মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ। ছবি: রয়টার্স।
চট্টগ্রাম আদালতের সামনে সংঘর্ষের সময়ে এক আইনজীবীর মৃত্যুতে এখনও পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। সে দেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’কে শনিবার এ কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার কাজী তারেক আজিজ়। মৃত আইনজীবীর বাবা শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের বিরুদ্ধে নাম উল্লেখ করে মামলা রুজু করেছেন। এ ছাড়া আরও ১০-১৫ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাংলাদেশের পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজ দেখে ইতিমধ্যে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদনে বেশ কয়েক জন অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকার বেশির ভাগই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। এই অবস্থায় বেশ কিছু ধর্মীয় সংগঠন মিলিত ভাবে সনাতনী জাগরণ মঞ্চ গঠন করে। যার অন্যতম মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। তিনি বাংলাদেশ ইসকনের প্রাক্তন সদস্য। চট্টগ্রামে সম্প্রতি একটি সমাবেশ ডাকেন তিনি। সেখানে হাজার হাজার সংখ্যালঘুর ভিড় হয়। ওই সমাবেশের পরেই রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গত সোমবার চিন্ময়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরের দিন চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করানো হয় তাঁকে। খারিজ হয়ে যায় তাঁর জামিনের আবেদন। চট্টগ্রাম আদালতের বাইরে তখন ভিড় করেছিলেন চিন্ময়ের অনুগামীরা। তাঁকে আদালত থেকে প্রিজ়ন ভ্যানে তোলার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন চিন্ময়ের অনুগামীরা। অভিযোগ, ওই সংঘর্ষের সময়েই মৃত্যু হয় আইনজীবীর।
পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বুধবারই চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় তিনটি মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় এখনও পর্যন্ত ৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বার আইনজীবী খুনের মামলাতেও ৯ জনকে গ্রেফতার করল চট্টগ্রাম পুলিশ। কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুল করিমকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, অভিযুক্তেরা বেশির ভাগই চট্টগ্রামের সেবক কলোনির বাসিন্দা এবং তাঁরা হিন্দু সম্প্রদায়ের। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চিন্ময়কে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেফতারের অনেক আগেই তাঁকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে চিন্ময় গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে ইসকন। তাঁর নাগরিক অধিকার যাতে খর্ব না হয়, বাংলাদেশের তদারকি সরকারকে সেই বার্তা দিয়েছে তারা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ করতেও বলা হয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা জন্য রবিবার বিশ্ব জুড়ে শান্তিপ্রার্থনার আয়োজন করছে ইসকন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-ও বিবৃতি প্রকাশ করে, বাংলাদেশের সরকারকে শান্তি ফেরাতে অনুরোধ করেছে। ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকিও বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য ভারত বার বার অনুরোধ করেছে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে। বিদেশ মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে দিল্লি উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-সহ প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সে দেশের সরকারের, তা-ও জানিয়েছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। ব্রিটেনের সংসদেও বাংলাদেশের পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের নিন্দা করেছেন ব্রিটেনের কনজ়ারভেটিভ দলের সাংসদ বব ব্ল্যাকম্যান। ব্রিটেনের সংসদে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দির পরিচালনা করে ইসকন। তাদের ধর্মীয় নেতা (প্রাক্তন) বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছেন।” লেবার পার্টি পরিচালিত ব্রিটেন সরকারকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অনুরোধ করেছেন তিনি।
যদিও বাংলাদেশের সরকারের বক্তব্য, সে দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদেই রয়েছেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের ‘হস্তক্ষেপ’ পছন্দ করছে না মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তদারকি সরকারের অবস্থান জানিয়েছেন ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম। রাষ্ট্রপুঞ্জেও বাংলাদেশের তরফে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীন ভাবে ধর্মচর্চার অধিকার রয়েছে। সংখ্যালঘু-সহ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy