Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Rohingya

সমুদ্রের মাঝে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে ফের এক দল রোহিঙ্গাকে পাঠাল বাংলাদেশ সরকার

লাগাতার রোহিঙ্গাদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া খুন ধর্ষণের অভিযোগ উঠতে শুরু করে। কারণ শুধু অত্যাচারই নয়, মায়ানমারে এই রোহিঙ্গা মুসলিমদের কোনও নাগরিক অধিকার ছিল না বলেও অভিযোগ।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর। টুইটার থেকে নেওয়া ছবি।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর। টুইটার থেকে নেওয়া ছবি।

সংবাদ সংস্থা
ঢাকা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:০১
Share: Save:

মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের মাঝে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপে আরও এক দল রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে পাঠিয়ে দিল বাংলাদেশ সরকার। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন বিষয়টি নিয়ে আপত্তি করলেও তা উপেক্ষা করেই ওই রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। যদিও সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে, সোমবার যাঁদের সেখানে পাঠানো হয়েছে তাঁরা নিজেদের ইচ্ছাতেই গিয়েছেন। সরকার শুধু ব্যবস্থাপনায় ছিল। এই মাসের শুরুতে আরও এক দল রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল।

৩০টির বেশি বাসে করে প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উদ্বাস্তু শিবির থেকে ওই দ্বীপের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, এই রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামের কাছে একটি অস্থায়ী শিবিরে এক রাত থাকবেন। তার পর সেখান থেকে মঙ্গলবার তাঁদের নৌবাহিনীর জলযানে করে ওই দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অফিসের তরফে জানানো হয়েছে, দেড় হাজার রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় কক্সবাজার ছেড়ে সেখানে যাচ্ছেন।

এই দ্বীপটির নাম ‘ভাসান চর’। বছর ২০ আগেও এর কোনও অস্তিত্ব ছিল না। তার পর আস্তে আস্তে পলি জমে এই দ্বীপটি তৈরি হয়েছে। বর্ষার সময় নাকি এখনও ডুবে যায় এই দ্বীপটি। তবে সরকারের তরফে বন্যা আটকানোর জন্য বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ভাসান চরে ভারতীয় মু্দ্রায় প্রায় ৮২১ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ করে ঘর বাড়ি হাসপাতাল মসজিদ তৈরি করে দিয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সে বারও মানবাধিকার সংগঠনগুলি আপত্তি তুলেছিল। তাদের দাবি, অনেক রোহিঙ্গাই সেখানে যেতে রাজি নন। তাঁদের জোর করে সেখানে পাঠানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাতিলের আবেদন করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। রাষ্ট্রসংঘও এই উদ্বাস্তু মানুষগুলির পক্ষে সওয়াল করেছে। তবে বাংলাদেশের এক মন্ত্রী ওবাইদুল কাদের দাবি করেছেন, এর আগে যে রোহিঙ্গারা ভাসান চরে গিয়েছেন তাঁরা সেখানকার ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট। এই দ্বীপে মোট ১ লাখ মানুষ বসবাস করতে পারেন। কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং সংবাদমাধ্যম যে ভাবে প্রচার করছে যে, জোর করে এই রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠানো হচ্ছে তা মোটেই ঠিক নয়।

২০১৭ সালের অগস্টের পর বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশ মায়ানমার থেকে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। আর এর পিছনে মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর অত্যাচারের অভিযোগ রয়েছে। লাগাতার রোহিঙ্গাদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া খুন ধর্ষণের অভিযোগ উঠতে শুরু করে। কারণ শুধু অত্যাচারই নয়, মায়ানমারে এই রোহিঙ্গা মুসলিমদের কোনও নাগরিক অধিকার ছিল না বলেও অভিযোগ।

আরও পড়ুন: স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করে পুরসভা থেকে বেতন নেওয়ার অভিযোগ ঘিরে বিক্ষোভ চুঁচুড়ায়

আরও পড়ুন: শুভেন্দুর মিছিলে যাওয়ার পথে বিজেপি কর্মীদের বাসে হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগ

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এই লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের পরে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মায়ানমারের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফেরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু রোহিঙ্গারা আর মায়ানমারে ফিরতে চাইছেন না বলেই জানা গিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের উপর প্রতিদিন এই উদ্বাস্তুদের চাপ বেড়েই চলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rohingya bangladesh Myanmar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE