Advertisement
E-Paper

চিনের বৃদ্ধাশ্রমে আগুন, মৃত ৩৮

ঘড়ির কাঁটা রাত সাড়ে আটটায়। রোজকার মতোই ধীর গতিতে চলছিল কাঙ্গলেইউয়ান বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের জীবন। হঠাৎই, ‘আগুন আগুন’ চিৎকার। চোখের নিমেষে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাড়িটায়। অশক্ত চেহারায় কেউ ছোটেন লাঠিতে ভর করে। চলার শক্তি না থাকায় কেউ বা বিছানায় শুয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন মৃত্যুর জন্য। এক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই মৃত্যু হয় ৩৮ জনের।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০২:৪৭
পুড়ে গিয়েছে বৃদ্ধাশ্রম। ছবি: এএফপি।

পুড়ে গিয়েছে বৃদ্ধাশ্রম। ছবি: এএফপি।

ঘড়ির কাঁটা রাত সাড়ে আটটায়। রোজকার মতোই ধীর গতিতে চলছিল কাঙ্গলেইউয়ান বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের জীবন। হঠাৎই, ‘আগুন আগুন’ চিৎকার। চোখের নিমেষে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাড়িটায়। অশক্ত চেহারায় কেউ ছোটেন লাঠিতে ভর করে। চলার শক্তি না থাকায় কেউ বা বিছানায় শুয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন মৃত্যুর জন্য। এক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই মৃত্যু হয় ৩৮ জনের।

দেশের সরকারি সংবাদমাধ্যম জিনহুয়া জানিয়েছে, সোমবার রাতে আগুন লাগে চিনেন হেনান প্রদেশের লুসান কাউন্টির বেসরকারি কাঙ্গলেইউয়ান বৃদ্ধাশ্রমে। মৃত ৩৮। আহত ছ’জনের মধ্যে দু’জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি।

১১ জনের সঙ্গে একই ঘরে থাকতেন ৮১ বছরের ঝাও ইউলান। আগুন লাগার পর ওই ঘরের দু’জন ছাড়া প্রাণে বাঁচেননি কেউ। ঝাওয়ের কথায়, ‘‘আমি আর এক জন কোনও মতে বাইরে আসতে পারি।’’ বাকিদের অসহায় আর্তনাদ কানে আসতে থাকে ঘরের বাইরে থেকে। বৃদ্ধাশ্রমের অন্য এক বাসিন্দা ৭৮ বছরের গুয়ো সিন বলেন, ‘‘আমি খাটে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ এক কর্মী ছুটে আসেন ‘আগুন আগুন’ চিৎকার করতে করতে। আমি কোনওমতে পালাই।’’ এই বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের অনেকেই বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না। যাঁরা পারেন, হাঁটাচলার জন্য তাঁদেরও ভরসা লাঠি। এমনকী অনেকে নিজের হাতে খেতেও পারেন না। ফলে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও অসহায় অপেক্ষা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না তাঁদের কাছে।

সোমবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ আগুন লাগার পর প্রায় এক ঘন্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে পরিস্থিতি। যদিও তত ক্ষণে মারা গিয়েছেন ৩৮ জন। আগুন লাগার কারণ জানতে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং।

২০১০ সালের শেষের দিকে প্রায় দু’হেক্টর জমির নিয়ে তৈরি এই বৃদ্ধাশ্রমটি চালু করার অনুমতি দেয় স্থানীয় প্রশাসন। ৬০০ বর্গ মিটার জায়গার উপর ১৩০ শয্যার বাড়িটিতে বাসিন্দা সংখ্যা ৫১। আবাসিকদের অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন ঘরগুলির বেহাল অবস্থা নিয়ে। বৃদ্ধা-বৃদ্ধাদের পরিচর্যার জন্য অভাবও রয়েছে উপযুক্ত পরিচারকেরও।

সোমবারের আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছে বৃদ্ধাশ্রমটি। ভেঙেও পড়েছে অনেক জায়গায়। ঘরের ভিতর থেকে বার করে আনা হয়েছে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া খাট, হুইলচেয়ার। পুড়ে যাওয়া বীভৎস দেহগুলি চিনে নিতে পারছেন না পরিবারের লোকরাও। ‘‘কোনটা যে কে আমরা চিনতে পর্যন্ত পারছি না’’, বলেন এক জন শোকার্ত আত্মীয়।

পরিসংখ্যান বলছে, এক সন্তান নীতির কারণে চিনের জনসংখ্যায় বার্ধক্যের পাল্লা ভারী হচ্ছে ক্রমশ। সরকারি হিসাবে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের চার জন বাসিন্দার এক জনের বয়স হবে ষাটের বেশি। এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের অধিকাংশেরই আশ্রয় বৃদ্ধাশ্রমগুলির বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে কাঙ্গলেইউয়ান বৃদ্ধাশ্রমের ভয়াবহ আগুন।

fire china old age home henan province
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy