বাংলাদেশে চাকরি ক্ষেত্রে প্রবল সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছেন মহিলারা। ২০২৪-২০২৫ অর্থবর্ষের প্রথমার্ধে সে দেশে প্রায় ২১ লক্ষ মানুষ কর্মচ্যুত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৮ লক্ষই মহিলা। অর্থাৎ চাকরি হারানোদের মধ্যে নারীর হার ৮৫ শতাংশের বেশিই। মাসকয়েক আগে প্রকাশিত ‘জেন্ডারভিত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি’র অবস্থা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ‘ইউএন উইমেন’-এর সহায়তায় প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো। বিপুল পরিমাণ মহিলাদের চাকরি হারানোর ঘটনাকে বিশেষজ্ঞেরা শ্রমবাজারে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন। তাঁদের মতে, কর্মসংস্থানের এই সংকোচন দারিদ্র্য, বৈষম্য ও সামাজিক ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। পোশাক শিল্প ও নার্সিং ক্ষেত্রেনারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়া সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে কমপক্ষে ৩০ লক্ষ মহিলা কাজ করেন। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান ক্ষেত্র হলেও বিশ্বে ক্রেতা দেশ কমে যাওয়ায় বহু মহিলা শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন কিংবা কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। শ্রম অধিকার সংগঠন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের তথ্য বলছে, গত এক বছরে প্রায় এক লক্ষ মহিলা শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। তাঁদের বড় অংশই বিকল্প খুঁজে পাননি।
গ্রামীণ অর্থনীতিতেও শ্রমবাজার থেকে ছিটকে পড়ছেন নারীরা। কৃষিকাজে মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে মহিলারা যুক্ত থাকতেন, আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার তাঁদের কাজের সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে। সিরাজগঞ্জের চরের নারী শ্রমিক রহিমা খাতুন বলেন, ‘‘আগে ধান কাটার সময় ডাকা হতো, এখন মেশিনে কেটে ফেলে। আমাদের আর দরকার হয় না।’’ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শেষ শ্রমশক্তি সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে শ্রমশক্তির মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ প্রায় ৩৭ শতাংশ। গত এক দশকে এ হার সামান্য বেড়েছিল, তবে করোনা অতিমারির পর থেকে তা কমতেশুরু করে।
নারী শ্রমশক্তির সংকোচন দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর বিরূপ প্রভাব পড়বে দেশের জিডিপি-র উপরে। মহিলাদের চাকরি হারানো শুধু তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনেই নয়, বরং সার্বিক অর্থনৈতিক কাঠামোতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই পরিস্থিতির জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন প্রাক্তন সাংসদ তথা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, ‘‘দেশে একটা অস্থিতিশীল সরকার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, তার প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। দেশে বিনিয়োগ আসছে না। সরকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না বলে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে এবং তাতে প্রথমেই আক্রান্ত হয়েছেন মহিলারা।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)