Advertisement
E-Paper

মার্কিন চাপেই ব্রাত্য কাতার, দাবি ট্রাম্পের

গত কাল সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে আরব জগতের ছ’টি দেশ ও মলদ্বীপ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৭ ০৩:৩৬
দুশ্চিন্তা: যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ভিড় উড়ানসংস্থার দফতরে। ছবি: এএফপি

দুশ্চিন্তা: যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ভিড় উড়ানসংস্থার দফতরে। ছবি: এএফপি

মার্কিন চাপেই যে সৌদি আরব-সহ আরব জগতের ছ’টি দেশ কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তা স্পষ্ট করে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর মতে, জঙ্গি কার্যকলাপে মদতদাতা কাতারের একঘরে হওয়া হয়তো সন্ত্রাসের ‘শেষের শুরু’।

গত কাল সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে আরব জগতের ছ’টি দেশ ও মলদ্বীপ। সৌদি আরব-সহ ছ’টি প্রতিবেশী দেশ কাতারের সঙ্গে জল, স্থল ও আকাশপথে যোগাযোগও বন্ধ করায় বিভ্রাট বেড়েছে। গত কালই কূটনীতিকরা জানান, ইরান ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সুন্নি আরব দেশগুলির জোট গড়তে চাইছেন ট্রাম্প। সম্প্রতি সৌদি আরব সফরে গিয়ে সেই প্রক্রিয়ায় গতি আনার চেষ্টা করেছেন তিনি। সেখানে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান-সহ ৫০টি দেশের নেতার উদ্দেশে বক্তৃতা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কূটনীতিকরা জানান, কাতার ইরানের প্রতি সুর নরম করার ফলেই একঘরে হয়েছে। আজ টুইটারে ট্রাম্প বলেন, ‘‘পশ্চিম এশিয়া সফরের ফল এখনই ফলতে শুরু করেছে দেখে ভাল লাগছে। সৌদি আরব-সহ ৫০টি দেশ জানিয়েছিল, তারা সন্ত্রাসে আর্থিক মদতের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে। ওই আর্থিক মদতের উৎস যে কাতার, তা নিয়ে স্পষ্ট তথ্য আছে।’’ ট্রাম্পের কথায়, ‘‘এটাই হয়তো সন্ত্রাসের শেষের শুরু।’’

আজ আরব জগতের এই সঙ্কট কাটাতে সক্রিয় হয়েছিল তুরস্ক, কুয়েতের মতো কয়েকটি দেশ। গতকাল মার্কিন বিদেশসচিব রেক্স টিলারসনও জানান, আরব দেশগুলির মধ্যে মতভেদ কাটাতে প্রয়োজনে সাহায্য করতে তৈরি আমেরিকা। কিন্তু ট্রাম্পের স্পষ্ট বার্তার পরে সেই প্রক্রিয়া কতটা এগোবে তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে কূটনীতিকদের মধ্যে।

আরব জগতের এই সঙ্কটের উপরে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে ভারত। গত কাল সাংবাদিক বৈঠকে পশ্চিম এশিয়ার রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সাফল্যের কথা জোর গলায় বলেছেন বিদেশমন্ত্রী। সেইসঙ্গে আরবের ৬টি দেশের কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রসঙ্গটিকেও আরব জোটের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু বিষয়টি যে অচিরেই ভারতের গলার কাঁটা হয়ে উঠতে চলেছে তা ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করছে কেন্দ্র। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে একটাই ইতিবাচক দিক যে পৃথক ভাবে সৌদি আরব বা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মত দেশগুলির সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। ফলে তাদের এই সিদ্ধান্তের ফলে কাতারে বাসবাসকারী ভারতীয়দের গায়ে যাতে আঁচড় না পড়ে, সেদিকটি নিশ্চিত করা আমাদের পক্ষে সুবিধেজনক হবে।’’

তবে মুখে বললেও ভারতীয় স্বার্থে যে একেবারেই আঁচড় পড়বে না, তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না সাউথ ব্লক। বরং উল্টোটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা। কাতারে বসবাস করেন সাড়ে ছ লক্ষ ভারতীয়। যাঁদের মাধ্যমে ভারতের বিদেশি মুদ্রা উপার্জনের পরিমাণ বছরে প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। এখনও পর্যন্ত ভারতে কাতারের বিনিয়োগ আহামরি কিছু নয়। কিন্তু সেই বিনিয়োগ বাড়ানো নিয়ে দু’দেশের কথাবার্তা এখন মাঝপথে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আগামী মাসে কাতারে যাওয়ার কথা ছিল বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের। যা কালকের ঘটনার পর স্থগিত রাখা হয়েছে। চলতি বছরে ভারতে গৃহনির্মাণ শিল্প, বিমানবন্দর, বিমান পরিষেবা, বন্দর, তৈলক্ষেত্র, পেট্রোকেমিক্যাল, সার, পর্যটনক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ কাতারি বিনিয়োগ আসার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সে সবই থমকে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতের কর্পোরেট সংস্থাগুলিরও কাতারের প্রতি আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছে গত কয়েক বছরে। তথ্যপ্রযুক্তি, পরিকাঠামো ও নির্মাণক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০টি বড় সংস্থা কাজ করছে কাতারে। ভারতের অন্তত পাঁচটি শীর্ষ পর্যায়ের ব্যাঙ্কও সেখানে কর্মরত।

‘সেন্টার ফর ওয়েস্ট এশিয়ান স্টাডিজ’-এর অধ্যাপক বংশীধর প্রধানের কথায়, ‘‘যে অস্থিরতা তৈরি হল তার ফলে ভুগতে হবে ভারতকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আরব-নীতিও এর ফলে ধাক্কা খেতে পারে।’’ কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এত দিন বিভিন্ন আরব দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলছিল ভারত, এ বার তা সমস্যার মুখে পড়বে।

কাতার এয়ারওয়েজের দাবি, এই জটিলতার ফলে কোনও সমস্যায় পড়বেন না ভারত থেকে পশ্চিম এশিয়া বা ইউরোপ বা আমেরিকায় যাওয়া যাত্রীরা। মঙ্গলবার কলকাতা থেকে বিভিন্ন উড়ানে ৮ জন এমন যাত্রী ছিলেন, যাঁদের দুবাই বা সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। তাঁদের এমিরেটস-এর বিমানে তুলে দিয়ে বাকি যাত্রীদের নিয়ে কলকাতা থেকে দোহা উড়ে গিয়েছে কাতার এয়ারওয়েজের বিমান। সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি— এই চার দেশ ছাড়া অন্য যে কোনও দেশের যাত্রী নিয়ে উড়ে যেতে অসুবিধা হচ্ছে না বলে এ দিন কলকাতায় কাতার এয়ারওয়েজ সূত্রে জানা গিয়েছে। কলকাতা থেকে দোহা বা ইউরোপ ও আমেরিকায় নিশ্চিন্তে উড়ে যাচ্ছেন যাত্রীরা। আগামী দিনে সূচি অনুযায়ী প্রতিদিন কলকাতা থেকে দোহা যাবে তাদের উড়ান। শুধু ওই চার দেশের যাত্রী থাকলে তাঁদের তুলে দেওয়া হচ্ছে এমিরেটস বা এতিহাদ উড়ানসংস্থার বিমানে।

Donald Trump US Qatar Economic isolation সৌদি আরব কাতার ডোনাল্ড ট্রাম্প
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy