Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নির্বাচন হোক ‘বিগ মানি’ ছাড়াই, চাইছে বেগুসরাই, বলছেন বার্নি-ও

এ দেশে গত ১০ বছরে ‘বিগ মানি’র প্রভাব ক্রমশ বেড়েছে।

২০১৮-তে ভারতে ঘোষিত ‘ইলেক্টোরাল বন্ড’-এর সঙ্গে এই সুপার প্যাকের কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। ছবি: এএফপি।

২০১৮-তে ভারতে ঘোষিত ‘ইলেক্টোরাল বন্ড’-এর সঙ্গে এই সুপার প্যাকের কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। ছবি: এএফপি।

নন্দিনী মুখোপাধ্যায়
বে এরিয়া, ক্যালিফর্নিয়া শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:৪২
Share: Save:

ভারতবর্ষ এবং আমেরিকা, দু’টি দেশেই গণতন্ত্র। দু’টি দেশেই মানুষ ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করেন এবং নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে সরকার গঠিত হয়। দু’টি দেশের ভোট পদ্ধতিতে বিস্তর ফারাক থাকলেও একটি জায়গায় মিল চোখে পড়ার মতো। তা হল, নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে প্রচারের কাজে অঢেল টাকা ব্যয়। আমেরিকায় যাকে বলা হয় ‘বিগ মানি’।

এ দেশে গত ১০ বছরে ‘বিগ মানি’র প্রভাব ক্রমশ বেড়েছে। ভোটে দাঁড়ানো, সংগঠন করা, বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সব কিছু এখন তুমুল খরচ সাপেক্ষ। ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানো প্রার্থীরা প্রায় সব মিলিয়ে ৬৪০ কোটি ডলার খরচ করেছিলেন। এত বিশাল অঙ্কের টাকা কোনো সাধারণ প্রার্থীর পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব। বিশেষ করে আমেরিকার ফেডারেল ইলেকশন কমিশন যেখানে ঠিক করে দিয়েছে যে এক জন সাধারণ নাগরিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কোনও প্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ ২৭০০ ডলার পর্যন্ত অনুদান দিতে পারবেন।

তা হলে উপায়? এখানেই ‘পলিটিকাল অ্যাকশন কমিটি’ বা ‘প্যাক’-এর গুরুত্ব। গত ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এই প্যাক। তারা সরাসরি প্রাথীর নির্বাচন তহবিলের জন্য টাকা জোগাড় করতে বা তহবিলে টাকা ঢালতে পারে। একটাই বাধ্যবাধকতা, ডোনার বা দাতার তালিকা প্রকাশ করতে হবে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এই প্যাক থেকে আবার ‘সুপার প্যাক’-এর জন্ম। তারা কোনও প্রার্থীর জন্য যত খুশি টাকা অনুদান জোগাড় করতে পারে এবং সেই প্রার্থীকে অনুদান দিতে পারে। তাদেরও ডোনার তালিকা প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক। তবে সেই টাকা তারা সরাসরি প্রার্থীর নির্বাচন তহবিলে দিতে পারে না। তাদের প্রার্থীর থেকে একটা দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। এই সুপার প্যাক ব্যবস্থা চালু হয়েছিল ২০১০ সালে।

২০১৮-তে ভারতে ঘোষিত ‘ইলেক্টোরাল বন্ড’-এর সঙ্গে এই সুপার প্যাকের কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। এই বন্ড ব্যবহার করে ভারতীয় দাতারা এক হাজার, দশ হাজার, এক লক্ষ, এমনকি এক কোটি টাকাও দিতে পারেন। ব্যাঙ্ক এই ‘ডোনার’দের সম্পর্কে জানলেও প্রার্থী নিজে জানতে পারবেন না যে, কে তাঁকে টাকা দিচ্ছেন।

ভারতবর্ষ হোক বা আমেরিকা, আমরা সাধারণ মানুষ সর্বক্ষণ নির্বাচন পদ্ধতিতে কারা টাকা ঢালছে তাই নিয়ে সন্দিগ্ধ থাকি। কারণ এর উপর সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের অনেক কিছুই নির্ভর করে। খুব সহজ একটা উদাহরণ দিই।

আমেরিকার ৯০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, বন্দুকের মালিকানা দেওয়ার আগে যে কারও ‘ইউনিভার্সাল ব্যাকগ্রাউন্ড চেক’ প্রয়োজন। অর্থাৎ, পুলিশ-প্রশাসন খতিয়ে দেখে নিক, সেই মানুষটি সত্যিই বন্দুক রাখার উপযুক্ত কি না। কিন্তু যে দলই ক্ষমতায় আসুক, রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট, কেউই এই নিয়ে কোনও আইন আনতে পারছে না। কারণ এ দেশে বন্দুক-নির্মাতা সংস্থাদের লবি অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং তারা সুপার প্যাকের মাধ্যমে নির্বাচনে বিপুল টাকা ঢালে।

তবে সম্প্রতি কিছু আশার আলো দেখা যাচ্ছে। আমেরিকায় অনেক প্রার্থী আজকাল স্পষ্ট জানাচ্ছেন যে, তাঁরা সুপার প্যাকের টাকা নেবেন না। ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের বার্নি স্যান্ডার্স সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রচুর টাকা তুলে দেখিয়ে দিয়েছিলেন, ‘বিগ মানি’র সাহায্য না নিয়েও নির্বাচন লড়া যায়।

কিছু দিন আগেই খবরে পড়লাম, লোকসভা নির্বাচনে বেগুসরাইয়ের প্রার্থী, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারও ‘ক্রাউডফান্ডিং’ অর্থাৎ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রচারের জন্য ৩০ লক্ষেরও বেশি টাকা তুলে সাড়া ফেলে দিয়েছেন।

লেখক প্রযুক্তিবিদ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Big Money Indian Election Crowdfunding
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE