ফণীর তাণ্ডবে বাংলাদেশে মৃত অন্তত ১৪, ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ১৩ লক্ষ মানুষ। —নিজস্ব চিত্র।
প্রচণ্ড আতঙ্কের পাশাপাশি নিরাপত্তার তোড়জোড় ও সতর্কতা। গোটা বাংলাদেশের মানুষের মনেই ছিল শঙ্কা। অন্যদিকে, সরকারি-বেসরকারি প্রস্তুতিরও ঘাটতি ছিল না। তবে যতটাসতর্ক ছিল বাংলাদেশ, ততটা ওঠেনি ‘ফণী’র ফনা। দু’দিন ধরে তর্জন-গর্জন শেষে ওড়িশায় তাণ্ডব চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে শনিবার সকালে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছিল‘ফণী’। যদিওদুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ‘ফণী’র প্রভাবে শুক্রবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির সময় বজ্রাঘাত এবং শনিবার এর আঘাতে ঝোড়ো হাওয়ায় অন্তত ১৪ জন মারা গিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র কারণে শুক্রবার রাত পর্যন্ত দেশের উপকূলীয় জেলাগুলির বিপজ্জনক এলাকার ১৩ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮৮৬ জনকে ত্রাণ শিবিরে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে ঢুকতে ঢুকতে শক্তি কমে ঘূর্ণিঝড় ফণী দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।এখন বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরগুলোর বিপদসঙ্কেত নামিয়েদেশের সব সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসঙ্কেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়াদফতর। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে একটানা। শনিবার দুপুরে ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া দফতরে সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়েআবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা শাসুদ্দিন আহমেদজানিয়েছেন, বাংলাদেশ এখন অনেকটাই বিপন্মুক্ত। মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদসঙ্কেত নামিয়ে তার বদলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসঙ্কেত ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদসঙ্কেত নামিয়ে তার বদলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরেরগভীরে অবস্থানরত সব জেলে নৌকো ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
‘ফণী’ দুপুরে গভীর স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ অঞ্চলে অবস্থান করছিল বলে আবহাওয়া দফতরজানিয়েছে। এটি বৃষ্টি ঝরিয়েআরও দুর্বল হয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত। তবে ঝড়ের কারণে বায়ুচাপের তারতম্য এবং অমাবস্যাআসন্ন বলে উপকূলীয় জেলাগুলোতে দুই থেকে চার ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়াদফতর।
বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে অবস্থানরত ১৩ লক্ষ ৬৪ হাজার মানুষের বিপদ কেটে যাওয়ার কথা জানিয়ে তাদের ঘরে ফেরার বিষয়ে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে বলেও বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান, দুপুর পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র বাংলাদেশের জামালপুর ও জামালপুরের আশপাশে অবস্থান করছিল।দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ দুপুরের দিকে টাঙ্গাইল, পাবনা ও ময়মনসিংহে অবস্থান করছিল। এর আগে সকাল ৯টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি ফরিদপুর-ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছিল। এটি পরে আরও উত্তর-পূর্বের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ‘ফণী’র কারণে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : ফণীর ছোবলে বিধ্বস্ত পুরী থেকে কটক
আরও পড়ুন : ফণীর চক্রব্যূহ ভেঙে সফল আপৎমিত্ররা, প্রশাসনের তূণে নয়া হাতিয়ার
ভারতের ওড়িশায় আঘাত হানার ২১ ঘণ্টা পর সকাল ৬টার দিকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অতিক্রম করে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে দেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া-সহ সারা দেশে চলছে বজ্রপাত-সহ বৃষ্টি।
ফণীর তাণ্ডবে ভেঙে পড়েছে বহু বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব দুপুরের পর থেকে বাংলাদেশের খুলনা, যশোহর, চুয়াডাঙা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ অঞ্চলে শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তবে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ দুর্বল হয়ে পড়লেও আশঙ্কা কাটেনি খুলনার কয়রা উপজেলার গোবরা, ঘাটাখালি ও হরিণখোলা গ্রামের মানুষের। কপোতাক্ষ নদের পাড়ে দেওয়া বেড়িবাঁধ ভেঙে যেকোনও সময়ে এই তিন গ্রাম তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এই তিনটি গ্রাম সমেত আশপাশের বহু মানুষ এই বেড়িবাঁধের উপর এখন আশ্রয় নিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy