Advertisement
E-Paper

সম্পর্ক সহজে চিনেরও মন্ত্র আতিথেয়তা

অতিথি দেব ভব! ভারতের পর্যটন বিভাগের প্রচার কতটা যথাযথ, গত সেপ্টেম্বরে সফরে এসে বুঝেছিলেন শি চিনফিং। রাজধানী দিল্লি নয়, নিজের রাজ্য গুজরাতে চিনের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। আজ যেন সেই আতিথেয়তাই ফিরিয়ে আনলেন চিনফিং, মোদীকে নিজের প্রদেশ শান জি-তে স্বাগত জানিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০৩:৪৫
ছুঁয়ে দেখছেন ইতিহাস। টেরাকোটা ওয়ারিয়র্স জাদুঘরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার চিনের শিয়ান শহরে।

ছুঁয়ে দেখছেন ইতিহাস। টেরাকোটা ওয়ারিয়র্স জাদুঘরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার চিনের শিয়ান শহরে।

অতিথি দেব ভব! ভারতের পর্যটন বিভাগের প্রচার কতটা যথাযথ, গত সেপ্টেম্বরে সফরে এসে বুঝেছিলেন শি চিনফিং। রাজধানী দিল্লি নয়, নিজের রাজ্য গুজরাতে চিনের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। আজ যেন সেই আতিথেয়তাই ফিরিয়ে আনলেন চিনফিং, মোদীকে নিজের প্রদেশ শান জি-তে স্বাগত জানিয়ে। আর এই প্রোটোকল ভাঙার ফলেই সহজ হয়ে গেল দু’পক্ষের আলোচনার পরিবেশ। এর পর চিনফিংয়ের সঙ্গে দেড় ঘণ্টার বৈঠকে মোদী তুলে আনলেন এমনকী পাক অধিকৃত কাশ্মীরে চিনা সক্রিয়তার প্রসঙ্গও।

দু’দেশের মধ্যে বহু বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। সীমান্ত বিতর্ক থেকে বাণিজ্য বৈষম্য বা ভারত মহাসাগরে চিনা সক্রিয়তা। আজকের বৈঠকে এই সব দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাকে আড়াল না করেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ‘আস্থা’ বাড়ানোর পদক্ষেপ করলেন মোদী।

চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে মোদীর এ দিন দেড় ঘণ্টা বৈঠক হয়। সেখানে কোনও প্রসঙ্গই প্রধানমন্ত্রী কার্পেটের তলায় লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেননি। বরং স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে চিনের করিডর তৈরি করা নিয়ে নয়াদিল্লির অসন্তোষের কথা। এ কথাও বলেছেন, যখন গোটা বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতীয় কর্মীদের দক্ষতা স্বীকৃত, তখনও বেজিং তার দরজা বন্ধ করেই রেখেছে।

এই বৈষম্যগুলি কাটিয়ে কী ভাবে আগামী দিনের পথ নির্দেশিকা তৈরি করা যায়, তা নিয়েই আজ আলোচনা হয়েছে দুই দেশের শীর্ষ নেতার মধ্যে। বৈঠকের পর ভারতের বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘‘দু’দেশের মধ্যে কী ভাবে আস্থা বাড়ানো যায়, বিভিন্ন ক্ষেত্রের বৈষম্য দূর করে ঐকমত্য তৈরি করা যায়, আলোচনা হয়েছে সে সব নিয়েই। গুরুত্ব পেয়েছে ভারত-চিন বাণিজ্য বৈষম্যও।’’ তিনি আরও জানান, এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো নিয়েও কথা হয়েছে।

কূটনীতিকদের মতে, বিষয়টি এমন নয় যে, মোদী-চিনপিং বৈঠকের পর সর্বার্থে ইতিবাচক পথে হাঁটতে শুরু করবে ভারত এবং চিনের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক যে অত্যন্ত জটিল, সেটা আজ খোদ বিদেশসচিবই মেনে নিয়েছেন। আশু সমাধানের আশাও করছে না সাউথ ব্লক। তবে একই সঙ্গে মনে করা হচ্ছে, আর্থিক ও সামরিক ভাবে এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র চিনের সঙ্গে নিরন্তর আলোচনা চালিয়ে যাওয়াটাও (যেটা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না অন্য এক প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে) অত্যন্ত জরুরি।

কিন্তু চিন কেন ভারতের সঙ্গে আলোচনা সফল ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়? রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এর পিছনে মূলত দু’টি কারণ। প্রথমত, মোদীর সঙ্গে চিনপিং তথা চিনা নেতৃত্বের ব্যক্তিগত রসায়ন। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় আমেরিকা যখন তাঁকে ব্রাত্য করে রেখেছিল, সেই সময় মোদীর জন্য লাল কার্পেট বিছিয়ে দেয় চিন। ক্ষমতায় আসার পরই সেই সৌজন্য ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সক্রিয় থেকেছেন মোদী। সেপ্টেম্বরে চিনা প্রেসিডেন্টের ভারত সফরে সেই পারস্পরিক ঐক্যের ছবিটাই ফুটে উঠেছিল। দ্বিতীয়ত, ভারতেরও যেমন বাণিজ্য এবং সীমান্ত নিরাপত্তার কারণে বেজিংকে দরকার, এই মুহূর্তে তেমনই চিনেরও প্রয়োজন ভারতের বন্ধুত্ব। চিনে আর্থিক সংস্কারের যে উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা চিনফিং করেছেন, সেখানে ভারতের বিশাল বাজার ধরা তাঁর অগ্রাধিকারের মধ্যে পরে। ঘরোয়া পরিকাঠামোর উপর চাপ আর না বাড়িয়ে, মৌলিক কিছু পণ্য ভারতে উৎপাদনও করতে চায় বেজিং। অন্য দিকে, ভারত-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের মধ্যে যে অক্ষ তৈরি হচ্ছে, তা অস্বস্তিতে রেখেছে চিনকে। তাই কূটনৈতিক ভাবে ভারতকে কাছে টানা বেজিংয়ের কাছে কিছুটা প্রয়োজনীয়ও বটে।

দু’দেশের এই সমীকরণ তৈরিতে আজ চিনফিংয়ের প্রোটোকল ভাঙা বা আতিথেয়তা অনুঘটকের কাজ করেছে।

আজ সকালে শিয়ান পৌঁছে মোদী প্রথমে যান ‘টেরাকোটা ওয়ারিয়র্স মিউজিয়াম’-এ। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পাওয়া এই জাদুঘরে রয়েছে চিনের প্রথম রাজা কিন শি হুয়াংয়ের সেনাবাহিনীর সদস্যদের টেরাকোটার বিশাল বিশাল মূর্তি। প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে ছিলেন মোদী। বেশ কয়েকটি মূর্তির সঙ্গে ছবিও তোলেন। আজ সেই ছবি ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে টুইটারে পোস্ট করা হয়।

সেখান থেকে মোদী যান ‘ডা শিং শ্যান’ মন্দিরে। বৌদ্ধ ওই মন্দিরে প্রার্থনার পরে বেশ কিছু ক্ষণ সময় কাটান সেখানে। মন্দির থেকে বেরিয়ে মোদীর কনভয় যখন সবে রওনা হয়েছে, রাস্তার ধারে তখন স্থানীয় মানুষের ভি়ড়। পথে নেমে উৎসুক জনতার সঙ্গে হাত মেলান মোদী। চিনের সাধারণ মানুষের মুখে তখন ‘মোদী’ ‘মোদী’ ধ্বনি। আজই চিনের সোশ্যাল (যাকে অনেকে চিনা টুইটার বলেন) মিডিয়া উইবোতে হাতেখড়ি হয়েছে মোদীর। ইতিমধ্যেই মোদীর ফলোয়ারের সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়েছে। এই সফরেই মোদীর সঙ্গে চিনে এসেছেন প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার। চিনের সরকারি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে প্রসারভারতীর একটি মউ স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আজ সন্ধ্যায় মোদীর জন্য বিশেষ নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট চিনফিং। তার আগে টং সাম্রাজ্যের কায়দায় স্বাগত জানানো হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে। অনুষ্ঠানে চিনা নাচগান তো ছিলই, ছিল ভারতীয় ছোঁয়াও। ওই অনুষ্ঠানেই হিন্দি ছবির গানের সঙ্গে নাচেন চিনা তরুণীরা।


চিনের শিয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে স্বাগত জানাচ্ছে এক খুদে। বৃহস্পতিবার।

নৈশভোজে মোদীর কথা মাথায় রেখে আয়োজন করা হয় নিরামিষ চিনা খাবারের। শুরুতে ছিল সাওয়ার অ্যান্ড স্পাইসি স্যুপ উইথ ফ্রায়েড ডাও। তার পর অ্যাসোর্টেড ভেজিটেবলস উইথ প্যানকেক অ্যান্ড রেড বিন রাইস, বিন কার্ড উইথ মাশরুম, ওয়াটার চেস্টনাট ইন বিন সস, ব্রেস্ড অ্যাসপারাগাস অ্যান্ড বাম্বু ফাঙ্গাস উইথ লোটাস রুট, নুডল ডাম্পলিং অ্যান্ড প্যানকেক।

আতিথেয়তার কথা যে ভোলেননি, সেটা চিনফিং আজ মোদীকে জানিয়ে দেন। বলেন, ‘‘আপনার শহরে আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন আপনি। আমার শহরে আপনাকে স্বাগত জানিয়ে আমি ধন্য।’’ মোদী হিন্দিতে তাঁকে বলেন, ‘‘যাঁদের প্রতিনিধি হয়ে আমি এখানে এসেছি, এই অভ্যর্থনা সেই ১২৫ কোটি ভারতীয়র কাছে বড় সম্মানের।’’

ছবি: পিটিআই।

ভারতের মানচিত্রে ভুল

মোদী কিছু ক্ষণ আগে পৌঁছেছেন চিনের শিয়ান শহরে। সেই নিয়ে একটি অনুষ্ঠান প্রচার করতে গিয়ে চিনা সেন্ট্রাল টিভিতে ভারতের যে মানচিত্র দেখানো হয়, তাতে বিতর্ক বাধে। মানচিত্রে অরুণাচল প্রদেশ এবং জম্মু-কাশ্মীর নেই! অনুষ্ঠানে পিছনের পর্দায় মানচিত্রটি দেখা যাচ্ছিল। ঘটনাটি জানাজানি হতেই সফররত ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে হইচই শুরু হয়ে যায়। যদিও মোদীর সঙ্গে সফররত সরকারি দলের তরফে এ নিয়ে কিছু বলা হয়নি। চিনা সংবাদিকেরা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় জানান, সে দেশে এটাই ভারতের মানচিত্র হিসেবে পরিচিত। এই মানচিত্রে অরুণাচল প্রদেশকে দক্ষিণ তিব্বত নামে চিনের অঙ্গ হিসেবে দেখানো হয়। এই ঘটনা তাই চিনের কাছে অস্বাভাবিক কিছু নয়।

Xi Jinping china hospitality china cordiality modi jinping talk indo china bi lateral talks modi china visit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy