অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা নেই। ভয়ের পরিবেশ নেই। জেএমবি এবং আইএস জঙ্গিদের হুমকি দূরে ঠেলেই এ বছর দুর্গাপুজো ও মহরম পালিত হল বাংলাদেশে। সরকারের তরফে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকায় দুর্গাপুজোয় মানুষের আনন্দের কোনও খামতি ছিল না। রেকর্ড সংখ্যায় পুজো হয়েছে এ বছর। বেড়েছে দর্শনার্থীর ভিড়ও। সেই সঙ্গে মহরম ঘিরে যাতে কোনও অশান্তি না হয় তার জন্যও ছিল ব্যতিক্রমী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মহরমের মিছিলে কোনও রকম অস্ত্র নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিছিলকারীরা সেই নির্দেশ মেনেছেন। যেখানে যেখানে সরকারি নির্দেশ মানা হয়নি, পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে হস্তক্ষেপ করেছে। আটক করা হয়েছে ১৪ জনকে।
গত বছরের শেষে ঢাকায় এক ইতালীয় ও রংপুরে এক জাপানিকে খুনের ঘটনা দিয়ে এ দেশে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি শুরু হয়। এর পর সাতক্ষিরা, যশোর, দিনাজপুর-পাবনায় কয়েক জন পুরোহিতকে খুনের পরে ভয় ছড়ায় বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে। এই আবহে এ বছর দুর্গাপুজো কেমন যাবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সরকার প্রথম থেকেই পুজোর উদ্যোক্তাদের অভয় দিয়ে এসেছে যে, নিরাপত্তার কোনও অভাব হবে না।
মূলত সেই ভরসার ভিতেই এ বার সব চেয়ে বেশি দুর্গাপুজো হয়েছে বাংলাদেশে। মোট ২৯ হাজার ৩৯৫টি। গত বছর এই সংখ্যাটি ছিল ২৯ হাজার ৭৪টি। নোয়াখালিতে ৭১ ফুটের দুর্গা দেখতে ঢাকা, রাজশাহী থেকেও গিয়েছেন প্রচুর মানুষ। শুধু যে পুজার সংখ্যা বেড়েছে তা নয়, দর্শণার্থীর ভিড়ও সর্বকালীন রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে বলে দাবি পুজোর উদ্যোক্তাদের। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পালের কথায়, ‘‘১৯৭১ সালের পরে এ বারই প্রথম নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পুজো হয়েছে।’’
জেএমবি-র বোমাবাজিতে গত বছর বাংলাদেশে মহরম ভণ্ডুল হয়ে গিয়েছিল। তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময়ে ঢাকার আজিমপুরে বোমা বিস্ফোরণে মারা গিয়েছিলেন ৪ জন। এ বার বিজয়া দশমীর পরের দিন বুধবার ছিল মহরম। দু’টি সম্প্রদায়ের এ বড় দু’টি অনুষ্ঠানকে ঘিরে পুলিশের কড়া প্রহরা ও গোয়েন্দা নজরদারি ছিল চোখে পড়ার মতো। মহরমের মিছিলে অংশ নিতে বুধবার সকাল থেকেই হোসেইনি দালান ইমামবাড়ার সামনে জড়ো হন মানুষ। সাড়ে ১০টা নাগাদ ইমামবাড়ার সামনে থেকে শুরু হয় বিশাল তাজিয়া মিছিল। একই অবস্থা ছিল চট্টগ্রাম, রাজশাহি, খুলনা-বগুড়ায়। হাজার-হাজার মানুষের এই সব শোক মিছিল শহর-বন্দরের বিভিন্ন প্রান্ত পরিক্রমা করে।
তবে এ বারের মিছিল ছিল ব্যতিক্রমী। মিছিলের সামনে ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেনের দু’টি প্রতীকী ঘোড়া, দ্বিতীয় ঘোড়ার জিন রক্তের লালে রাঙানো। কিন্তু লাঠি, ছুরি, শিকলের বদলে মিছিলে অনেকের হাতেই দেখা যায় জরি লাগানো লাল আর সবুজ নিশান, মাথায় শোকের কালো কাপড়। যেখানেই মিছিল বেরিয়েছে সেখানেই মিছিলকে ঘিরে রেখেছে সশস্ত্র বাহিনী। কোথাও অস্ত্র হাতে কাউকে দেখলে গ্রেফতার করা হয়েছে। ব্যাগ বা টিফিন বাক্স নিয়েও কাউকে মিছিলে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। ফাটাতে দেওয়া হয়নি কোনও প্রকার আতসবাজি বা শব্দবাজিও। যে হোসেইনি দালান এলাকায় গত বছর বিস্ফোরণ হয়েছিল, সেখানে এ বছর ছিল তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশি নির্দেশ অমান্য করে মঙ্গলবার বিকেলে ওই এলাকা থেকে তাজিয়া মিছিলে ধারালো অস্ত্র বহনের অপরাধে ১৪ জনকে আটক করে চকবাজার থানার পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy