Advertisement
০৪ মে ২০২৪
taliban

স্কুল নিষিদ্ধ, কিশোরীদের বয়সে বড় পাত্রদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়াই দস্তুর আফগানিস্তানে

ভেড়া, ছাগল আর চার বস্তা চাল নিয়ে জাইনাবকে দেখতে আসে পাত্রপক্ষ। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিয়ে ঠিক হয়ে যায় জাইনাবের। পাত্র ১৭ বছরের বড়। কিশোরী জানাল, কেউ তার মত জিজ্ঞেস করেনি।

এক মাত্র আফগানিস্তানেই মেয়েদের হাই স্কুলে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এক মাত্র আফগানিস্তানেই মেয়েদের হাই স্কুলে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
কাবুল শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২২ ১৪:১৩
Share: Save:

শীত পড়ছে। এখন ওদের স্কুলের শীতপোশাক কেনার কথা ছিল। বদলে বিয়ের পোশাক কিনছে ওই কিশোরীরা। কারণ আফগানিস্তানে ক্ষমতায় এসে মেয়েদের হাই স্কুলে পড়াশোনা নিষিদ্ধ করেছে তালিবান। ভবিষ্যৎ নেই, তাই নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে পরিবার। বয়সে প্রবীণ পাত্রের সঙ্গে।

২০২১ সালের অগস্টের আগে পর্যন্ত স্কুলে যেত জাইনাব। গত বছর ১৫ অগস্ট আফগানিস্তান দখল করে তালিবান। তার পর থেকে স্কুল যাওয়া বন্ধ তার। জাইনাবের কথায়, ‘‘বাবাকে অনেক বলেছি, তালিবানরা আবার স্কুল খুলবে। অনেক কেঁদেছি। কিন্তু বাবা বার বার বলেছে, তালিবানরা কখনওই আর স্কুল খুলবে না। তার থেকে বিয়ে করা ভাল।’’

কয়েকটা ভেড়া, ছাগল আর চার বস্তা চাল নিয়ে জাইনাবকে দেখতে আসে পাত্র পক্ষ। আফগানিস্তানে বিয়ের জন্য মেয়ের পরিবারকে যৌতুক দিতে হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিয়ে ঠিক হয়ে যায় জাইনাবের। পাত্র ১৭ বছরের বড়। কিশোরী জানাল, কেউ তার মত জিজ্ঞেস করেনি।

পৃথিবীতে এক মাত্র আফগানিস্তানেই মেয়েদের হাই স্কুলে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি বাবা-মায়েরা মেয়েদের বিয়ে দেওয়াই উচিত কাজ বলে মনে করছেন। তাতে অন্তত এক জনের খাবার বাঁচবে। তা ছাড়া পাত্রপক্ষ যে ‘পণ’ দেবে, তাতে দিন কয়েক চলে যাবে। জাইনাব জানিয়েছে, সেই ‘পণ’-এর কারণে অত্যাচারিত হতে হচ্ছে শ্বশুরবাড়িতেও। তার কথায়, ‘‘শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছেন, তোমার জন্য এত টাকা খরচ করা হয়েছে, আর তুমি কোনও কাজই পার না।’’

আফগানিস্তানের পশ্চিমে হেরাটের শিক্ষক সংগঠনের প্রধান মহম্মদ মাশালের কথায়, ‘‘অভিভাবকরা মনে করছে, আফগানিস্তানে মেয়েদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। তার থেকে তাদের বিয়ে দিলে অন্তত একটা নতুন জীবন পাবে।’’

গত অগস্টে তালিবান যখন আফগানিস্তানে ক্ষমতায় এসেছিল, তখন মনে করা হয়েছিল নব্বইয়ের দশকের থেকে অনেক বেশি উদার হবে তারা। মেয়েদের শিক্ষা, স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ চাপাবে না। আশা করা হয়েছিল, চলতি বছর মার্চে খুলে যাবে মেয়েদের হাই স্কুল। কিন্তু তাতে বাদ সেধেছেন তালিবান নেতা হিবাতুল্লা আখুন্দজাদা। তালিবান সরকারের তরফে বারবার বলা হচ্ছে, শিগগিরই মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় বিধিনিষেধ উঠে যাবে। যদিও আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ জানেন, এ সব কথা আর কাজে পরিণত হবে না। যদি কখনও বিধিনিষেধ তোলা হয়, তত দিনে বহু ছাত্রীর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

taliban Afghanistan Women Education Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE