Advertisement
১৬ জুন ২০২৪

চিন চায় না, মনে থাকুক ‘ট্যাঙ্ক ম্যান’

পরনে সাদা জামা, কালো প্যান্ট। দু’হাতে ঝোলানো ব্যাগ। ঠিক যেন বাজার করে ফিরছেন ভদ্রলোক। সামনে পর-পর ট্যাঙ্ক। এগিয়ে আসছে। তবু কী বেপরোয়া চলন তাঁর! ২৪ ঘণ্টাও পেরোয়নি প্রতিবাদী পড়ুয়াদের রক্তে ধুয়ে গিয়েছে তিয়েনআনমেন স্কোয়ার

প্রতিবাদী: তিরিশ বছর আগে তিয়েনআনমেনের সেই ‘ট্যাঙ্ক ম্যান’।

প্রতিবাদী: তিরিশ বছর আগে তিয়েনআনমেনের সেই ‘ট্যাঙ্ক ম্যান’।

সংবাদ সংস্থা
বেজিং শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৯ ০১:২৬
Share: Save:

পরনে সাদা জামা, কালো প্যান্ট। দু’হাতে ঝোলানো ব্যাগ। ঠিক যেন বাজার করে ফিরছেন ভদ্রলোক। সামনে পর-পর ট্যাঙ্ক। এগিয়ে আসছে। তবু কী বেপরোয়া চলন তাঁর! ২৪ ঘণ্টাও পেরোয়নি প্রতিবাদী পড়ুয়াদের রক্তে ধুয়ে গিয়েছে তিয়েনআনমেন স্কোয়ার। ১৯৮৯-এর ৫ জুন, সক্কাল-সক্কাল তবু সেখানেই বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন ‘ট্যাঙ্ক ম্যান’। যেন সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন সেই সময়কার চিনা কমিউনিস্ট সরকারের সেনাকে। একা দাঁড়িয়ে রুখে দিতে চাইলেন ট্যাঙ্কের গতিপথ।
কিন্তু প্রশাসনের তরফে দু’জন এসে নিমেষে সাফ করে দিল রাস্তা। আশপাশের হোটেলের ব্যালকনি থেকে তখনও ক্যামেরা তাক করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার একটা বড় অংশ। তিয়েনআনমেনের তিরিশ বছর পূর্তিতে আজ ফের বেজিংয়ে ভিড় জমিয়েছে সংবাদমাধ্যম। অথচ দেখা গেল, ‘ট্যাঙ্ক ম্যান’-এর সেই দুনিয়া-কাঁপানো ছবি চিনাদের একটা বড় অংশ চিনতেই পারছেন না! কেউ বললেন— ‘কে এই লোকটা? এগুলো কি চিনা ট্যাঙ্ক, না বিদেশি?’ সাংবাদিকের ল্যাপটপে ছবিটা দেখে কেউ কেউ স্পষ্ট চমকে গেলেন, কিন্তু মুখ খুললেন না। শেষমেষ সরাসরি হুমকি এল পথচলতি এক নাগরিকের বয়ানেই— ‘কোন সাহসে আপনি এই ছবিটা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এখানে?’
‘ট্যাঙ্ক ম্যান’-কে স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে চাইছে চিনা সরকারই। গণতন্ত্রের দাবিতে সাত সপ্তাহ ধরে যাঁরা তিয়েনআনমেন স্কোয়ার দখল করে গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন, ১৯৮৯-এর ৪ জুন রাতের অন্ধকারে সেই বিপুল সংখ্যক ছাত্রের উপরে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল চিনা সেনা। প্রাণ গিয়েছিল ছাত্র ও সাধারণ নাগরিক মিলিয়ে হাজারখানেকের। তার পর তিরিশ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত কোনও কমিউনিস্ট নেতা এ নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেননি। বরং আজও তা গলার কাঁটাই। তাই তিয়েনআনমেন নিয়ে চিনা ইন্টারনেটে ছবি-শব্দ কিছুই নেই। কুখ্যাত সেই স্কোয়ারে আজ বিদেশি সাংবাদিকের প্রবেশ নিষেধ। ভোর ৫টায় রোজকার মতো পতাকা উত্তোলন হয়েছে, কিন্তু উৎসাহী দেশি-বিদেশি দর্শকদের কাছেও ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি।
সে দিনের গণহত্যা এবং ধরপাকড়ের সংখ্যা নিয়ে এ বার মুখ খুলুক চিন, দুঃখপ্রকাশ করুক— চাইছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আজই এ নিয়ে বিশেষ বিবৃতি দিয়েছে ইইউ। মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়োর আর্জি, ‘‘চিনা প্রশাসন স্বীকার করুক, সে দিন ঠিক কী হয়েছিল। এতেই প্রমাণ হবে মানবাধিকার এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষাকে বেজিং কতটা শ্রদ্ধার চোখে দেখে।’’
খাস বেজিংয়ে প্রশাসনের মুখে কুলুপ। কিন্তু চোখ-কান খোলা সর্বত্র। স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের আমলে আরও কড়া হয়েছে নজরদারি। বিশেষত স্কোয়ার লাগোয়া রাস্তায়-রাস্তায় বসানো হয়েছে দেদার নজরদার-ক্যামেরা। কাল থেকে চলছে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড, চেকপোস্ট করে ভিসা যাচাই। অ্যাপ-ক্যাবের এক চিনা চালক বললেন, ‘‘আমার জন্ম ওই বছরেই। কিছুই জানি না, এটা কি হতে পারে! কিন্তু কী বলব? গাড়িতে যা বলব, সব রেকর্ড হবে। তবে এখন চিন অনেক বদলেছে। এখন অর্থই সব। পকেটের জোর থাকলে আপনি রাজা, না হলে মুখ বন্ধ রাখুন— এটাই চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

China Politics India Tiananmen's tank man
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE