E-Paper

গোপালগঞ্জ জুড়ে সেনার ধরপাকড়, হাসিনার হুঁশিয়ারি

আওয়ামী লীগের অভিযোগ, শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনার পৈতৃক বাড়ি এই জেলায় হওয়ায় এবং গোপালগঞ্জ তাদের শক্ত ঘাঁটি বলে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে সেনা অভিযান চালাচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার।

অনির্বাণ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৫ ০৭:৩৭
শেখ হাসিনার হঁশিয়ারি, ‘‘গোপালগঞ্জের প্রতিটি রক্তবিন্দুর হিসাব নেওয়া হবে।’’

শেখ হাসিনার হঁশিয়ারি, ‘‘গোপালগঞ্জের প্রতিটি রক্তবিন্দুর হিসাব নেওয়া হবে।’’ গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র কর্মসূচিকে ঘিরে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে যে উত্তাপ ছড়িয়েছিল, তা এখনও প্রশমিত হয়নি। অভিযোগ, সেনবাহিনীর অভিযানের জেরে জেলার বহু এলাকা কার্যত পুরুষশূন্য। গত ১২ দিনে কত জনকে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করেছে সেই সংখ্যাও স্পষ্ট নয়। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনার পৈতৃক বাড়ি এই জেলায় হওয়ায় এবং গোপালগঞ্জ তাদের শক্ত ঘাঁটি বলে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে সেনা অভিযান চালাচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার।

১৬ জুলাই এনসিপি-র পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল গোপালগঞ্জ। পাঁচ ঘণ্টার হিংসা-হামলায় পাঁচ জন নিহত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের দাবি, প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে সেনাবাহিনীর গুলিতে। নিহতদের পরিবারগুলির সঙ্গে সম্প্রতি ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেছেন শেখ হাসিনা। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘‘গোপালগঞ্জের প্রতিটি রক্তবিন্দুর হিসাব নেওয়া হবে।’’ গোপালগঞ্জে হিংসার ঘটনায় ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’ হয়েছে বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশি কেন্দ্র। এ নিয়ে প্রশাসনের বক্তব্য জানতে অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের প্রেসসচিব শফিকুর আলমকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি, রাত পর্যন্ত জবাব দেননি ওয়টস্যাপ মেসেজেরও।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং বাসিন্দা সূত্রের খবর, কিশোর-তরুণ-যুবকদের গণহারে গ্রেফতার করছে সেনাবাহিনী। ১২ বছর থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত পুরুষেরা বাড়ি থেকে পালিয়েছেন গ্রেফতারি এড়াতে। শহর ছেড়ে গ্রামে বা দেশের অন্য প্রান্তে পালিয়েছেন তাঁরা। গোপালগঞ্জ পুরসভার জনপ্রতিনিধি মোল্লা রনি হোসেন বলেন, ‘‘গ্রেফতারির ভয়ে রাতে কোনও পুরুষ বাড়ি থাকছেন না। অনেকেই বিলে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। সেখানেও এখন স্বস্তি নেই। বিলে কেউ আছেন কি না দেখতে গত দু’দিন ধরে বিলের উপরে ড্রোন ওড়াচ্ছে সেনাবাহিনী। কার্যত মৃত্যু উপত্যকায় বাস করছি।’’

ধরপাকড় এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে গোপালগঞ্জের কারাগারগুলিতে স্থানাভাব দেখা দিয়েছে। একটি সূত্র জানাচ্ছে, গোপালগঞ্জের জেলে জায়গা হচ্ছে না বলে মাদারিপুর, বাগেরহাট, যশোর, নড়াইলের কারাগারগুলিতে ধৃতদের পাঠানো হচ্ছে। অভিযানের মাত্রা বাড়াতে বরিশাল জেলা এবং খুলনা রেঞ্জ থেকে পুলিশ আনা হয়েছে। জলপথে কেউ যাতে পালাতে না পারে, সে জন্য মধুমতী নদীতে নৌসেনা টহল দিচ্ছে। সেনা অভিযানে জেলার জনজীবন কার্যত স্তব্ধ। স্কুল-কলেজ বন্ধ। সেখানে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প করা হয়েছে বলে অভিযোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, সদর থানার শেষ থেকে টুঙ্গিপাড়ার ব্যবধান আট কিলোমিটার। ওই দূরত্বের মধ্যে তিনটি সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এই টুঙ্গিপাড়াতেই শেখ মুজিবুর রহমানের বসত ভিটে এবং তাঁর মাজার। সেনা অভিযান, এনসিপি, জামায়াতের হামলা রুখতে গোপালগঞ্জে স্থানীয়দের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে প্রতিরোধ বাহিনী। তেমনি একটি বাহিনী ‘বঙ্গবন্ধু গেরিলা বাহিনী’। ওই সংগঠনের প্রধান তথা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ রুবেল বলেন, ‘‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য স্বাধীনতা-বিরোধী এই রাজাকারদের পরাস্ত করা এবং নেত্রী শেখ হাসিনাকে সসম্মানে ফিরিয়ে আনা। বাংলার মানুষকে এই রাজাকারদের হাতের থেকে উদ্ধারের জন্য বঙ্গবন্ধু গেরিলা বাহিনী প্রস্তুত হচ্ছে।’’

ধরপাকড় এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে জেলার কোটালিপাড়ার বিএনপি নেতৃত্বও সরব হয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের দলের কর্মী-সমর্থকদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে আন্দোলনে নামা ছাড়া তাঁদের কোনও উপায় থাকবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sheikh Hasina Bangladesh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy