Advertisement
E-Paper

ইতিহাস সৃষ্টির দিনে অন্য চোখে ফিরে দেখা হিলারিকে

গল্পটা শুরু হল খুব সাধারণ ভাবে। ‘‘১৯৭১-এর বসন্তে দেখা হয়েছিল ওর সঙ্গে।’’ ৬৯ বছরের যে মানুষটি ডেমোক্র্যাট কনভেনশনে এ কথা বলছেন, তাঁর হাত আর গলা ঈষৎ কাঁপছে। কারণ তিনি সেই মানুষটিকে নিয়ে কথা বলছেন, যিনি তাঁকে গত ৪৫ বছর ধরে মুগ্ধতায় ভরিয়ে রেখেছেন।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৪
বিল ক্লিন্টন ও হিলারি রডহ্যাম ক্লিন্টন

বিল ক্লিন্টন ও হিলারি রডহ্যাম ক্লিন্টন

গল্পটা শুরু হল খুব সাধারণ ভাবে। ‘‘১৯৭১-এর বসন্তে দেখা হয়েছিল ওর সঙ্গে।’’ ৬৯ বছরের যে মানুষটি ডেমোক্র্যাট কনভেনশনে এ কথা বলছেন, তাঁর হাত আর গলা ঈষৎ কাঁপছে। কারণ তিনি সেই মানুষটিকে নিয়ে কথা বলছেন, যিনি তাঁকে গত ৪৫ বছর ধরে মুগ্ধতায় ভরিয়ে রেখেছেন।

তাঁর নাম হিলারি রডহ্যাম ক্লিন্টন। আর মঙ্গলবার রাতে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যতিক্রমী এক বক্তৃতায় তুলে আনলেন তাঁর স্বামী এবং প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন। চার দশক ধরে প্রতি চার বছর অন্তর এমন বক্তৃতা অনেক দিয়েছেন তিনি। কিন্তু গত কাল রাতে ফিলাডেলফিয়ায় কনভেনশন মঞ্চের মুহূর্তটা অন্য রকম ছিল।

ডেমোক্র্যাটিক দল থেকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে প্রথম মহিলা পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার পরেই এক প্রস্ত ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলেছেন হিলারি। প্রেসিডেন্টের তখ্‌তে বসলে তা গোটা আমেরিকার জন্য আর এক ইতিহাস তৈরি করবে। তার আগে ৪২ মিনিটে হিলারিকে আলাদা চোখে যেন ফিরে দেখলেন বিল। তাঁদের প্রেম, দাম্পত্য জীবন থেকে রাজনৈতিক কেরিয়ারগ্রাফ— বাছাই করা শব্দে হিলারির প্রশংসায় মুখর হয়েছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। আর গোটা দুনিয়া শুনেছে এক অনবদ্য প্রেমের কাহিনি। তবে সেখানে শুধুই ছবির মতো সব কিছু নয়।
বাস্তবে আর পাঁচটা মানুষের মতোই সেখানেও ওঠাপড়া-আঘাত-আনন্দ-অভিমান মিলেমিশে রয়েছে।

১৯৭১-এ ইয়েল ল স্কুলে ঢোকার পরে ক্লাসে মেকআপ ছাড়া মোটা ফ্রেমের চশমা পরা মেয়েটিকে দেখে চমকে গিয়েছিলেন বিল। প্রথম দর্শনেই মনে হয়েছিল, এ মেয়ের মধ্যে কঠোর ক্ষমতা রয়েছে। বিল ক্লিন্টনের কথায়, সারা জীবন ব্যাপী সম্পর্কের সেই শুরু। যা কখনও ভাল সময় দেখেছে, কখনও খারাপ। কখনও হৃদয় ভেঙেছে আবার আনন্দও ফিরে এসেছে। স্বামী স্ত্রীর হয়ে বলছেন, এমনটা আগেও হয়েছে। প্রাক্তন কোনও প্রেসিডেন্ট সম্ভাব্য ভাবী প্রেসিডেন্টের হয়ে সওয়াল করছেন, এমনটাও হয়েছে। কিন্তু এই দুইয়ের মিশ্রিত সমীকরণ আগে কেউ কখনও দেখেছে কি? প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিন্টন ইতিহাস সৃষ্টি করলে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তখন হবেন ফার্স্ট জেন্টলম্যান! অদ্ভুত সমীকরণই বটে।

আমেরিকার ইতিহাসে প্রায় ২৫ বছর ধরে শিরোনামে এসেছেন দুই ক্লিন্টন। বার-এ বসা বন্ধুদের সঙ্গে হাল্কা চালে যে ভাবে গল্প করে কেউ, অনেকটা সেই ঢঙে বিল ফিরে গিয়েছেন স্মৃতিচারণায়। শিকাগোর শহরতলিতে রডহ্যাম পরিবারের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ, হিলারিকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া, প্রথম বার নারাজ হিলারিকে ফের বোঝানো এবং শেষমেশ ১৯৭৫-এ ১১ অক্টোবর বিয়ে। বিলের কথায়, ‘‘প্রিয় বন্ধুকে বিয়ে করলাম!’’ আশা ছিল এই সম্পর্ক নিয়ে কোনও আফশোস থাকবে না হিলারির। সবটা হয়তো সত্যি হয়নি। মনিকা লিউইনস্কি কেলেঙ্কারি থেকে নিজের ইমপিচমেন্ট— বিল ক্লিন্টনের বক্তৃতায় অবশ্য তিক্ত কোনও পর্বেরই উল্লেখ ছিল না। তবে ৪০ বছরের দাম্পত্যের পথটা যে আগাগোড়া মসৃণ ছিল না, অকপটে তা বলেছেন।

২০১৬ সালের বিল ক্লিন্টন আগের মানুষটির ছায়ামাত্র। বাইপাস সার্জারির পরে নিরামিষ ডায়েটে শরীর এখন অনেকটা ছিপছিপে। এ বছর হিলারির হয়ে প্রচারে প্রাইমারিগুলোতে তেমন জোরদার কিছু বলেননি বিল। তাই বোধহয় কনভেনশনে এসে ঝলসে উঠলেন। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম এক বারও না করে বুঝিয়ে দিয়েছেন ওই দলের সারবত্তা কতটা কম। পরিবর্তন আনার জন্য সব চেয়ে যোগ্য মুখ তাঁর কাছে হিলারিই। বিলের কথায়, ‘‘হিলারি আমাদের আরও শক্তিশালী করবে।’’ তাই তাঁর স্ত্রীর উপরেই ভরসা রেখে আমেরিকাকে ইতিহাস সূচনার পথে হাঁটতে বলে গেলেন বিল ক্লিন্টন।

Hillary Rodham Clinton
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy