E-Paper

ইরানে যুদ্ধ থামানোর কৃতিত্ব নিয়ে ট্রাম্পের মুখে হিরোশিমা

ট্রাম্পের যুক্তি, হিরোশিমা-নাগাসাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সমাপ্তি টেনেছিল। ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে আক্রমণও ইরান যুদ্ধ শেষ করেছে। এ বারে গাজ়াতেও সংঘর্ষবিরতির দেরি নেই বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৫ ০৮:৫৯
ইরানের তিনটি পরমাণু ক্ষেত্রে আমেরিকা আঘাত করেছিল।

ইরানের তিনটি পরমাণু ক্ষেত্রে আমেরিকা আঘাত করেছিল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

হিরোশিমা-নাগাসাকির নাম মুখে আনতে চান না। কিন্তু ইরানে আমেরিকার সাম্প্রতিক হামলা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের দুই শহরে আমেরিকার পরমাণু বোমা নিক্ষেপের সঙ্গেই তুলনীয় বলে মনে করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর মুখে এই তুলনা শুনে সমালোচনা হচ্ছে যথেষ্ট। তবে ট্রাম্পের যুক্তি, হিরোশিমা-নাগাসাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সমাপ্তি টেনেছিল। ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে আক্রমণও ইরান যুদ্ধ শেষ করেছে। এ বারে গাজ়াতেও সংঘর্ষবিরতির দেরি নেই বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। বুধবার নেদারল্যান্ডসে নেটো সম্মেলনের ফাঁকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এই কথা বলেন।

ইরানের তিনটি পরমাণু ক্ষেত্রে আমেরিকা আঘাত করার পরে ইরান কাতার এবং ইরাকে আমেরিকার সেনাঘাঁটিতে প্রতীকী আক্রমণ চালিয়েছিল। তার পরেই মঙ্গলবার সংঘর্ষবিরতির কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। ইরান এবং ইজ়রায়েল উভয়েই তা মেনে নেয়। তার পরেও ইরান সংঘর্ষবিরতি অমান্য করেছে বলে অভিযোগ তুলে ইজ়রায়েল ফের আক্রমণের জন্য উদ্যত হয়েছিল। ট্রাম্প তাদের নিরস্ত করেন। সেটা করতে গিয়ে নানা রকম অসংসদীয় শব্দও ব্যবহার করেন। আজ তার সাফাই হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের বাচ্চারা ঝগড়া করলে কড়া বকুনিই দিতে হয়!’’ ট্রাম্পের দাবি, আমেরিকা ঠিক সময়ে ইরানকে আঘাত করেই এই সংঘর্ষবিরতি করাতে পেরেছে। ইরানের তিনটি পরমাণু ক্ষেত্র একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলেও তাঁর দাবি। তিনি জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে আমেরিকা এ ব্যাপারে ইরানের সঙ্গে কথা বলবে এবং পরমাণু বিষয়ক একটি চুক্তি করতে চাইবে।

ইরানের পরমাণু শক্তির ক্ষয়ক্ষতি ঠিক কতখানি, তা নিয়ে ধোঁয়াশা অবশ্য এখনও কাটেনি। গত কাল ইরান দাবি করেছিল, তারা দ্রুতই ক্ষয়ক্ষতি সামলে ফের কাজ এগোবে। আজ ইরানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র এসমাইল বাঘায়েই কিন্তু এই প্রথম বার স্বীকার করেছেন, পরমাণু ক্ষেত্রগুলিতে বারংবার আক্রমণে বড় ক্ষয়ক্ষতিই হয়েছে। সাম্প্রতিকতম উপগ্রহচিত্রও তেমন আভাস দিচ্ছে। যেমন ফোরদো-তে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষেত্রে বড় বড় ফাটল তৈরি হয়েছে। সুড়ঙ্গের প্রবেশপথ ভেঙে পড়েছে বলেও মনে হচ্ছে। তবে এটাও ঠিক, তিনটি পরমাণু ক্ষেত্রের কোথাওই তেজস্ক্রিয় বিকিরণের খবর নেই বলে জানিয়েছে আইএইএ। ইরানের পার্লামেন্ট ইতিমধ্যে আইএইএ-র সঙ্গে সহযোগিতা করবে না বলে প্রস্তাব পাশ করেছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ।

ইরানের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আমেরিকাতেই নানা মহলে নানা মত। মূল প্রশ্ন, এই আঘাত ইরানের পরমাণু গবেষণাকে কতখানি পিছিয়ে দিল? ট্রাম্প বলছেন, তিনটি পরমাণু ক্ষেত্র সম্পূর্ণ ধ্বংস। ইরান এক ধাক্কায় কয়েক দশক পিছিয়ে গিয়েছে। বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো বলছেন, ইরান যদি আবার মাথা তোলে, সব পথ খোলা থাকবে। অন্য দিকে আমেরিকার কিছু গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, এই ক্ষয়ক্ষতি কিছু মাসের মধ্যে সামলে ওঠা সম্ভব। আমেরিকার একাধিক সংবাদমাধ্যমে সে খবর প্রকাশিত হওয়ায় রীতিমতো ক্ষিপ্ত ট্রাম্প। সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘সব ভুয়ো খবর! প্রেসিডেন্টকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা!’’

ইরানের পরে তিনি যে গাজ়াতেও সংঘর্ষবিরতি দেখতে চান, সে কথা আজ স্পষ্ট করেন ট্রাম্প। বলেছেন, গাজ়ার ব্যাপারে ‘যথেষ্ট অগ্রগতি’ হয়েছে। ‘‘গাজ়ার বিষয়টা দূরে নেই। শীঘ্রই ভাল খবর আসবে।’’ যদিও আজও গাজ়াতে ৫১ জনকে মেরেছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। সাত ইজ়রায়েলি সেনাও নিহত। সুতরাং ইজ়রায়েলের দিক থেকে রাশ টানার লক্ষণ নেই। তবে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উপরে চাপ বাড়ছে। বিরোধী দলগুলি তো বটেই, সেই সঙ্গে পণবন্দিদের পরিবার, এমনকি নেতানিয়াহুর শরিকদের মধ্যে থেকেও সংঘর্ষবিরতির দাবি উঠছে। হামাসের অন্যতম সমর্থক ইরানকে বড় ধাক্কা দেওয়া গিয়েছে, এই যুক্তিতে নেতানিয়াহুও কিছুটা নমনীয় বলে খবর। কাতার ও মিশর মিলে ইজ়রায়েল এবং হামাসের সঙ্গে শান্তি ফেরানোর কথা চালাচ্ছে। হামাস সূত্রেও স্বীকার করা হয়েছে যে, আলোচনার গতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump Israel Hamas Conflict Hiroshima

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy