দু’দিন পরেই বন্ধ হতে চলেছে আমেরিকার কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত প্রকল্প ‘সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশনাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম’ (স্ন্যাপ)। এই প্রকল্পের উপরে নির্ভর করে রয়েছেন আমেরিকায় বসবাসকারী প্রায় চার কোটি ১৭ লক্ষ মানুষ, যার মধ্যে ৪০ শতাংশ শিশু। খাদ্য অনুদানের এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলে খাবার জোটাতে মুশকিলে পড়বেন আমেরিকায় বসবাসকারী আট জনের মধ্যে এক জন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের সমালোচনায় সরব হয়েছে প্রাদেশিক সরকার ও অসরকারি সংস্থাগুলি। আর প্রেসিডেন্ট এর দায় চাপিয়েছেন আমেরিকান কংগ্রেসের বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটদের উপরে।
১ অক্টোবর থেকে আমেরিকায় শুরু হয়েছে শাটডাউন। কংগ্রেসে বাজেট পাশ না হওয়ার ফলে আপৎকালীন বা অতিপ্রয়োজনীয় সরকারি দফতর ছাড়া বাকি সব সরকারি দফতরের কাজ বন্ধ। যাঁরা গত এক মাস ধরে কাজ করছেন, তাঁরাও বেতন পাচ্ছেন না। এ বার দেশের কৃষি দফতর ‘ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার’ জানিয়েছে, এই অচলাবস্থা যদি না কাটে তা হলে খাদ্য অনুদানের এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে। আর্থিক অবস্থা, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, বয়স— এই সমস্ত কারণের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের অভাব যাতে না হয়, সে জন্য ১৯৬৪ সালে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছেল। শুধু আমার প্রদেশ ম্যাসাচুসেটসে ১০ লক্ষ মানুষ এই প্রকল্পের উপরে নির্ভরশীল।
আমেরিকায় পরের বছর সরকারের খরচ কী পরিমাণ হবে, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের দুই কক্ষে গৃহীত হওয়ার পরে প্রেসিডেন্টের কাছে যায় এবং তিনি সেই বিল সই করলে সেটা আইন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। যদিও এখন আমেরিকান কংগ্রেসের দু’টি কক্ষেই রিপাবলিকান পার্টির সদস্যেরা সংখ্যায় বেশি, কিন্তু ৬০টি ভোট কম পাওয়ায় এই বছরের (এ দেশে আর্থিক বছর শুরু হয় ১ অক্টোবর থেকে) সিদ্ধান্ত গ্রহণের শেষ দিন, অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটের মেয়াদ গিয়েছে পেরিয়ে। যার ফলে শুধু সরকারি কর্মীরাই নন, বিপাকে পড়েছেন ‘স্ন্যাপ’-এর মতো বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনও। সাধারণ মানুষকে এ ভাবে বিপাকে ফেলার জন্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
কেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত এ বারের বাজেটে সায় দেয়নি? তাদের দাবি, ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’ সরকারি ভর্তুকির সাহায্যে লক্ষ লক্ষ আমেরিকানের স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করছে। ওই ভর্তুকি চালু রাখা হোক, না হলে এই স্বাস্থ্যবিমার খরচ প্রায় তিন গুণ বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষ সেই খরচ বহন করতে পারবেন না। এ ছাড়া ‘মেডিকেড’, যা বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী মানুষদের স্বাস্থ্য প্রকল্প, সেটাও বন্ধ করে দিতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। একই দশা হতে চলেছে বেশ কিছু অন্যান্য সরকারি স্বাস্থ্য প্রকল্পেরও। এগুলি চালু রাখার ও ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’-এ ভর্তুকি বজায় রাখার জন্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টি আগামী বছরের বাজেট বিল পাশ হতে দিচ্ছে না।
কিন্তু এই সরকারি অচলাবস্থার একটি অন্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রয়েছে। অন্তত ১০ লক্ষ সরকারি কর্মী এই পরিস্থিতিতে কোনও বেতন পাচ্ছেন না। তাই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কাছে আবেদন করছে এই অচলাবস্থা বন্ধ করার জন্য। এর পরে ‘স্ন্যাপ’ বন্ধ হয়ে গেলে কী ভাবে তাঁদের সংসার চলবে, সেই নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মামলা করেছেন অন্তত ২৫টি ডেমোক্র্যাট প্রদেশের গভর্নরেরা। লুইজ়িয়ানা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, ‘স্ন্যাপ’ চালু রাখতে প্রাদেশিক সরকারের তরফে অনুদান দেওয়া হবে। বড় মাপের বেশ কিছু অসরকারি সংস্থা ‘স্ন্যাপ’ চালু রাখতে ত্রাণ তহবিল তৈরি করছে।
তবু আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে, কত দিন এ ভাবে অন্নসংস্থান হবে চার কোটি মানুষের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)