Advertisement
E-Paper

মাইন পাতছে মায়ানমার, মুখর হাসিনা

জাতি-নিধন ও সীমান্তে মাইন পুঁতে রাখার মতো গুরুতর অভিযোগ আনলেন মায়ানমারের বিরুদ্ধে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রপুঞ্জে এ দিন পাঁচটি দাওয়াই দিয়েছেন তিনি। এ দিকে ভারতে আশ্রয় পেতে এখনও আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:১৫
বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা। ছবি: এপি

বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা। ছবি: এপি

রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানো ও মায়ানমারেই তাদের নিরপত্তা দেওয়ার দাবিতে রাষ্ট্রপুঞ্জে মুখর হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতি-নিধন ও সীমান্তে মাইন পুঁতে রাখার মতো গুরুতর অভিযোগ আনলেন মায়ানমারের বিরুদ্ধে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রপুঞ্জে এ দিন পাঁচটি দাওয়াই দিয়েছেন তিনি। এ দিকে ভারতে আশ্রয় পেতে এখনও আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। কেন্দ্রীয় সরকারের হলফনামার বিরোধিতা করে আজ ফের দু’টি আবেদন জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে।

জাতি-নিধন ও হিংসা থেকে প্রাণ বাঁচাতে ৮ লক্ষ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। রাষ্ট্রপুঞ্জে এই তথ্য দিয়ে হাসিনা আজ অভিযোগ করেন, ‘‘এই রোহিঙ্গারা যাতে দেশে ফিরতে না পারেন, তার জন্য সীমান্তে মাইন পুঁতে রেখেছে মায়ানমার। বাংলাদেশ সব ধরনের হিংসা ও সন্ত্রাসের বিরোধী।’’ হাসিনা স্মরণ করেন, ১৯৭৫-এ শেখ মুজিবুর রহমান-সহ পরিবারের প্রায় সকলে খুন হওয়ার পরে তিনি নিজেও বোনকে নিয়ে ৬ বছর শরণার্থীর জীবন কাটিয়েছেন। সদ্য কক্সবাজারে দেখে এসেছেন দুর্দশাগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের আশাহীন, ক্ষধার্ত মুখগুলি। হাসিনার দাবি, ‘‘এই সব মানুষকে নিরাপদে দেশে ফিরতে দিতে হবে। বাঙালি জাতি চায়, এমন এক বিশ্ব-ব্যবস্থা, যা মানুষের শান্তি ও ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা পূরণ করে।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জে রাখা হাসিনার প্রস্তাবগুলি এই রকম:

এক, রোহিঙ্গাদের উপরে সব ধরনের হিংসা ও জনজাতি-নিধন নিঃশর্তে বন্ধ হোক। দুই, রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের অধীনে হোক অনুসন্ধানী কমিটি। তিন, জাতি ও ধর্ম নির্বিশেষে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সব নিরাপরাধ নাগরিককে সুরক্ষা দিতে হবে। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি সুরক্ষিত এলাকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হোক রাষ্ট্রপুঞ্জের তদারিকতে। চার, জোর করে যে সব রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের বাড়িতে ফিরতে দেওয়া হোক। পাঁচ, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে কোফি আন্নান কমিশনের রিপোর্টের সুপারিশগুলি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হোক।

বাংলাদেশের মতো ভারতও চায় রোহিঙ্গারা ফিরুক মায়ানমারে। গত কালও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে একাধিক জঙ্গি সংগঠনের সম্পর্ক থাকায় তাঁরা জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক। সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হলফনামাতেও কেন্দ্র এই অবস্থানই জানিয়েছে ক’দিন আগে। সরকারের সেই বক্তব্যের বিরোধিতা করে শীর্ষ আদালতে আজ জমা পড়া আবেদন দু’টির বক্তব্য, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ভারতে একটি এফআইআরও নেই যার ভিত্তিতে বলা যায় যে তারা এই দেশের নিরপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক।

ওই হলফনামায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দেওয়ারও বিরোধিতা করে আবেদন দু’টিতে বলা হয়েছে, প্রবল নির্যাতন ও গণহত্যার হাত থেকে বাঁচতেই রোহিঙ্গারা মায়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ভারত এই রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিতে দায়বদ্ধ। কারণ, বিতাড়ন-বিরোধী আন্তর্জাতিক আইন বলে, জাতি-ধর্ম-জাতীয়তা বা কোনও সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার কারণে নিজের দেশে স্বাধীনতা হরণ বা প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকলে কোনও শরণার্থীকেই জোর করে সেখানে ফেরত পাঠানো যাবে না।

মহম্মদ সালিমুল্লা ও শাকির নামে দুই রোহিঙ্গার হয়ে আবেদন দু’টি পেশ করেছেন প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। তাঁর বক্তব্য, সংবিধানে ১৪ ও ২১ ধারায় ভারতীয়, অ-ভারতীয় সকলের সাম্য ও জীবনরক্ষার অধিকার দেওয়া রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা প্রশান্তর মতে, ‘‘বৈষম্যমূলক ও সম্পূর্ণ অবিবেচনার কাজ।’’

mine Myanmar Bangladesh Sheikh Hasina মায়ানমার বাংলাদেশ শেখ হাসিনা United Nations rohingya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy