Advertisement
E-Paper

আলান থেকে আলি, মৃত ১৫০০০ শিশু, সিরিয়ায় বিপন্ন আরও লক্ষ লক্ষ

সিরিয়ায় নিরন্তর ধ্বংসলীলা। আর সেই ধ্বংসের মুখ হিসেবে বার বার উঠে আসছে বিধ্বস্ত শৈশবের ছবি। প্রথমে আলান কুর্দি। তার পর ওমরান। এ বার শিরোনামে ওমরানের দাদা আলি। ১৭ অগস্ট রাতে রুশ যুদ্ধবিমান থেকে ভয়ঙ্কর বোমাবর্ষণে ভেঙে পড়েছিল আলিদের বাড়ি। ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে উদ্ধার করা হয় গোটা পরিবারকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৬ ১৮:৩২
ধ্বংসস্তূপে বিপন্ন শৈশব। আলেপ্পোয়।

ধ্বংসস্তূপে বিপন্ন শৈশব। আলেপ্পোয়।

সিরিয়ায় নিরন্তর ধ্বংসলীলা। আর সেই ধ্বংসের মুখ হিসেবে বার বার উঠে আসছে বিধ্বস্ত শৈশবের ছবি। প্রথমে আলান কুর্দি। তার পর ওমরান। এ বার শিরোনামে ওমরানের দাদা আলি। ১৭ অগস্ট রাতে রুশ যুদ্ধবিমান থেকে ভয়ঙ্কর বোমাবর্ষণে ভেঙে পড়েছিল আলিদের বাড়ি। ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে উদ্ধার করা হয় গোটা পরিবারকে। কিন্তু আলিকে বাঁচানো গেল না। আবার প্রমাণিত হল, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় সবচেয়ে বড় বিপদের মুখে শৈশব। কেউ শেষ হয়ে যাচ্ছে চিরতরে, কারও স্থায়ী শারীরিক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। যাদের ক্ষেত্রে ক্ষতি শারীরিক নয়, এক দুঃসহ পরিস্থিতি মানসিক ভাবে শেষ করে দিচ্ছে তাদের।

রক্তাক্ত, ধুলোয়-কাদায় মাখামাখি, তীব্র আতঙ্কে বাক্যহারা একটা মুখ। যন্ত্রণার তীব্রতায় যেন কাঁদতেও ভুলে গিয়েছে বছর পাঁচেকের ছেলেটা। যে চিত্রসাংবাদিক শিশু ওমরানের ভিডিওটি শুট করেছিলেন, তিনিই সেই ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, বিধ্বস্ত ওমরান আনমনেই নিজের বাঁ হাতের দু’পিঠ দিয়ে মুছে নিচ্ছে কপাল আর গাল পেয়ে গড়িয়ে আসা রক্ত। হাতের দিকে চেয়ে দেখছে এক ঝলক। তার পর অ্যাম্বুল্যান্সের সিটে মুছে নিচ্ছে হাতটা।

ওমরানের এই ছবিই দিন কয়েক আগে ঝড় তুলে দিয়েছিল গোটা বিশ্ব। শনিবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে তার দাদা আলি।

এই ভিডিও মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে আলেপ্পো শহরের ওই পাঁচ বছরের শিশুর রক্তাক্ত হওয়ার ছবি। সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই তুলনায় চলে এসেছে আলান কুর্দির ছবিটা। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের একদম গোড়ায় তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে পৌঁছেছিল বছর তিনেকের আলানের নিষ্প্রাণ দেহটা। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পাড়ি দিয়েছিল আলানের পরিবার। মাঝ সমুদ্রে নৌকা টালমাটাল হয়ে ওঠে। আলানের বাবা আবদুল্লা ছাড়া আর কেউ বাঁচেননি। নৌকা উল্টে জলে ডুবে যান আলানের মা। ডুবে যায় আলান এবং তার দাদা গালিপও। পর দিন সকালে আলানের দেহটা ভাসতে ভাসতে পৌঁছেছিল তুরস্কের সৈকতে। লাল টি-শার্ট আর নীল হাফ প্যান্ট পরে একটা ফুটফুটে সুন্দর শিশুকে মুখ থুবড়ে বালির উপর পড়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়েছিলেন এক পুলিশ কর্মী। আলানকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিলেন। কিন্তু চিকিত্সকরা বুঝে যান, অনেক আগেই শীতল হয়ে গিয়েছে তিন বছরের বাচ্চাটার শরীর।

তুরস্কের সৈকতে এ ভাবেই পড়েছিল আলানের নিষ্প্রাণ দেহ।

সমুদ্র সৈকতে মুখ থুবড়ে নিষ্প্রাণ পড়ে থাকা আলানের দেহের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই ঝড় ওঠে গোটা বিশ্বে। ভয়ঙ্কর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সিরিয়ায় রোজ মানবাধিকার যে ভাবে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে, শিশুরাও যে ভাবে যুদ্ধের বলি হচ্ছে, তার প্রবল নিন্দা শুরু হয়েছিল। যুদ্ধ এখনও থামেনি। ১১ মাস পরে আবার একই ছবি। রুশ বোমায় ভেঙে পড়ল বাড়ি। ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে গেল গোটা পরিবার। ওমরান বেঁচে গিয়েছে ঠিকই কিন্তু তার দাদা বছর দশেকের আলিকে চিকিৎসকরা আর বাঁচাতে পারেননি। ওমরান আর তার পরিবার মারাত্মক জখম নিয়ে চিকিৎসাধীন।

আলেপ্পোর চেহারা এখন এই রকম।

আলান থেকে ওমরান— কত শিশু বলিতে চড়ল সিরিয়ায়। রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেব বলছে, সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২ লক্ষ ৯০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ হাজারই শিশু। এই সংখ্যাকে অবশ্য তুচ্ছ বলে মনে হবে, যদি আলেপ্পোর ভবিষ্যতটার কথা কল্পনা করা যায়। বহু শতাব্দী পুরনো শহর এবং সিরিয়ার দীর্ঘ দিনের বর্ধিষ্ণু বাণিজ্যকেন্দ্র আলেপ্পোকে দেখলে এখন চেনাই দায়। কয়েক বছর আগেও সমৃদ্ধির শিখরে থাকা শহরটা এখন সিরিয়ার অন্য যে কোনও শহরের মতো ধূসর ধ্বংসস্তূপ। প্রবল বোমাবর্ষণের ক্ষত বুকে নিয়ে দিকে দিকে শুধু বড় বড় বাড়ির ভগ্নস্তূপ। গোটা আলেপ্পো অবশ্য আইএস বা বিদ্রোহীদের দখলে নয়। আলেপ্পোর পশ্চিমাংশ বাশার আল-আসাদের বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। পূর্ব অংশ বিদ্রোহীদের দখলে। এই বিদ্রোহীদের হাত থেকে আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলকে উদ্ধার করতে রুশ যুদ্ধবিমান রোজ হানা দিচ্ছে। লাগাতার বোমাবর্ষণ চলছে। আর বিদ্রোহীরা নিজেদের এলাকা থেকে রকেট ছুড়ছে সরকার নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম আলেপ্পোর দিকে। রুশ বাহিনীর আক্রমণের প্রাবল্যের তুলনায় অবশ্য বিদ্রোহীদের হামলা নেহাতই দুর্বল। এই অসম লড়াইয়ের মাঝে যে সাধারণ নাগরিকরা ফেঁসে রয়েছেন, তাঁদের নিয়েই চিন্তায় পড়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। ইউনিসেফের হিসেব বলছে, বিদ্রোহীদের দখলে থাকা পূর্ব আলেপ্পোয় এখনও প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের বাস। তাদের মধ্যে অন্ত এক লক্ষই হল শিশু। আসাদ আর রুশ বাহিনীর যৌথ হামলা পূর্ব আলেপ্পোর উপর চলতে থাকলে আরও কত আলান, ওমরান, আলির মুখ ভেসে উঠবে, তা ভেবেই শিউরে উঠছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

বছর দু’য়েক আগেও আলেপ্পো এই রকমই ছিল।

অনেক শিশু চিরতরে ঝরে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। আরও অনেকের ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেকে প্রাণে বেঁচে গেলেও বড়সড় শারীরিক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। ঘটনাক্রমে যারা প্রাণহানি বা অঙ্গহানির হাত থেকে বেঁচে যাবে, তাদের কী হবে? যে প্রবল রক্তপাত, ধ্বংসলীলা, একের পর এক প্রিয়জন বিয়োগ আর হিংসার মধ্যে বড় হচ্ছে সিরিয়ার এই প্রজন্ম, তাতে সাংঘাতিক মানসিক ক্ষতির সম্মুখীনও হচ্ছে তারা। সিরিয়ার এই শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ঘোর উদ্বেগে ইউনিসেফ।

আরও পড়ুন: কথা রাখেননি জিন্নাহ, নবাবকে মেরেছে সেনা, মরিয়া যুদ্ধে বালুচিস্তান

Syria Omran Ali Aylan Kurdi Chindern in Danger
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy