Advertisement
E-Paper

ঘানায় বাঘা পুজো, পটলই যা মেলে না

কিন্তু ঘানায় যে গত বছর থেকে দুর্গাপুজো হচ্ছে এবং রীতিমতো ঘটা করে, সেটা জানা ছিল না! হ্যাঁ, পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে সব রীতিনীতি, পাঁজিপুঁথি অক্ষরে অক্ষরে মেনে অকাল বোধন। যার আয়োজক ‘বাঘা’। চমকাবেন না। ‘বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব ঘানা’-কে সংক্ষেপে ‘বাঘা’ বলা হয়।

রত্নলেখা মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪৯
বন্দনা: ঘানায় বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন-এর সেই পুজো। নিজস্ব চিত্র

বন্দনা: ঘানায় বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন-এর সেই পুজো। নিজস্ব চিত্র

কলকাতা ময়দানে খেলে যাওয়া সুলে মুসা, ইয়াকুবু, জ্যাকসনদের দেশটাকে এত কাল জানতাম শুধু ফুটবলের জন্য। ২০০৬ থেকে যে দেশ টানা তিন বার বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলেছে। কিন্তু ঘানায় যে গত বছর থেকে দুর্গাপুজো হচ্ছে এবং রীতিমতো ঘটা করে, সেটা জানা ছিল না! হ্যাঁ, পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে সব রীতিনীতি, পাঁজিপুঁথি অক্ষরে অক্ষরে মেনে অকাল বোধন। যার আয়োজক ‘বাঘা’। চমকাবেন না। ‘বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব ঘানা’-কে সংক্ষেপে ‘বাঘা’ বলা হয়।

বিয়ের পর স্বামীর চাকরির সূত্রে এ বছর ৩ জানুয়ারি ঘানার রাজধানী অ্যাক্রায় আসি। আমি নাগেরবাজারের মেয়ে, আগে কখনও পুজোয় কলকাতার বাইরে থাকিনি। আর এ তো কলকাতা থেকে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার দূরে। পুজোর কথা ভেবে মনটা গোড়ায় খারাপ ছিল। তা-ও বিদেশের মধ্যে বিলেত আর মার্কিন মুলুকে দুর্গাপুজোর ছড়াছড়ি। ঘানায় দুর্গাপুজো হয় না বলেই ভেবেছিলাম। এবং ভুল ভেবেছিলাম।

বিলেত-আমেরিকার অনেক জায়গায় প্রতিমা কলকাতা থেকে গেলেও ঘানার দুর্গাঠাকুর কিন্তু তৈরি হয় ঘানাতেই। গত বছর সোমা সেন নামে এক শিল্পী প্রতিমা তৈরি করেছিলেন। এ বছর ঠাকুর গড়ার দায়িত্বে একটি অলঙ্কার নির্মাণ সংস্থার কর্মীরা। ছ’মাস ধরে তাঁরা প্রতিমা তৈরি করছেন। ওই সংস্থার মালিক, হাওড়ার ডোমজুড়ের বিবেক কোলে বিশ বছরেরও বেশি ঘানায় আছেন। গত বার ছিল একচালার ঠাকুর, এ বার নবদুর্গা।

পুজোটা কিন্তু অ্যাক্রায় না, হয় টেমা-তে। ওই উপকূলবর্তী শহরে যেতে অ্যাক্রা থেকে সময় লাগে আধ ঘণ্টা। টেমা-র কমিউনিটি ওয়ান-এর হিন্দু মঠ মন্দিরে মা দুর্গার অধিষ্ঠান হবে। নিয়ম মেনে এখানে কুমারী পুজোও হয়। এ দেশে অন্তত পাঁচশো বাংলাভাষীর বসবাস। তবে সবাই পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি নন। বাংলাদেশ তো বটেই, সেই সঙ্গে দিল্লি, কানপুর, পটনা থেকেও বাঙালিরা এসে এখানে বাসা বেঁধেছেন। অধিকাংশ চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীও আছেন কয়েক জন। গত বারের মাতামাতি দেখে উৎসাহী আয়োজকরা এ বার আরও জাঁকজমক করবেন বলে ঠিক করেছেন। বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি, পেশায় ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায় প্রায় দু’দশক ঘানার প্রবাসী। তাঁর লক্ষ্য, পুজোয় শু‌ধু বাঙালি নয়, এখানকার অন্য ভারতীয়দেরও সামিল করানো। পুজোয় ভারতীয় হাই কমিশনেরও সহযোগিতা মেলে।

পুজোয় রোজ ভোজ, তবে সব নিরামিষ। ভাত, ডাল, ভাজা, তরকারি, চাটনি, মিষ্টি, পায়েস। এক দিন হবে পুরি, আনাজ দেওয়া ডাল, ফ্রায়েড রাইস, হালুয়া, মিঠাই। কলকাতায় আমরা যে সব খাই, তার মধ্যে পটল বাদে সব রকম আনাজ এখানে মেলে। প্রসাদের জন্য ফলও পাওয়া যায় সব রকম।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হবে। ঘানার স্থানীয় দল ভজন পরিবেশন করবে, ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা হবে ‘বাঘা’-র সদস্যদের। এক দিন ‘বাঘা’-র পুরুষ-মহিলা সব সদস্য একই রকম শাড়ি ও কুর্তা-পাজামা পরবেন। এ বার অন্তত পাঁচ হাজার দর্শনার্থীর ভিড় হবে বলে আয়োজকদের আশা। পুজোর বাজেট প্রায় ২০ লক্ষ টাকা।

বাংলায় এ বার বর্ষা থাকতে থাকতেই পুজো। টেমা-র আবহাওয়া পূর্বাভাসও বলছে, পুজোয় বৃষ্টি হবে। তবে এখানে আমরা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পিছিয়ে। কলকাতায় যখন দশমীর বিষাদ, তখন টেমা-তে আমরা আনন্দ করার আরও কিছুটা সময় পাব।

Durga Puja Ghana Bengali Association Of Ghana Bagha ঘানা বাঘা বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব ঘানা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy