Advertisement
E-Paper

‘ফায়দা নিচ্ছে ভারত-চিন’! প্যারিস জলবায়ু চুক্তি খারিজ করলেন ট্রাম্প

আশঙ্কা আগেই ছিল। এ বার সেটাই সত্যি হল। প্যারিসে জলবায়ু চুক্তি থেকে পুরোপুরি সরে এল আমেরিকা। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তি বয়কট করার কথা ঘোষণা করে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি, গোটা দায়ভার চাপিয়ে দিলেন ভারত ও চিনের কাঁধে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৭ ১৪:৩৩
হোয়াইট হাউসে জলবায়ু চুক্তি নিয়ে বক্তব্য রাখছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি।

হোয়াইট হাউসে জলবায়ু চুক্তি নিয়ে বক্তব্য রাখছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি।

আশঙ্কা আগেই ছিল। এ বার সেটাই সত্যি হল। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে পুরোপুরি সরে এল আমেরিকা। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তি বয়কট করার কথা ঘোষণা করে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি, এর দায়ভার চাপিয়ে দিলেন ভারত ও চিনের কাঁধে। জলবায়ু চুক্তিতে পুরো ফায়দাই লুটে নিচ্ছে এই দু’টি দেশ, এমনই দাবি ট্রাম্প প্রশাসনের। চুক্তি অনুযায়ী শরিক দেশগুলির যে ব্যয়ভার বহন করার কথা, ভারত বা চিনের মতো দেশগুলো তা করছে না বলেও ট্রাম্পের অভিযোগ। নিজের স্বার্থ বিঘ্নিত করে এটা আর কোনও ভাবেই মেনে নেবে না আমেরিকা- এমনই ঘোষণা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিলেন, প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবে আমেরিকা। এই গুরুতর ঘোষণাটি ডোনাল্ড ট্রাম্প করলেন বিশ্ব পরিবেশ দিবস (৫ জুন)-এর মাত্র তিন দিন আগে।

কী বললেন ট্রাম্প? তাঁর কথায়, ‘‘এই চুক্তি ভারত ও চিনের মতো দেশগুলিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। উন্নত দেশগুলি থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আর্থিক সাহায্য পেয়ে ভারত এই চুক্তিতে শরিক হয়েছে। মার্কিন মুলুকের ক্ষেত্রে এটা মোটেই ভাল দিক নয়। অন্যায় হচ্ছে আমেরিকার সঙ্গে। এর পরে দ্বিগুণ কয়লা উৎপাদনের ছাড়পত্র পাবে ভারত। একই ফায়দা পাবে চিনও।’’ এর সঙ্গেই যোগ করেন, চুক্তি থেকে যদি মার্কিন অর্থনীতির উন্নতি হয় এবং দেশে কর্মসংস্থান তৈরি হয়, তবেই আমেরিকা এই আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে চলতে পারে।

কী ছিল প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে?

২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্যারিসে ১৯৫টি দেশ ১৩ দিন ধরে আলোচনা করে একটি খসড়া তৈরি করে। খসড়ার মূল কথা ছিল, চলতি শতাব্দীর শেষে পৃথিবীর তাপমাত্রা যেন প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি কোনও ভাবেই না বাড়ে, সেটা নিশ্চিত করা। তবে লক্ষ্য থাকবে এই উষ্ণায়নকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে রাখা। উষ্ণায়ন থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে এটাই প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক খসড়া, যাতে সায় দিয়েছিল আমেরিকা, ভারত, চিন-সহ জি-৭৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলিও।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা। যার প্রভাব পড়ছে জলবায়ুতে। মেরু অঞ্চলে দ্রুত হারে গলছে হিমবাহ স্তর। সমুদ্রপৃষ্ঠে জলস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সমুদ্র লাগোয়া দেশ ও শহরগুলি। এই চুক্তির মূল লক্ষ্যই ছিল বিশ্বের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।

এই লক্ষ্যমাত্রাকে স্থির রাখতে যে যে বিষয়গুলির উপর জোর দিতে হবে তারও একটা বিবরণ দেওয়া হয় ওই চুক্তিতে। তার মধ্যে প্রথমেই পড়ে শিল্প নির্গমনের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। তাহলেই বাতাসে কমবে গ্রিন হাউস গ্যাস— কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ও জলীয় বাষ্প। এই গ্যাসগুলিই প্রধানত বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। পাশাপাশি কয়লার বদলে শক্তির বিকল্প উৎসের কথাও ভাবা হয়েছে। চুক্তির মূল শর্তই হল জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো এবং গ্রিন হাউস গ্যাস ও কার্বনের নিগর্মনের হার কমানো।

আরও পড়ুন: আপনি টুইটারে আছেন? মার্কিন সাংবাদিকের প্রশ্নে হাসলেন মোদী, হাসছে সোশ্যাল মিডিয়াও

বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য মূলত দায়ী উন্নত দেশগুলি। কিন্তু এর প্রভাব অনেক বেশি পড়ে গরিব ও অনুন্নত দেশগুলির মানুষের উপর। তাই চুক্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, আমেরিকার মত ধনী দেশ গরিব দেশগুলিকে অর্থ সাহায্য দেবে। ২০২০-র মধ্যে আমেরিকার এই সাহায্য বা অনুদান দেওয়ার কথা ৩০০ কোটি ডলারের। যার মধ্যে ওবামা জমানায় ১০০ কোটি দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও, ২০০৫-এ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের যা মাত্রা ছিল, ২০২৫-এর মধ্যে তা ২৬-২৮ শতাংশ কমানোর কথা আমেরিকার। ট্রাম্পের প্রবল আপত্তি এই জোড়া শর্ত নিয়েই।

প্যারিস চুক্তি মেনে চলার ক্ষেত্রে কোনও আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই কোনও দেশেরই। বরং পৃথিবীর ভবিষ্যতের স্বার্থে, বা আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্মের স্বার্থে, দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই এই চুক্তিতে একমত হয় এতগুলি দেশ।

United States Donald Trump Paris Climate Pact India China আমেরিকা ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ভারত চিন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy