জয়ের হাসি নাইজেল ফারাজের মুখে। রয়টার্স
প্রত্যাশামতোই নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন ব্রেক্সিট পার্টি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে সব চেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছে। কিন্তু ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটেনের সঙ্কট এখনও অব্যাহত। নাইজেলের দলের পরেই রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থী (ইইউ) লিবারাল ডেমোক্র্যাট। আর দুই প্রধান দল কনজ়ারভেটিভ এবং লেবার পার্টি থেকে মুখ ফিরিয়েছেন ভোটাররা। এই দুই দল যথাক্রমে পঞ্চম এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ৬৪টি সদস্যপদের মধ্যে ফারাজের পার্টির কাছে গিয়েছে ২৮টি পদ। লিব ডেম-দের কাছে গিয়েছে ১৫টি। লেবার পার্টির হাতে এসেছে ১০টি। গ্রিন পার্টির কাছে সাতটি। এ ক্ষেত্রেও পিছিয়ে কনজ়ারভেটিভ পার্টি, পেয়েছে মাত্র ৩টি সদস্যপদ।
ব্রেক্সিটপন্থী পার্টিগুলি ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। আর যারা ইইউয়ে থাকতে চায় এবং ফের গণভোটের পক্ষে, সেই লিব ডেম ও গ্রিন পার্টির মতো দল পেয়েছে ৪০ শতাংশ ভোট। যা দেখে বোঝা যাচ্ছে, ব্রিটেন এখনও দ্বিধাবিভক্ত। দ্বিতীয় গণভোটের পক্ষে দেশের একটা বড় অংশই রয়েছে।
ব্রেক্সিট পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ অবশ্য বলছেন, সাধারণ নির্বাচনে তিনি কনজ়ারভেটিভ এবং লেবার পার্টিকে টক্কর দেওয়ার জন্য তৈরি। তাঁর কথায়, ‘‘দু’টি দলই আমাদের বিশ্রী ভাবে ঠকিয়েছে। তারা প্রতিশ্রুতি রাখেনি। আমরা নাটকীয় ভাবে সবাইকে পিছনে ফেলে উঠে এসেছি।’’ লিবারাল ডেমোক্র্যাট দলের ডেপুটি নেতা জো সুইনসন বলেছেন, ‘‘যাঁরা ব্রেক্সিট রুখতে চান, তাঁদের আশা জাগাবে এই ফল। তাঁদের মনে হবে, লড়াই না করে হাল ছেড়ে দেব না। ব্রেক্সিট নিয়ে আর একটা গণভোট হলে সব জট কেটে যাবে।’’
আর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই ফল থেকে কনজ়ারভেটিভ দলে এখন একটাই ভাবনা জোরদার হয়েছে— টেরেসা মে-র ইস্তফার পরে যিনি দলের প্রধান হিসেবে আসবেন, তাঁকে আরও কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী হতে হবে। দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা বরিস জনসন বলছেন, ‘‘ব্রেক্সিট বাস্তবায়িত না হওয়ায় মানুষ ভোট দিয়ে দু’টি প্রধান দলকে কড়া বার্তা দিয়েছেন।’’
লেবারের হয়ে দাঁড়ালেও কলকাতার ছেলে এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী রোহীত দাশগুপ্ত দাগ কাটতে পারেননি। লেবার পার্টিতেও এখন দ্বিতীয় গণভোটের হাওয়া। পার্টির অন্দরে দাবি উঠছে, ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গণভোটের দাবি ইস্তাহারে স্পষ্ট উল্লেখ করা হোক। ইইউয়ে থেকে যাওয়ার জন্য প্রচার চালানোরও কথা হচ্ছে দলে। দল মনে করছে, ব্রেক্সিট নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট না করায় লেবার পার্টির বিরুদ্ধে গিয়েছে অনেক ভোট। লেবার নেতা জেরেমি করবিনের এলাকা উত্তর লন্ডনের ইসলিংটনে লেবার পার্টির বদলে লোকে ভোট দিয়েছেন লিব ডেম-দের। করবিন বলছেন, ‘‘মানুষের কাছে যেতে হবে আমাদের।’’
গত তিন দিনে নির্বাচনে ইইউয়ের ২৮টি সদস্য দেশ অংশ নিয়েছে। জমি হারিয়েছে মধ্য-দক্ষিণ এবং মধ্য-বাম গোষ্ঠীগুলি। লিবারাল, গ্রিন পার্টি আর জাতীয়তাবাদী দলগুলিকে সমর্থন করেছেন মানুষ। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডে ফল ঘোষণা এখনও বাকি। বিশেষজ্ঞরা যা বুঝছেন, তাতে লেবার পার্টিকে লোকে পছন্দ করেনি স্পষ্ট অবস্থান না নেওয়ায়। কনজ়ারভেটিভ পার্টি গুরুত্ব হারিয়েছে ২৯ মার্চ ব্রেক্সিট সম্পন্ন না হওয়ায়।
ইইউয়ের বাকি দেশে দক্ষিণপন্থী দলগুলি কিছুটা গুরুত্ব পেয়েছে। জার্মানিতে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মধ্যপন্থী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট পার্টি এবং ফ্রান্সে ইমানুয়েল মাকরঁ-র রেনেসাঁস জোট হেরে গিয়েছে অতি-দক্ষিণ মারিন ল্য পেন-এর ন্যাশনাল র্যালি-র কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy