E-Paper

পতন হবে বুঝতে পারেননি ওবায়দুলরা

আন্দোলনকে দেশের সামগ্রিক জনরোষ বলে মানতে নারাজ ওবায়দুল। তাঁর দাবি, ওই সময় 'হুজুগে পরিস্থিতি'র সৃষ্টি হয়েছিল। এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে 'সমাজবিরোধী অপশক্তি, লুটেরা শ্রেণি' যুক্ত হয়েছিল।

ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদের। —নিজস্ব চিত্র।

অনির্বাণ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৫ ০৭:২৯
Share
Save

মুহাম্মদ ইউনূস যে ভাবে দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেছেন, তার মধ্যেই ভোট না করানোর বীজ নিহিত রয়েছে বলে দাবি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। নিজের অস্থায়ী আস্তানায় রবিবার আনন্দবাজার পত্রিকার মুখোমুখি হয়ে তিনি জানিয়েছেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে যদি কখনও ক্ষমা চাইতে হয়, তা হলে দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে দলীয় নেতৃত্ব তা করবেন। তাঁর আশা, শেখ মুজিবুর রহমানের দলকে দমিয়ে রাখা যাবে না। ‘ফিনিক্স পাখি’র মতো তাঁরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বমহিমায় ফিরবেন। তবে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগ কার্যত কিছুটা মেনে নিলেও গুমঘর বা নির্বাচনের নামে প্রহসন প্রসঙ্গে সরাসরি জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন।

গত বছরের ৫ অগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে পদ্মা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তিকালীন সরকার। নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের বৈধতা বাতিল করেছে। ফলে নির্বাচনের ময়দানে আপাতত নেই শেখ হাসিনার দল। ইতিমধ্যেই ইউনূস ভোটের প্রাথমিক সময় ঘোষণা করেছেন। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে সন্দিহান ওবায়দুল। তাঁর কথায়, ‘‘এই দিনক্ষণ ঘোষণার মধ্যেই ভোট না-হওয়ার বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে বলেই আমার ধারণা। যদি আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হয়, তা হলে দেশ-বিদেশ কোথাও তা গ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্যও হবে না। আর নির্বাচন যদি জবরদস্তি করিয়েও নেয়, তা হলে বাংলাদেশের পার্লামেন্ট শুধু আওয়ামী লীগহীন হবে না, সেটা মুক্তিযোদ্ধাবিহীন পার্লামেন্ট হবে।’’

জুলাই-অগস্টের আন্দোলন যে সরকারের পতন ঘটাবে, তা তাঁরা প্রশাসনগত এবং দলগত ভাবে বুঝতেই পারেননি বলে মেনে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়, ‘‘ঠিক এমনটা হবে এটা আমরা ভাবতে পারিনি। প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোটা- বিরোধী কর্মসূচি নিয়েছিল। আসলে বাহ্যত এটা কোটা বিরোধী আন্দোলনের কথা বলা হলেও পরবর্তী সময়ে দেখা গেল এটা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন। গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন রিপোর্ট ছিল, কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের পতনে গিয়ে শেষ হবে, তা আমাদের অনেকেরই ভাবনার বাইরে ছিল। দলগত ভাবেও আমরা বুঝতে পারিনি।’’ তিনি দাবি করেছেন, কোটা-বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ছিল জঙ্গিরা। তাঁর কথায়, ‘‘গত জুলাই-অগস্টে বাংলাদেশে যে জঙ্গিবাদী উত্থান হয়েছিল, তাতে আবেগপ্রবণ ছাত্র সমাজের একটা অংশ যোগ দিয়েছিল। পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-এ তইবার শাখা সংগঠন এই অভ্যুত্থানে জড়িত ছিল বলে এখন আমরা খবর পাচ্ছি।’’ ওই আন্দোলনে নিহতেরা পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বের।

এখনও ওই আন্দোলনকে দেশের সামগ্রিক জনরোষ বলে মানতে নারাজ ওবায়দুল। তাঁর দাবি, ওই সময় 'হুজুগে পরিস্থিতি'র সৃষ্টি হয়েছিল। এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে 'সমাজবিরোধী অপশক্তি, লুটেরা শ্রেণি' যুক্ত হয়েছিল। তাঁর কথায়, “এতে বেশির ভাগ অংশগ্রহণ ছিল বাংলাদেশ-বিরোধী, স্বাধীনতা-বিরোধী, উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির। এরা বহু দিন ধরে তলে তলে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সরকারের পতন ঘটানোর জন্য। তারা ছিল ৭১-এর পরাজিত শক্তি। ৭১-এর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল।’’ জুলাই-অগস্টের আন্দোলন দমনে হাসিনা সরকারের পুলিশ বহু ক্ষেত্রেই বলপ্রয়োগ করেছিল। তাতে বহু মানুষ হতাহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনাগুলির জন্য কি শেখ হাসিনার দল ক্ষমা চাইবে, এমন চর্চা বাংলাদেশে হয়েছে। এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘যদি কোনও ভুল করে থাকি, তা হলে জনগণের কাছে ভুল স্বীকার করা হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু প্রয়োজন হলে সেটা তখনই করব, যখন আমরা দেশের মাটিতে থাকব। যা বলা প্রয়োজন, তা দেশের মাটিতেই দাঁড়িয়ে বলব।"

বাংলাদেশে পালাবদলের পরে আওয়ামী লীগের প্রথম সারির বহু নেতা-সাংসদ দেশত্যাগ করেছেন। নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা রাষ্ট্রীয় রোষের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ। বহু কর্মী-সমর্থক এখন কারারুদ্ধ। অনেকেই বলছেন, তৃণমূলস্তরের কর্মীদের বাঘের মুখে ছেড়ে পালিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। এই অভিযোগ মানতে নারাজ দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সবাই দেশ ছাড়িনি। অধিকাংশ নেতাই দেশে রয়েছেন। বহু নেতা কারাগারে। যাঁরা আত্মগোপন করে দেশে রয়েছেন, তাঁরাই সংগঠনকে ধরে রেখেছেন। আওয়ামী লীগ মনস্ক বিশিষ্টজন-সহ কেউ কথা বলতে পারছেন না। সকলের কণ্ঠরোধ করে রাখা হয়েছে। কর্মীরাই এখন নেতা হয়ে গিয়েছেন।’’ তবে তিনি মেনে নিয়েছেন, কারাগারে থাকা কর্মীদের পাশে দলগত ভাবে দাঁড়ানো বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই কঠিন কাজ। কারণ, তাঁর দাবি, আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা প্রতি দিন আদালতে যেতে পারছেন না। তাঁদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘এক দিনে ৮৭ জন আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই চূড়ান্ত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা যতটা পারছি সাহায্য করছি। কিছু কর্মীকে আইনি সহায়তা দিয়ে জেল থেকে মুক্ত করা গিয়েছে।’’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনূস প্রায়শই বলে থাকেন বাংলাদেশে এখন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি। ওবায়দুল কাদেরের মতে, বাংলাদেশ জুড়ে এখন চূড়ান্ত অরাজকতা। তার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী ওই প্রধান উপদেষ্টা। তাঁকে ‘ক্ষমতালোভী’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা বলেছেন, ‘‘এই উগ্রবাদী উত্থানের মূল নেতা মুহাম্মদ ইউনূস।’’ ইউনূসের বিরুদ্ধে অনৃত ভাষণের অভিযোগ তুলে ওবায়দুল বলেছেন, ‘‘তিনি আন্দোলন নিয়ে দু’বার দু’রকম কথা বলছেন— আমেরিকায় গিয়ে তিনি এটাকে ‘মেটিকুলাসলি অর্গানাইজ়ড’ আন্দোলন বলেছেন। একজন ছাত্রকে ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ইউনূসই আবার কিছু দিন পরে ঢাকায় বলেছেন, এই আন্দোলন আচমকা হয়েছে, এর সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ ছিল না এবং ছাত্ররা তাঁকে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেছিল বলেই তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন।’’ ইউনূস-সহ বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দলই শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব। হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়েও বার বার এই অভিযোগ উঠেছে। ওবায়দুল অবশ্য তা পুরোপুরি মেনে নেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সময় দুর্নীতি হয়নি এ কথা বলব না। কিন্তু আমাদের আমলে দুর্নীতি করলে সাজা হত। আমাদের সময় দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীন ভাবে কাজ করেছে। আমাদের দলের কয়েকজন মন্ত্রী-সাংসদের বিরুদ্ধেও ওই কমিশন তদন্ত করেছে, তাঁদের সাজাও হয়েছে।’’ বরং অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধানকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত' বলে অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, ‘‘গ্রামীণ ব্যাঙ্কের দিকে তাকান। ক্ষুদ্র ঋণের নামে কত মানুষ ঘরছাড়া, কত মানুষ জেলে গিয়েছেন, কত মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। এই ধরনের মানুষ দেশের নেতৃত্ব দেবেন?" ইউনূসকে ‘মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী’ বলতেও ছাড়েননি আওয়ামী লীগের এই নেতা। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘গত ৫ অগস্টের আগে কোনও শহিদ মিনারে যাননি,কখনও জাতীয় স্মৃতি সৌধে, বুদ্ধিজীবী সৌধে যাননি। তা থেকেই বোঝা যায় লোকটা কতটা মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী।’’ বিরোধীরা বার বার প্রশ্ন তুলেছে আওয়ামী লীগের আমলে গুম ঘর এবং নির্বাচনের নামে প্রহসন নিয়ে। গুম নিয়ে ইউনূসের প্রশাসন তদন্ত কমিশনও করেছে। এ নিয়ে সরাসরি কোনও উত্তর দেননি ওবায়দুল কাদের। উল্টে ফের বলেছেন, ‘‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের ছবি টাকা থেকে বাদ দিয়েছেন। তা হলেই বুঝে দেখুন ইউনূসকতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh Awami League Muhammad Yunus

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।