প্রতিভাবান ভারতীয়েরা আমেরিকায় গিয়ে বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করায় আমেরিকা ভীষণ ভাবে উপকৃত হয়েছে। এমনটাই মনে করছেন টেসলা এবং স্পেসএক্স-এর কর্ণধার ইলন মাস্ক। সম্প্রতি একটি পডকাস্টে তাঁর সাক্ষাৎকার নেন জ়িরোধার সহপ্রতিষ্ঠাতা নিখিল কামাথ। রবিবার পডকাস্টটি সম্প্রচারিত হয়। সেখানে আমেরিকায় অভিবাসন প্রসঙ্গে আলোচনার সময়ে এই মন্তব্য করেন মাস্ক।
প্রায় দু’ঘণ্টার ওই পডকাস্টের একেবারে শেষের দিকে উঠে আসে আমেরিকায় অভিবাসন প্রসঙ্গ। নিখিল জানান, দীর্ঘ সময় ধরে আমেরিকায় বহু অভিবাসন হয়েছে। অনেক বুদ্ধিমান, দক্ষ মানুষেরা সে দেশে গিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে মাস্কও বলেন, “হ্যাঁ, যে প্রতিভাবান ভারতীয়েরা আমেরিকায় গিয়েছেন, তাঁদের থেকে আমেরিকা ভীষণ ভাবে উপকৃত হয়েছে।” টেসলাকর্তা কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গেই নিখিলের প্রশ্ন, এখন বিষয়টি বদলে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না? তাতে দু’জনেই হেসে ওঠেন। তবে মাস্ক তখনও নিজের অবস্থানই অনড় থাকেন। আমেরিকায় কর্মরত প্রতিভাবান ভারতীয়দের প্রসঙ্গে ফের একই মন্তব্য করেন তিনি।
বস্তুত, সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার প্রশাসনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে ‘অভিবাসন বিরোধী’ ভাবনা প্রকট হয়েছে বলেই মনে করা হয়। কেন হঠাৎ করে এই পরিবর্তন এল, তা-ও ব্যাখ্যা করেন মাস্ক। নিখিলের প্রশ্নের উত্তরে টেসলাকর্তার ব্যাখ্যা, এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। তবে জো বাইডেনের জমানায় কিছু নীতির কারণেই আমেরিকানদের একাংশের মধ্যে এই ‘অভিবাসন বিরোধী’ মনোভাব তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। মাস্ক বলেন, “বাইডেনের আমলে সীমান্তে কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল দরজা। ফলে বাইডেনের আমলে ব্যাপক হারে অবৈধ অনুপ্রবেশ হয়েছে। এটি আসলে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।”
ভিন্দেশিরা আমেরিকায় গিয়ে কাজ করার ফলে, আমেরিকানদের কাজের পরিসর সঙ্কুচিত হচ্ছে— এমনও অভিযোগ কোনও কোনও সময়ে উঠে এসেছে আমেরিকার অন্দরে। তবে এই ধরনের অভিযোগগুলির সঙ্গে সহমত নন টেসলাকর্তা। তাঁর বক্তব্য, প্রতিভাবান কর্মীর অভাব সবসময়ই থাকে। তাই যত বেশি প্রতিভাবান কর্মী পাওয়া যায়, তত-ই ভাল। মাস্ক বলেন, “এগুলি (অভিযোগগুলি) কতটা বাস্তবসম্মত, তা আমি জানি না। তবে আমার পর্যবেক্ষণ হল, প্রতিভাবানেদের অভাব সবসময়ই থাকে। এই কঠিন কাজগুলি ঠিক মতো করার জন্য পর্যাপ্ত প্রতিভাবান কর্মী খুঁজে পেতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। তাই যত প্রতিভাবান কর্মী পাওয়া যায়, তত ভাল।”
আরও পড়ুন:
সম্প্রতি এইচ-১বি ভিসার নিয়মে বেশ কিছু বদল এনেছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এটি হল একটি অ-অভিবাসী ভিসা, যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের দক্ষ কর্মীরা সাময়িক ভাবে আমেরিকায় থেকে সেখানকার সংস্থার হয়ে কাজ করতে পারেন। কিন্তু এ বার এখানেও ‘কোপ’ বসিয়েছেন ট্রাম্প। এইচ-১বি ভিসার জন্য মার্কিন সংস্থাগুলির কাছ থেকে বছরে এক লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৮৮ লক্ষ টাকা) করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্পের প্রশাসন। এইচ-১বি ভিসায় আমেরিকায় গিয়ে কাজ করা বিদেশিদের মধ্যে প্রথম সারিতেই রয়েছেন ভারত এবং চিনের নাগরিকেরা। সরকারি হিসাবে, বর্তমানে আমেরিকায় এই ভিসার সবচেয়ে বেশি সুবিধা পান ভারতীয়েরা। এ অবস্থায় টেসলাকর্তার এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তবে কোনও কোনও সংস্থা এই এইচ-১বি ভিসার ‘অপব্যবহার’ করেছে বলেও মনে করেন মাস্ক। তাঁর মতে, এই অপব্যবহার বন্ধ হওয়া দরকার।