লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর সীমান্ত সঙ্ঘাত নিয়ে আলোচনার টেবলে বসেছিল ভারত ও চিনের সেনা। কিন্তু তার মাঝে আচমকাই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নেওয়ায়, ঘটনার দায় ভারতের উপরেই চাপাচ্ছে চিন। ঘটনার পর, মঙ্গলবার চিনের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘‘ভারতীয় বাহিনী সীমান্ত পেরিয়েছিল এবং চিনা সেনার উপর প্ররোচনামূলক ভাবে হামলা চালিয়েছিল।’’ বেজিংয়ের মতে, ‘‘ভারতীয় সেনার ওই পদক্ষেপের কড়া প্রতিবাদ করে চিন।’’ একইসঙ্গে ওই কাণ্ডের পর নয়াদিল্লি যেন ‘একতরফা ভাবে’ কোনও পদক্ষেপ না করে সেই হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে বেজিংয়ের তরফে।
সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে উত্তেজনা যখন প্রশমনের প্রক্রিয়া চলছে, ঠিক তখনই উত্তেজনা পারদ চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল। দু’দেশের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সীমান্তে এমন ঘটনা শেষ বার দেখা গিয়েছে ১৯৭৫ সালে, অরুণাচল প্রদেশে। ৪৫ বছর পর সীমান্তে এমন হিংসাত্মক ঘটনা নিয়ে কার্যত অস্বস্তিতে চিন। তাই ঘটনার পর পরই দায় ঝেড়ে ফেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বেজিং। চিনা বিদেশমন্ত্রকের তরফে যে বিবৃতি জারি করা হয়েছে তাতে ভারতীয় সেনার ঘাড়েই ওই ঘটনার যাবতীয় দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস বলছে, ‘‘সোমবার গলওয়ান উপত্যকায় চিন ও ভারতীয় সেনার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’’ এ-ও বলা হয়েছে, ‘‘ভারতীয় সেনা সীমান্ত পেরিয়ে বেআইনি কার্যকলাপ চালাচ্ছিল এবং চিনা বাহিনীর উপর প্ররোচনামূলক আক্রমণ চালায়।’’ বেজিংয়ের মতে, ভারতীয় বাহিনীর পদক্ষেপের প্রতিবাদ করেছে চিনা বাহিনী।
সোমবার দু’পক্ষের ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছিল। তার পরেই এই সংঘর্ষ। এ দিন দুপুরে ভারতীয় সেনার তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘গলওয়ান উপত্যকায় উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা চলাকালীনই গতকাল রাতে হঠাৎ সংঘর্ষ বাধে। তাতেই ভারতীয় সেনার এক অফিসার এবং দুই জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে।’’ সংঘর্ষের হতাহত হয়েছে চিনা সেনাও। গ্লোবাল টাইমসের তরফে টুইটে দাবি করা হয়েছে, সংঘর্ষে ৫ চিনা সেনার মৃত্যু হয়েছে এবং ১১ জন আহত হয়েছে।
Reports say 5 PLA soldiers were killed and 11 were injured at LAC China-India border yesterday.
— Wang Wenwen (@WenwenWang1127) June 16, 2020
আরও পড়ুন: ভারত-চিন সংঘর্ষ লাদাখে, হত ৩ ভারতীয় সেনা, হতাহত ওপক্ষেও
চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিঝিয়ান বলছেন, সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমন করতে দু’পক্ষ কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ে আলোচনা চালাচ্ছিল। কিন্তু এ দিনের সংঘর্ষের দায় ভারতীয় সেনার ঘাড়েই চাপিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে নয়াদিল্লিকে হুঁশিয়ারির দিয়েই ঝাউ বলেন, ভারতীয় বাহিনী যেন সংযত থাকে। ঝাওয়ের মতে, ‘‘ভারতীয় বাহিনী সীমান্ত পেরোলে বা একতরফা ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নিলে সীমান্ত পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে।’’
আরও পড়ুন: আমাদের ছায়াপথেই অন্তত ৩৬টি ভিনগ্রহী সভ্যতা! দাবি বিজ্ঞানীদের
চিনা বিদেশমন্ত্রক আরও জানিয়েছে, আলোচনার মাধ্যমেই দ্বিপাক্ষিক ইস্যুর সমাধান এবং সীমান্তে শান্তি রক্ষার রাজি হয়েছে দুই দেশই।