক্রে, ওই প্রশিক্ষণের সপ্তাহ দুয়েক পরেই ইউক্রেনীয় সেনার একটি পণ্যবাহী বিমান ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভেঙে পড়েছিল। সেটিও এই জঙ্গিদের কাজ বলে মার্কিন সেনার দাবি।

সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ গ্রেনেড বা রকেট ছোড়ার থেকে বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া পুরোপুরি আলাদা। মার্কিন বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জেমস ও’পসের মতে, উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তি ও উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ না থাকলে এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া সম্ভব নয়।

শুধু তাই নয়, মাটি থেকে বহু উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানকে লক্ষ্য করতে গেলে উন্নত প্রযুক্তির রেডারও প্রয়োজন হয়। সাধারণত, এমন ধরনের রেডার-ক্ষেপণাস্ত্র কোনও দেশের সেনাবাহিনীর কাছেই মজুত থাকে। তার প্রশিক্ষণও বাহিনীর নির্দিষ্ট দল থাকে। মূলত, বায়ুসেনার ইঞ্জিনিয়ারদেরই সেই দলে নেওয়া হয়। কী ভাবে কাজ করে এই ক্ষেপণাস্ত্র?

সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আকাশপথ দিয়ে উড়ে যাওয়া কোনও বস্তুর উপরে নজর রাখতে একটি রেডার বসানো হয়। সেই রেডার একটি নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধের এলাকায় অনবরত নজরদারি চালায়। ওই এলাকা দিয়ে কোনও বস্তু উড়ে গেলেই রেডার মূল কন্ট্রোল রুমে সঙ্কেত পাঠায়। যেখানে বসে লক্ষ্যবস্তুর উপরে নজর রাখেন সেনা অফিসারেরা। লক্ষ্যবস্তুর গতিবিধি নজর করে তাঁরা খবর পাঠান ক্ষেপণাস্ত্রের কাছে থাকা দ্বিতীয় কন্ট্রোল রুমে (ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে মূল কন্ট্রোল রুমের যোগাযোগ রক্ষা করে এই দ্বিতীয় কন্ট্রোল রুম)।

মূল কন্ট্রোল রুমের বার্তা অনুযায়ী, উড়ন্ত লক্ষ্যবস্তুর দিকে ক্ষেপণাস্ত্র তাক করেন দ্বিতীয় কন্ট্রোল রুমের অফিসারেরা। এর পর নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার মধ্যে ঢুকে পড়লে রেডার থেকে বার্তা মেলে। সেই মতো মূল কন্ট্রোল রুম কত ডিগ্রি কোণে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে হবে, তা দ্বিতীয় কন্ট্রোল রুমকে জানায়। দ্বিতীয় কন্ট্রোল রুম সেই মতো ক্ষেপণাস্ত্র তাক করে এবং চূড়ান্ত বার্তা যায় ছোড়ার দায়িত্বে থাকা অফিসারের কাছে। তিনি-ই লক্ষ্যবস্তুতে চূড়ান্ত আঘাত হানেন। আকাশে ধেয়ে যাওয়ার পর লক্ষ্যবস্তু থেকে নির্গত তাপ অনুসরণ করেই আঘাত হানে ওই ক্ষেপণাস্ত্র।

প্রসঙ্গত, শত্রু বিমানকে ঘায়েল করতে ভারতের বিভিন্ন সীমান্তেও ভূমি থেকে আকাশে ছুটে যাওয়া ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। সেগুলিও এমন ভাবেই কাজ করে।

সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, সেনাবাহিনীর সাহায্য ছাড়া এত উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর পক্ষে সম্ভব নয়। এই প্রসঙ্গেই মার্কিন সেনা-গোয়েন্দাদের রিপোর্ট আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। মার্কিন একটি সংবাদপত্রের দাবি, সে দেশের সেনার বিশেষ উপগ্রহ মারফত কোথা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র কোথা থেকে ছোড়া হয়েছে, তা খুঁজে বার করা সম্ভব। সে কাজও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সব তথ্যের উপরেই ভিত্তি করে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সামান্থা পাওয়ার-ও বলেছেন, “এই ঘটনায় রাশিয়ার মদত আমরা উড়িয়ে দিতে পারছি না।”

শুধু এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার নয়, এই সব যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণও কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর পক্ষে সম্ভব নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ যন্ত্রের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ দরকার। শুধু তা-ই নয়, এগুলির যন্ত্রাংশ নিয়মিত বদলাতে হয়। মার্কিন সেনা কর্তাদের একাংশের মতে, পূর্ব ইউক্রেনে এমন অস্ত্রশস্ত্র রাশিয়ার সাহায্য ছাড়া রাখা সম্ভব নয়।

সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, সেনা-বিমানের ক্ষেত্রে ক্ষেপণাস্ত্র-নিরোধী আগাম সতর্ক ব্যবস্থা থাকে। বিমানের দিকে কোনও ক্ষেপণাস্ত্র ধেয়ে এলে ককপিটে বসেই তার সতর্কবার্তা পান চালক। সেই মতো এড়িয়েও যেতে পারেন তিনি। কখনও এলোমেলো পথে বিমান উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, কখনও বা বিমানে বসানো বিশেষ নল দিয়ে আগুন বার করে ক্ষেপণাস্ত্রকে বিভ্রান্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু যাত্রিবাহী বিমানে এমন কোনও ব্যবস্থা থাকে না। ফলে ক্ষেপণাস্ত্র ধেয়ে আসলেও তার আগাম সতর্কতা পাননি চালক।

amerika militants mh17
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy