ইরান আর ইজ়রায়েলের যুদ্ধ থামাতে মধ্যস্থতা করতে চাওয়া ভ্লাদিমির পুতিনকে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেটা বলেছেন, তার মানে দাঁড়ায়, ‘আগে নিজের চরকায় তেল দিন’! অর্থাৎ, আগে তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ থামানোর ব্যাপারে আলোচনা করুন। পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন আর পশ্চিমি মিত্রেরা যদি এগিয়ে আসে, তা হলে যত শীঘ্র সম্ভব যুদ্ধ বন্ধ করতে তাঁরও আপত্তি নেই।
বস্তুত, চূড়ান্ত পর্যায়ে ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকেও তাঁর আপত্তি নেই বলে সেন্ট পিটার্সবার্গে এক সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন পুতিন। তবে যুদ্ধের কারণে ভোট না-হওয়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের গদিতে জ়েলেনস্কির রয়ে যাওয়াটা কতটা আইনসঙ্গত, সেই প্রশ্নের খোঁচাও দিয়েছেন তিনি। পুতিন বলেছেন, “আমি জ়েলেনস্কি-সহ যে কারও সঙ্গে দেখা করতে প্রস্তুত। প্রশ্ন সেটা নয়। ইউক্রেন যদি কথা চালানোর জন্য তাঁর উপরেই আস্থা রাখে, তা হলে তা-ই হবে। আসল প্রশ্ন হল, নথিপত্রে সই কে করবেন? গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রে জরুরি হল আইনি বৈধতা, রাজনৈতিক বার্তা নয়।” তবে এর সঙ্গেই পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “শান্তিপূর্ণ আলোচনার পথে যদি লক্ষ্যে পৌঁছতে না-পারি, তা হলে সামরিক পথেই পৌঁছব।” হিসাব স্পষ্ট— ইউক্রেনের সামরিক ক্ষমতাকে পুতিন এমন জায়গায় নামিয়ে আনতে চান, যেখান থেকে তারা আর রাশিয়ার কাছে বিপদ হয়ে দাঁড়াবে না।
পুতিনের বক্তব্য, ইরান ও ইজ়রায়েলের মধ্যে শান্তি আলোচনা চালানোর জায়গায় রয়েছে রাশিয়া, কারণ দুই দেশের সঙ্গেই তাদের পুরনো সম্পর্ক। এ ভাবে কোনও পথ খুলতেও পারে। রাশিয়ার তরফে এই প্রস্তাবটি ইরান, ইজ়রায়েলের পাশাপাশি আমেরিকাকেও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, “গত কাল পুতিনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি মধ্যস্থতা করতে চেয়েছেন। আমি বলেছি, ‘আমার একটা উপকার করুন। আগে নিজের, রাশিয়ার ব্যাপারটায় মধ্যস্থতা করুন ভ্লাদিমির। তার পরে আপনি এ নিয়ে মাথা ঘামাবেন’।” তবে পুতিন আশাবাদী, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ফেরাতে সক্রিয় হবে আমেরিকা। তিনি এ-ও বলেছেন, ট্রাম্প ‘এক ব্যবসায়ী, যিনি হিসাবটা ভাল কষতে পারেন’।
তবে পুতিনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সাম্প্রতিক ফোনালাপে জিনপিং ও পুতিন, দু’জনেই ইরানে ইজ়রায়েলি হানার সমালোচনা করেছেন বলে ক্রেমলিন জানিয়েছে। জিনপিং বলেছেন, “যুযুধান দু’পক্ষ, বিশেষত ইজ়রায়েলের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সংঘাত বন্ধ করা, যাতে তা আর ছড়িয়ে না পড়ে।” সরাসরি আমেরিকার নাম না করেই চিনা প্রেসিডেন্ট বলেন, দুই দেশের উপরেই প্রভাব থাকা বড় শক্তিগুলির এই সংঘর্ষ নিরসনে এগিয়ে আসা উচিত। পশ্চিম এশিয়ায় এই উত্তেজনা প্রশমনের বিষয়টিই এই মুহূর্তে প্রধান অগ্রাধিকার বলে একমত হয়েছেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)