Advertisement
E-Paper

বেশ কড়া শর্তে রোহিঙ্গা ফেরত নেবেন সু চি

কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনার কাজ হবে চারটি শর্ত সাপেক্ষে। যাঁরা সেই শর্ত পূরণ করতে পারবেন, শুধু তাঁদেরই ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪১
বার্তা: শুক্রবার ইয়াঙ্গনে ইউ কিইয়াও জেয়া। —নিজস্ব চিত্র।

বার্তা: শুক্রবার ইয়াঙ্গনে ইউ কিইয়াও জেয়া। —নিজস্ব চিত্র।

নীতিগত ভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে আপত্তি নেই মায়ানমারের। তবে কাদের ফেরানো হবে, সে বিষয়ে তারা কড়া শর্ত চাপাচ্ছে।

মায়ানমারের বিদেশ মন্ত্রকের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি ইউ কিইয়াও জেয়া শুক্রবার জানান, দেশের স্টেট কাউন্সিলার আউং সান সু চি গত ১২ অক্টোবর এ নিয়ে দেশের নীতিগত অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। পুনর্বাসন এবং উন্নয়নের কাজও শুরু হচ্ছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনার কাজ হবে চারটি শর্ত সাপেক্ষে। যাঁরা সেই শর্ত পূরণ করতে পারবেন, শুধু তাঁদেরই ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

কী কী সেই শর্ত?

মায়ানমারের বিদেশ মন্ত্রকের এই শীর্ষ কূটনীতিকের কথায়— যে সব রোহিঙ্গা এ দেশে দীর্ঘদিন বসবাসের প্রমাণপত্র দাখিল করতে পারবেন, স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফিরতে চাইবেন, পরিবারের কেউ এ দিকে রয়েছেন তেমন প্রমাণ দেখাতে পারবেন এবং বাংলাদেশে কোনও বাচ্চা জন্মালে তার বাবা-মা উভয়েই মায়ানমারের স্থায়ী বাসিন্দা প্রমাণিত হলে তবেই তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

প্রশ্ন উঠেছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পর প্রাণ বাঁচাতে যাঁরা দেশ ছেড়েছেন, তাঁদের কাছে কী করে এই সব তথ্য-প্রমাণ থাকবে? মায়ানমারের বিদেশ মন্ত্রকের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি বলেন, ‘‘স্কুলে পড়া, হাসপাতালে চিকিৎসা, চাকরির নথি— এ সবের মতো কিছু প্রমাণ তো দেখাতেই হবে। না হলে ফেরত নেওয়াটা মুশকিল। এবং এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষও!’’

শুক্রবার ইয়াঙ্গনে ‘ভারত-মায়ানমার সম্পর্কের আগামী দিন’ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ দিন অংশ নিয়েছিলেন মায়ানমারের বিদেশ মন্ত্রকের এই শীর্ষ কূটনীতিক। কলকাতার ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ, ইয়াঙ্গনের ভারতীয় দূতাবাস এবং মায়ানমার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের থিঙ্ক ট্যাঙ্কের বিশেষজ্ঞরাও যোগ দিয়েছেন এই সম্মেলনে।

কিন্তু শরণার্থী সমস্যার মতো মানবিক বিষয়ে মায়ানমার সরকার কেন এত কড়া শর্ত চাপাচ্ছে? ওই কূটনীতিকের ব্যাখ্যা, রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা কেবলমাত্র মানবিক বিষয় নয়। নিরাপত্তাও একটা বড় কারণ। মানবিকতার খাতিরে ক্ষমতায় এসেই সু চি কোফি আন্নান কমিশন তৈরি করেছেন। রাখাইনে পুর্নবাসন-উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছেন। এ সবও তো সরকারই করেছে।

সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং)-এর সদ্য প্রাক্তন প্রধান রাজেন্দ্র খন্না। তিনিও মনে করেন, রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে চলবে না। খন্না জানান, ২০০৪ সাল থেকে আইএসআই রাখাইনে সক্রিয়। পাকিস্তানি মদতেই মহম্মদ ইউনুস ‘রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজে‌শন’ পত্তন করেন। পরে মুজাম্মিল এবং রাহিল নামে দুই লস্কর কমান্ডারকে আইএসআই বাংলাদেশ হয়ে রাখাইনে পাঠিয়েছিল। রোহিঙ্গা আন্দোলনকারীদের তারাই জঙ্গিপনার প্রশিক্ষণ দেয়। আইএসআই-এর মদতেই পরবর্তী কালে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ বা আরসা-র জন্ম হয়। এই তল্লাটে উগ্রপন্থা বাড়লে ভারত-মায়ানমার উভয়েরই সমস্যা হবে বলে মনে করেন প্রাক্তন ‘র’-প্রধান। খন্নার সঙ্গে সহমত জেয়াও। তাঁর কথায়, ‘‘রোহিঙ্গা জঙ্গিদের যারা মাথা, তাদের পরিবার কিন্তু পাকিস্তানেই বসবাস করে। সেখানে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলেও সংবাদ মাধ্যম বার বার খবর দিয়েছে।’’

আবার উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের যাতে মায়ানমার ঘাঁটি করতে না দেয়, সে প্রসঙ্গও তুলেছেন ইয়াঙ্গনে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিস্রি। তাঁর কথায়, উন্নয়ন ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে দিল্লি বিপুল টাকা ঢালছে। কিন্তু সীমান্তে শান্তি না-থাকলে সেই উন্নয়ন অর্থহীন। সেই সূত্র ধরে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ বলেন, ‘‘মোরে-তামু সড়ক পথে বাণিজ্যের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তার জন্য শান্তিই হল প্রথম শর্ত।’’

সেই শান্তি এবং উন্নয়নের প্রস্তাব-গুচ্ছ ‘ইয়া‌ঙ্গন ঘোষণা’ নামে প্রকাশিত হবে বলে জানান আইএসসিএসের প্রধান অরিন্দম মুখোপাধ্যায়। যা দুই সরকারই নীতি প্রণয়নে গ্রহণ করবে।

Aung San Suu Kyi আউং সান সু চি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy