সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে ছিনতাই হওয়া মিশরীয় বিমান।
টানা কয়েক ঘণ্টার নাটকের পর শেষমেশ সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে গ্রেফতার করা হল ছিনতাইকারী সেইফ এলদিন মুস্তাফাকে। সাইপ্রাস পুলিশ জানাচ্ছে, মুস্তাফা আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরেনারি মেডিসিনের অধ্যাপক। মুক্ত করা হয়েছে বিমানটিতে আটক সব যাত্রী ও বিমানকর্মীকে।
ছিনতাই হওয়া মিশরীয় বিমানটিকে নিয়ে সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে এ দিন দিনভর নাটক ছিল জমজমাট। কী হয় কী হয়, এই উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছিল গোটা বিমানবন্দর আর তার লাগোয়া এলাকা। বিমান-যাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনের চোখে-মুখে উদ্বেগের ছাপ ছিল স্পষ্ট। যাঁরা সদ্য মুক্তি পেয়েছেন, সেই যাত্রী আর তাঁদের পরিজনরা তখনও যেন বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না, আপাতত তাঁদের ফাঁড়া কেটে গিয়েছে। আর যাঁরা তখনও বিমানে আটক রয়েছেন সেই যাত্রী আর তাঁদের পরিজনদের অবস্থাটা কেমন, তা বলাই বাহুল্য!
বাকি যাত্রী ও বিমানকর্মীদের ছেড়ে দিলেও, চার জন বিমানকর্মী আর চার জন বিদেশি যাত্রীকে দীর্ঘ ক্ষণ বিমানটিতে আটকে রাখেন ছিনতাইকারী। সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে নামার পর বিমানটির ধারে-কাছেই ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি সাইপ্রাসের পুলিশ ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষীরা। ছিনতাইকারী মুস্তাফা হুমকি দেন, তাঁরা ধারে-কাছে এলেই বোমা বা বিস্ফোরক দিয়ে বিমানটি উড়িয়ে দেওয়া হবে।
সেই অধ্যাপক ছিনতাইকারী।
সাইপ্রাসের পুলিশ খবর নিয়ে জেনেছে, ছিনতাইকারী মুস্তাফা খুব সাধারণ কেউ নন। তিনি আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরেনারি মেডিসিনের অধ্যাপক। প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বহু দিন দেখা-শোনা, কথাবার্তা নেই। কিন্তু, প্রাক্তন স্ত্রীকে তাঁর দেখার ইচ্ছে খুব। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান ইব্রাহিম। সেই ফুরসৎ যাতে মেলে, সে জন্য কিছু দিন আগে সাইপ্রাসে আশ্রয় চেয়েছিলেন তিনি। তা না পেয়েই নাকি সাইপ্রাস সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিমান ছিনতাই করেছেন ভেটেরেনারি মেডিসিনের অ্ধ্যাপক। আজ লারনাকা বিমানবন্দরে দাঁড়ানো মিশরীয় এয়ারলাইন্সের বিমানের ককপিট থেকেই আরবি ভাষায় লেখা একটি চিঠি ছুঁড়ে দিয়েছেন ছিনতাইকারী। সেই চিঠিটি তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা। প্রেমের চিঠি। বিরহ-বেদনারও!
আলেকজান্দ্রিয়া থেকে কায়রো যাওয়ার পথে মঙ্গলবার ছিনতাই করা হয় মিশরের সরকারি বিমান সংস্থা ‘ইজিপ্টএয়ার’-এর ওই বিমানটিকে।
বিমান থেকে নেমে আসছেন মুক্তি পাওয়া যাত্রীরা। লারনাকা বিমানবন্দরে।
পাইলটকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ছিনতাই করা বিমানটিকে তড়িঘড়ি নামতে বাধ্য করা হয় সাইপ্রাসে। ‘ইজিপ্টএয়ার’-এর ওই এমএস-১৮১ এয়ারবাসটিতে ছিলেন ৫৬ জন যাত্রী ও সাত জন বিমানকর্মী। বিমানবন্দরে নামার পর পরই দোভাষীর মাধ্যমে সাইপ্রাসের সরকারি কর্তা ও বিমানবন্দরের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করে দেন ছিনতাইকারী। তারই প্রেক্ষিতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এক বিমানকর্মী আর চার জন বিদেশি যাত্রী ছাড়া বিমানের বাকি যাত্রীদের মুক্তি দিয়েছেন ছিনতাইকারী।
লারনাকা বিমানবন্দরে নামার পরেই সাইপ্রাসের অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছিলেন, ওই বিমানে শক্তিশালী বোমা বা খুব জোরালো বিস্ফোরক রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।ছিনতাইকারী (রা) বিমানটিকে তড়িঘড়ি সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে নামতে বাধ্য করেছে। ওই বিমানে একাধিক ছিনতাইকারী রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পরে অবশ্য জানা যায়, মুস্তাফাই ওই বিমানের একমাত্র ছিনতাইকারী।
আরও পড়ুন- ওয়াশিংটনে ইউএস ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে পাকড়াও অস্ত্রধারী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy