Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
dollar

Dollar vs Rupee effect: ডলারের ধাক্কায় বেসামাল টাকা, ভারতীয় ছাত্রদের বিদেশে পড়ার স্বপ্ন কি আরও দূরে চলে যাচ্ছে?

উচ্চশিক্ষার উচ্চাকাঙ্ক্ষার ভরসা হল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির দেওয়া ছাত্র-ঋণ। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ছাত্রদের ঋণের বোঝা এখন অনেকটা বাড়বে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২২ ১৭:২৫
Share: Save:

ভারতীয় ছাত্রদের বিদেশে পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন কি ক্রমেই ফিকে হচ্ছে? ডলারের নিরিখে টাকার দামে রেকর্ড পতন হতেই ভারতীয় শিক্ষার্থী মহলে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

উদ্বেগের কারণ— বিদেশে ভারতীয়দের পড়াশোনার খরচে মাত্রাছাড়া বৃদ্ধির আশঙ্কা। ডলারের তুলনায় টাকার দাম কমেই চলেছে। পাঁচ বছর আগে যেখানে ডলার পিছু ৬৫ টাকার হিসাব কষতে হত, সেখানে এখন প্রতি ডলারে প্রায় ৮০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। বিদেশি কলেজে পড়ার খরচ, থাকা-খাওয়ার খরচ, দেশে যাওয়া-আসার খরচ মিলিয়ে যা প্রতি সেমেস্টার লাখ পাঁচেকের পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে।

এ দেশের বহু ছাত্রছাত্রী দেশের স্কুল শিক্ষা পর্ব মিটিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যান। সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষায় কখনও ভরসা জোগায় স্কলারশিপ। অনেককে ভরসা করতে হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির ঋণের উপর। যা বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে তার পর মেটান পড়ুয়ারাই। কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেই ঋণের অঙ্কও এখন অনেকটা বৃদ্ধি করতে হবে। ফলে হয় ঋণ শোধের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে হবে। না হয় ইনস্টলমেন্টের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। দু’ক্ষেত্রেই চাপ পড়বে সদ্য পড়াশোনা শেষ করা ছাত্রছাত্রীদের উপর।

শুধু জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে পাঁচ লক্ষ টাকার কাছাকাছি বেড়েছে ভারতীয়দের বিদেশে পড়াশোনার খরচ।

শুধু জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে পাঁচ লক্ষ টাকার কাছাকাছি বেড়েছে ভারতীয়দের বিদেশে পড়াশোনার খরচ। ছবি: সংগৃহীত

বিদেশে পড়তে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের খরচের মূল দু’টি বিষয় হল— কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি এবং বিদেশে থাকা-খাওয়ার খরচ। এত দিন আমেরিকায় প্রতি সেমেস্টারে মোটামুটি ৪০ হাজার ডলার খরচ করতে হত। জানুয়ারি মাসেও যার জন্য ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা প্রায় সাড়ে ২৯ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি ডলারের দাম প্রায় ৮০ টাকা ছুঁয়ে ফেলায় এখন ওই খরচই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ লক্ষ টাকায়। আমেরিকায় প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীদের থাকা-খাওয়ার খরচ মোটামুটি ৯০০০ ডলার। এখন তার জন্য প্রায় সওয়া সাত লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে ভারতীয় পড়ুয়াদের। এ ছাড়া এক লক্ষ টাকার যাতায়াত খরচও রয়েছে। যা প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীদের বিদেশে পড়াশোনার খরচ বাড়িয়েছে প্রায় ৪১ লক্ষ টাকায়। অর্থাৎ শুধু জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে পাঁচ লক্ষ টাকার কাছাকাছি বেড়েছে ভারতীয়দের বিদেশে পড়াশোনার খরচ।

ভারতের এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের এমডি অরিজিৎ সান্যাল জানাচ্ছেন, বিষয়টা যতটা কঠিন মনে হচ্ছে ততটা কঠিন না-ও হতে পারে। অরিজিতের মত, এক বার ছাত্রছাত্রীরা বিদেশে থেকে ডলারে উপার্জন করতে শুরু করলে তাদের ঋণ শোধ করতে অসুবিধা হওয়ারই কথা নয়।

সরকারি হিসাব বলছে, এ বছর ১৩.২৪ লক্ষ ভারতীয় পড়ুয়া বিদেশে গিয়েছেন পড়াশোনার জন্য। এর মধ্যে আমেরিকায় গিয়েছেন চার লক্ষ ৬৫ হাজার ছাত্রছাত্রী। কানাডায় গিয়েছেন এক কোটি ৮৩ লক্ষ। ব্রিটেনে এক কোটি ৬৪ লক্ষ। অস্ট্রেলিয়ায় এক কোটি ন’লক্ষ। বিদেশে পড়াশোনা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাকার দাম ডলারের তুলনায় কমলেও ইউরো বা পাউন্ডের তুলনায় বেড়েছে। ফলে আমেরিকা বা কানাডায় পড়াশোনা করতে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধা হলেও ইউরোপ বা ব্রিটেনে যাওয়া ভারতীয় পড়ুয়াদের সুবিধাই হবে।

বিদেশে ডলার উপার্জন করলে তা দিয়ে ভারতের ঋণ শোধ করা বরং আরও সহজ হবে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে।

বিদেশে ডলার উপার্জন করলে তা দিয়ে ভারতের ঋণ শোধ করা বরং আরও সহজ হবে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে। ছবি: সংগৃহীত

তবে কোনও কোনও ছাত্রের বক্তব্য, খরচ বৃদ্ধির কথা ভেবে হয়তো কেউ কেউ বিদেশে পড়াশোনার গন্তব্য বদলাতে পারেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই কোথায় পড়তে যাচ্ছেন সেখানকার নিয়মনীতির উপরেও পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নির্ভর করে। অনেকক্ষেত্রেই আইন এবং অন্যান্য নিয়মনীতি আলাদা হওয়ায় কলেজ বদলানো সহজ না-ও হতে পারে।

তবে ছাত্র ঋণ প্রদানকারী এক আর্থিক সংস্থার সিইও সুমিত জৈন জানাচ্ছেন, এই সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রীদের বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন হাত ছাড়া হবে না। বড় জোর কয়েকটি বদল হতে পারে— এক, ছাত্রছাত্রীরা অপেক্ষাকৃত কম খরচ হয় এমন দেশ, যেমন ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল, ইটালি, স্পেনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বেছে নেবে। দুই, তারা আরও দ্রুত বিদেশে ডলার উপার্জনের চেষ্টা শুরু করবে এবং দেশের ঋণ শোধ করবে।

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আরও একটি ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, ভারতীয়দের হাতে এখন টাকা আছে। তা ছাড়া বিদেশে পড়তে যাওয়া একটি দীর্ঘ পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত। ফলে কয়েক লক্ষ টাকার তফাত সেই সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করতে পারবে না।

তা ছাড়া যে হেতু ডলারের দাম বাড়ছে, তাই বিদেশে ডলার উপার্জন করলে তা দিয়ে ভারতের ঋণ শোধ করা বরং আরও সহজ হবে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dollar US dollar Rupee Foreign Universities
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE