E-Paper

ব্লতাবার শিরশিরে হাওয়া বলছে, পুজো এসে গেল

ইউরোপের অন‍্য পুজোর তুলনায় নবীন হলেও এই চতুর্বর্ষীয় পুজো আনন্দ, আমেজ ও আবেশে ভরপুর। শারদোৎসবটি হয় ‘চেক্ ইউনিভার্সিটি অব লাইফ সায়েন্স প্রাগ’-এর ক‍্যাম্পাসে।

শ্রেয়স সরকার

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:০৯
চতুর্বর্ষীয় পুজো আনন্দ, আমেজ ও আবেশে ভরপুর।

চতুর্বর্ষীয় পুজো আনন্দ, আমেজ ও আবেশে ভরপুর। —প্রতীকী চিত্র।

হেমন্তের কর্ণধার এই শিরশিরে হাওয়াটা। ব্লতাবা নদীর দেহস্পর্শী, চার্লস ব্রিজ পেরোনো, প্রাগ শহরের অন্তরাত্মা কাঁপানো, ঝরা পাতাদের নির্ঝর ঘটানো ঠিক এই হাওয়াটাই মনে করিয়ে দেয়— পুজো এসে গেল। কাফকা, কুন্দেরার শহরে আমার প্রায় এক বছর হয়ে গেল। বাঙালি সংগঠন ‘উৎসব’ আয়োজিত শারদোৎসবে আমার যাতায়াত। সঙ্গে নিয়ে যাই চেক এবং অন্য ইউরোপীয় বন্ধুদেরও।

ইউরোপের অন‍্য পুজোর তুলনায় নবীন হলেও এই চতুর্বর্ষীয় পুজো আনন্দ, আমেজ ও আবেশে ভরপুর। শারদোৎসবটি হয় ‘চেক্ ইউনিভার্সিটি অব লাইফ সায়েন্স প্রাগ’-এর ক‍্যাম্পাসে। সেখানের অডিটোরিয়ামে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভোগ খাওয়া ও বাইরের একটি পৃথক টেন্টে দেবীর একনিষ্ঠ আরাধনা ও মহাঞ্জলি। সম্প্রতি একটি স্নিগ্ধ ছাঁচে গড়া প্রতিমা ভিয়েনা থেকে এসেছে প্রাগে। আগে প্রতিমাটি ছিল একচালার, কুমোরটুলি থেকে আনা। এই পুজোটিই প্রাগের একমাত্র সাংগঠনিক দুর্গাপুজো যা কোনও ব‍্যক্তি বিশেষের উদ‍্যোগে নয়, বরং একত্রীকরণে উদ্ভূত।

পুজোবাড়ির রমরমা, প্রায় ৫০০-৬০০ লোকের ভিড়, কাজের মানুষের গুনগুন আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধুময়তা মিলে মিশে এক। এখানে নাটক হয়, শিল্প ও শৈশবকে উদ্‌যাপন করার জন্য এক পাল কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে সঙ্গে বড়দেরও নৃত্য-গীত-বাদ্য। শিশুদের জন্য বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, বড়দের জন‍্য অন্তাক্ষরী। এ ছাড়া, অডিটোরিয়ামের বাইরে বিভিন্ন ভারতীয় ও ইউরোপীয় রেস্তরাঁর স্টলের সঙ্গে সঙ্গে হস্তশিল্পের পসরাও সাজানো হবে।

দিনের শেষে গবেষণাগারের কাজ শেষ করে, কিছু পারিবারিক বন্ধুদের সঙ্গে অষ্টমী-নবমীতে প্রতিমা দেখেই বেরিয়ে পড়ি আমার প্রিয় তাইয়ানিজ রেস্তরাঁ কিউকিউ বা ইটালীয় খানার দোকানে। ঠিক যেমন কলকাতাতে ঠাকুর দেখার পরে ঢুকে পড়তাম পার্ক স্ট্রিটের কোনও রেস্তরাঁয়। নিত‍্যনৈমিত্তিক কল্মষের বাইরে পুজোর আহ্লাদে যখন মন কানায় কানায় পূর্ণ তখন বারবার উত্তাল কাশবনের আন্দোলন, ইতস্তত মেঘের আনাগোনা আর অপেক্ষমান স্থলপদ্মের একান্ত কামনার সঙ্গে মিশে যায় প্রাগের লেতনা পার্কের ভাসানো শ‍্যামলিমা, ঠাকুরোভায় রবীন্দ্রনাথের মূর্তি, স্ট্রাহভ মনাস্টারির আপেলগাছগুলি, প্রাগ প্রাসাদের আলো-আঁধারি, ভোরাকের সমাধি, পাথর-পাতা রাস্তার ছায়া— সব। হঠাৎই বাতাসে শেফালি-সৌরভ; হাতছানি দিয়ে বলে, ‘আয়, তোকে সব ভুলিয়ে দিই!’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja EU Bengali Rituals Indian Festival

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy