Advertisement
E-Paper

গুদাম ঘরে বিস্ফোরণ, চিনে মৃত ৫০

রাত সওয়া এগারোটা নাগাদ আচমকাই দুলতে শুরু করেছিল ষোলো তলার বাড়িটা। জানলার কাচ ঝনঝনিয়ে ভেঙে পড়তে শুরু করেছিল। দরজাও কাঁপছিল সমানে। হঠাৎ করে চলে গিয়েছিল বিদ্যুৎও। ভাফা অ্যান্ডারসন ভেবেছিলেন, ভূমিকম্প শুরু হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০১
ভয়াবহ আগুনে ভস্মীভূত গোটা পার্কিং লট। চিনের তিয়ানজিনে। ছবি: এ পি।

ভয়াবহ আগুনে ভস্মীভূত গোটা পার্কিং লট। চিনের তিয়ানজিনে। ছবি: এ পি।

রাত সওয়া এগারোটা নাগাদ আচমকাই দুলতে শুরু করেছিল ষোলো তলার বাড়িটা। জানলার কাচ ঝনঝনিয়ে ভেঙে পড়তে শুরু করেছিল। দরজাও কাঁপছিল সমানে। হঠাৎ করে চলে গিয়েছিল বিদ্যুৎও। ভাফা অ্যান্ডারসন ভেবেছিলেন, ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। আতঙ্কে অত রাতে ফ্ল্যাট ছেড়ে বেরিয়েও এসেছিলেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ওই শিক্ষক। ভাফার মতোই অবস্থা তখন তাঁর প্রতিবেশীদেরও। বাইরে বেরিয়ে তাঁরা দেখেন, ভূমিকম্প নয়। বিস্ফোরণ। আগুনের গোলায় তখন ঢেকে গিয়েছে গোটা শহরের রাতের আকাশটা।

গত কাল উত্তর চিনের বন্দর শহর তিয়ানজিনের একটি গুদাম ঘরে বিস্ফোরণের জেরে মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। আহত সাতশোরও বেশি মানুষ। পুলিশ জানিয়েছে, ক্ষতিকারক রাসায়নিক মজুত রাখা হতো ওই গুদাম ঘরে। আর তার জেরেই বিস্ফোরণ এত ভয়াবহ আকার নেয়। আগুন নেভাতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন দমকলের ২১ জন কর্মী। সরকারি সংবাদ সংস্থা জিনহুয়া জানাচ্ছে, মৃতদের মধ্যেও রয়েছেন দমকল বিভাগের ১২ জন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৭২ জনের অবস্থা সঙ্কটজনক। ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

ঠিক কী হয়েছিল কাল রাতে?

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, রাত এগারোটা কুড়িতে আচমকাই বিকট শব্দ শোনা যায় ডংজিয়াং পোর্ট রুই হাই ইন্টারন্যাশনাল লজিস্টিক সংস্থার ওই গুদাম ঘর থেকে। মূলত ক্ষতিকারক রাসায়নিক আমদানি-রফতানির কাজ করে ওই সংস্থা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে ওই ঘরে। তার পরই ভয়ানক বিস্ফোরণ। পর পর দু’বার। তার পর আরও কয়েকটা। পুলিশ জানিয়েছে, প্রথম বিস্ফোরণের মাত্রাই ছিল তিন রিখটার স্কেল ভূমিকম্পের সমান। উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে সেই দৃশ্য। পরেরটি ছিল আরও বেশি শক্তিশালী। তার পরেরগুলো অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী ছিল। কী ভাবে ওই গুদাম ঘরে আগুন লাগলো, তা নিয়ে এখনও ধন্দে পুলিশ। কিন্তু তারা জানিয়েছে, কর্তব্যে গাফিলতির জন্য ইতিমধ্যেই ওই সংস্থার শীর্ষ স্থানীয় বেশ কিছু কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বেজিং থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দূরে তিয়ানজিন শহর। শুধু রুই হাইয়েরই নয়, অনেক সংস্থারই গুদাম ঘর রয়েছে ওই শহরে। স্থানীয় দমকল বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, বিস্ফোরণের খবর পাওয়া মাত্রই মোট ১৪৩টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়। এক হাজার দমকল কর্মী আজ সকালের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে এখনও তাদের অনেক কর্মীর খোঁজ নেই বলে জানিয়েছে তিয়ানজিন দমকল বিভাগ। এক দমকল কর্মী জানিয়েছেন, যে হেতু গুদাম ঘরটি ক্ষতিকারক রাসায়নিকে ঠাসা ছিল, তাই জল দিয়ে ওই ভয়ঙ্কর আগুন নেভানো যায়নি। মূলত বালির সাহায্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। তবে শুধু দমকলই নয়, বিস্ফোরণের খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পরমাণু বিষেশজ্ঞদের একটি দলও।

আগুন লাগার পর পরই ওই এলাকা থেকে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। ওই গুদাম ঘরের পাশের বিস্তীর্ণ এলাকার বহুতল, অফিস বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপের চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে। ঘটনাস্থলের পাশেই এক পার্কিং লটে সার দিয়ে দাঁড় করানো গাড়িগুলারও এখন কঙ্কালসার দশা।

বিস্ফোরণ স্থল থেকে চার কিলোমিটার দূরে থাকেন লিউ ইউ। ২৫ বছরের ওই তরুণী জানিয়েছেন, প্রথমটায় তিনি ভেবেছিলেন পরমাণু হামলা হয়েছে তাঁদের দেশে। ‘‘আকাশ লাল ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল। বিকট শব্দ আর গন্ধে চারদিক তখন ভরে গিয়েছে। আমি তো ভাবলাম পরমাণু বোমা ফেটেছে,’’ আতঙ্কিত স্বরে বললেন লিউ। একই অভিজ্ঞতা জিপিং দম্পতিরও। বিস্ফোরণ স্থলের ঠিক পাশেই একটি বাড়িতে থাকেন কিয়ান জিপিং। হঠাৎই বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। স্ত্রীকে নিয়ে বেরোতে চেয়েছিলেন কিয়ান। কিন্তু বাড়িটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। পরে ধ্বংসস্তূপ থেকে তাঁদের উদ্ধার করেন আশপাশের লোকজন। জীবন ফিরে পেয়ে কিয়ান বলেছেন, ‘‘কাল রাতে মনে হয়েছিল সব শেষ হয়ে গেল।’’

কালকের বিস্ফোরণের জেরে বন্ধ রাখা হয়েছে চিনের সুপার কম্পিউটার ব্যবস্থা। তিয়ানজিনেই অবস্থিত সুপার কম্পিউটারের সেন্টার। কালকের বিস্ফোরণের অভিঘাতে সেই বাড়িও কেঁপে ওঠে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করতেই বিশ্বের অন্যতম দ্রুত গতির এই কম্পিউটার ব্যবস্থাকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

আজ সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণ হওয়ার পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায় রাসায়নিক বিশেষজ্ঞের একটি দল। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে আপাতত উদ্ধার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। গোটা এলাকায় ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে‌, বাতাসে কতটা বিষাক্ত গ্যাস মিশেছে, তা জরিপ করতেই এখন কাজ করছে ওই দল।

Massive Blast Chinese Port Death Toll environmental beijing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy