Advertisement
E-Paper

যৌন অপরাধী এপস্টাইনের বিমানে চেপেও ঘোরেন ট্রাম্প! ঘনিষ্ঠতা অস্বীকার করলেও ‘যোগাযোগের প্রমাণ’ অনেক

ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি ছবি আঁকেন না। এপস্টাইনকে দেওয়া সেই শুভেচ্ছাবার্তায় যে ছবি ছিল, তা তাঁর আঁকা নয়। কিন্তু অতীতে ট্রাম্পের আঁকা ছবি বিক্রি হয়েছে। তাঁর আঁকা ম্যানহাটনের স্কাইলাইন ২০১৭ সালে নিলামে উঠেছিল।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৫ ১৩:২৭
(বাঁ দিকে) জেফ্রি এপস্টাইন। ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) জেফ্রি এপস্টাইন। ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরেই আতশকাচের নীচে কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টাইনের সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক। ট্রাম্প যদিও সেই সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন। সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ৮৬ হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছেন। কিন্তু তার পরেও কিছু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কুখ্যাত যৌন অপরাধীর সঙ্গে ট্রাম্প পুরোপুরি যোগ ছিন্ন করতে পারেননি বলেই দাবি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের। সেই সংক্রান্ত বেশ কিছু ‘প্রমাণ’-ও প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। অতীতে দু’জনের মধ্যে ‘যোগাযোগ’ থাকার কথাও প্রকাশ্যে এসেছে। এমনকি, এপস্টাইনের বিমানে চেপে ট্রাম্পের যাতায়াতের কথাও জানা গিয়েছে।

আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, যৌন অপরাধী এপস্টাইনকে নগ্ন মহিলার ছবি এঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। ২০০৩ সালে এপস্টাইনের ৫০তম জন্মদিনে চিঠি লিখে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তিনি। টাইপরাইটারে লেখা শুভেচ্ছাবার্তায় বলা হয়েছিল, “শুভ জন্মদিন। তোমার প্রতিটা দিন যেন ভিন্ন অথচ দুর্দান্ত ভাবে গোপন হয়ে ওঠে।” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিঠিতে এক নগ্ন মহিলার ছবি এঁকেছিলেন ট্রাম্প। নীচে শুধু ডোনাল্ড শব্দটি লিখে স্বাক্ষর করেছিলেন। প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পরই ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছিলেন, যে ওই ভাষা তাঁর নয়। তিনি লেখেন, ‘‘আমি জীবনে কোনও দিন ছবি আঁকিনি। মেয়েদের ছবি তো আঁকিইনি। এগুলো আমার ভাষা বা শব্দ নয়।’’ তাতে কি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত অভিযোগ নস্যাৎ করা যায়? এপস্টাইন এবং ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছে সংবাদ সংস্থা সিএনএন।

কতটা ঘনিষ্ঠতা ছিল দু’জনের?

২০১৯ সালে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে যৌন সংসর্গ স্থাপনের অভিযোগে গ্রেফতার হন এপস্টাইন। তার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধি করেন ট্রাম্প। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি তাঁকে চিনি, যেমন পাম সৈকতে সকলে তাঁকে চেনেন। অনেক বছর আগে ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। গত ১৫ বছর ধরে ওঁর সঙ্গে একটাও কথা হয়নি। আমি ওঁর ভক্ত নই।’’ ট্রাম্পের এই বক্তব্যই বিতর্কে উসকে দিয়েছিল। সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, ২০০৪ সালে পাম বিচে একটি জমি কেনাকে কেন্দ্র করে দু’জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু অতীতে যে দু’জনের সম্পর্ক ছিল, তা ট্রাম্পের মন্তব্য থেকেই এক প্রকার স্পষ্ট ছিল। ‘ফ্লাইট লগ’ বলছে, নব্বইয়ের দশকে এপস্টাইনের বিমানে চেপে নিউ ইয়র্ক থেকে বেশ কয়েক বার পাম বিচে যাতায়াত করেছিলেন ট্রাম্প। সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ১৯৯২ সালে ট্রাম্পের রিসর্ট মার-আ-লাগোতে ‘ক্যালেন্ডার গার্ল’ প্রতিযোগিতা হয়েছিল। সেখানে ট্রাম্প ছাড়া উপস্থিত ছিলেন এপস্টাইন। হোয়াইট হাউস এই নিয়ে যদিও মন্তব্য করেনি।

বিতর্ক আরও উসকে দিয়েছে ট্রাম্পের ২০০২ সালের একটি সাক্ষাৎকার। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, এপস্টাইন ‘দুর্দান্ত ব্যক্তি’। ট্রাম্পের প্রাক্তন সহযোগী স্যাম নানবার্গও একটি সাক্ষাৎকারে দু’জনের সম্পর্কের বিষয়ে আলোকপাত করেছিলেন। ২০১৯ সালে ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ২০১৪ সালে ট্রাম্পকে এপস্টাইনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কমানোর বিষয়ে চাপ দিয়েছিলেন তিনি। সে সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে নামতে চলেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু নানবার্গের দাবি, ট্রাম্প তা কানে তোলেননি। সিএনএন বলছে, এ সব থেকে স্পষ্ট করে বলা যাবে না যে, এপস্টাইনের সঙ্গে কতটা ঘনিষ্ঠতা ছিল ট্রাম্পের। কারণ, ট্রাম্প বার বার সেই সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি এ-ও দাবি করেন যে, এপস্টিনের বিমানে কখনওই চাপেননি তিনি। সংবাদমাধ্যমের একটি সূত্র বলছে, ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এই অস্বীকার করা নতুন কিছু নয়। ব্রিটেনের যুবরাজ অ্যান্ড্রিউয়ের সঙ্গে বেশ কিছু ছবি প্রকাশ্যে আসার পরেও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট দাবি করেছিলেন, তিনি তাঁকে চেনেন না। এপস্টাইনের সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্কদের হেনস্থায় নাম জড়িয়েছিল অ্যান্ড্রিউয়েরও।

ছবি আঁকেননি!

ট্রাম্প দাবি করেছেন, যে শুভেচ্ছাবার্তার কথা বলা হয়েছে, তা তিনি লেখেননি। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে কট্টর দক্ষিণপন্থী লরা লুমার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দাবি করেছেন, ‘‘যাঁরা ট্রাম্পকে চেনেন, তাঁরা জানবেন, উনি টাইপ করে কিছু লেখেন না। কালো পেন দিয়ে বার্তা লেখেন।’’ ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি ছবি আঁকেন না। কিন্তু অতীতে ট্রাম্পের আঁকা ছবি বিক্রি হয়েছে। ট্রাম্পের আঁকা ম্যানহাটনের স্কাইলাইন ২০১৭ সালে নিলামে উঠেছিল। তা বিক্রি হয়েছিল ২৯ হাজার মার্কিন ডলারে। ভারতীয় মুদ্রায় তার দাম এখন প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা। নব্বইয়ের দশকে ট্রাম্পের আঁকা এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ছবিও নিলামে উঠেছিল ২০১৭ সালে।

মাস্কের দাবি

গত মাসে ট্রাম্পের প্রাক্তন সহযোগী ইলন মাস্ক দাবি করেছিলেন, এপস্টাইনের ফাইলে ট্রাম্পেরও নাম রয়েছে। সে কারণে সেই ফাইল কখনও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। যদিও সেই নিয়ে কোনও প্রমাণ তিনি দিতে পারেননি। পরে সেই পোস্ট তিনি ডিলিট করে দেন।

ট্রাম্পের রিসর্টে

অভিযোগ, ট্রাম্পের রিসর্ট মার-আ-লাগোতে বেশ কিছু কুকীর্তি করেছিলেন এপস্টাইন। ট্রাম্পের প্রাক্তন সহযোগী নানবার্গ ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ওই রিসর্টে এপস্টাইনের যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তার নেপথ্যে ছিল সে রকমই এক কুকীর্তি। সে কথা নিজে তাঁকে বলেছিলেন ট্রাম্প। তার রিসর্টে এক অল্পবয়স্ক মহিলা কর্মীকে দিয়ে গা মালিশ করিয়েছিলেন এপস্টাইন। তার পরেই ট্রাম্প তাঁর রিসর্ট-এ এপস্টাইন যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলে দাবি নানবার্গের। তার বেশ কয়েক বছর পরে এপস্টাইনের বিরুদ্ধে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে যৌন সংসর্গের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট এবং মায়ামি হেরাল্ডের সাংবাদিকের প্রকাশিত বইয়ের সূত্রে জানা গিয়েছে, মার-আ-লাগোর এক সদস্যের কিশোরী কন্যাকে হেনস্থা করেছিলেন এপস্টাইন। সে কারণে তাঁকে সেখানে যেতে বারণ করা হয়।

২০১৯ সালে এপস্টাইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরে ট্রাম্প দূরত্ব তৈরি করলেও যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত জিসলেই ম্যাক্সওয়েলের ক্ষেত্রে তা করেননি। ২০২০ সালে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘‘যাই হোক, ওঁকে শুভেচ্ছা জানাই।’’ কেন, সে-ই প্রশ্ন উঠেছে।

US Donald Trump
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy