মাত্র দু’দিনের মাথায় ফের হামলা। এ বার জঙ্গিরা গলা কেটে খুন করল আরও এক হিন্দু পুরোহিতকে। এই ঘটনাতেও দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি গোষ্ঠী।
বাংলাদেশে একের পর এক মুক্তমনা ব্লগার, অধ্যাপক, সমকামী অধিকার আন্দোলনে জড়িত কর্মী এবং বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। পুলিশের সূত্রই বলছে, ইসলামের অবমাননার অভিযোগে গত বছর জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত অন্তত ৪০ জনকে এ ভাবে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। অথচ বাংলাদেশ সরকারের তরফে দাবি, আইএসের উপস্থিতি নেই এ দেশে। স্থানীয় কিছু জঙ্গি গোষ্ঠী এবং বিরোধীদের উপরেই দায় চাপিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু এই হিংসা নিয়ন্ত্রণে সরকার কেন সে ভাবে তৎপর নয়, আন্তর্জাতিক মহলে সে প্রশ্ন উঠছে বারবারই।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ আনন্দগোপাল গঙ্গোপাধ্যায় নামে ওই পুরোহিতের উপরে চড়াও হয় মোটরবাইকে আসা জঙ্গিরা। ঝিনাইদহ জেলার নলডাঙা গ্রামে ঘটনা়টি ঘটেছে। নলডাঙার করাতিপাড়ায় তাঁর বাড়ি। আজ বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার দূরে সাইকেলে মন্দিরে যাওয়ার পথে মহিষাডাঙার কাছে একটি নির্জন মাঠের মধ্যে আক্রান্ত হন আনন্দগোপাল। এএসপি গোপীনাথ কাঞ্জিলাল জানিয়েছেন, জঙ্গিরা প্রথমে বাঁশ দিয়ে মাথায় আঘাত করে। তার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে পুরোহিতকে ফেলে রেখে চম্পট দেয়। বেশ কিছু ক্ষণ পরে মাঠের পাশে কাজে ব্যস্ত কৃষকরা আনন্দগোপালের দেহ পড়ে থাকতে দেখে চেঁচিয়ে লোকজন জড়ো করেন।
পাঁচ মাস আগে এই ঝিনাইদহেই ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সমির আলিকে খুন করে জঙ্গিরা। ঝিনাইদহের পুলিশ প্রধান আলতাফ হোসেন বলেছেন, ‘‘আনন্দগোপাল এক জন নির্বিরোধী সাধারণ মানুষ। কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল এমনটাও নয়। কেন তাঁকে খুন করা হলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
আনন্দগোপালের ছেলে সিন্ধু বলেন, ‘‘বাবা প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফুল তুলে পুজো করতে যান। আজ সকালেও বেরিয়েছিলেন। কিছু ক্ষণ পরে শুনি এই ঘটনা।’’
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চগড়ে একই ভাবে গলা কেটে খুন করা হয় যজ্ঞেশ্বর রায় নামে আর এক হিন্দু পুরোহিতকে। আর মাত্র দু’দিন আগেই জঙ্গিদের কোপের শিকার হন জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম। চট্টগ্রামে তাঁকে প্রথমে কুপিয়ে ও পরে গুলি করে খুন করে জঙ্গিরা। একই দিনে না়টোরে নিজের দোকানে খুন হন প্রবীণ খ্রিস্টান এক ব্যবসায়ী। এই দু’টি ঘটনাতেও হাত ছিল আই এসেরই।
কিছু দিন আগে রাজশাহিতে অধ্যাপক খুনে জড়িত এক জঙ্গি আবার মঙ্গলবার ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছে। এ দিন ঢাকা ও রাজশাহিতে মোট তিন সন্দেহভাজন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। ঢাকায় নিহত দুই জঙ্গির নাম তারেক হাসান নিলু ওরফে ওসমান এবং সুলতান মাহমুদ ওরফে কামাল। পুলিশ জানিয়েছে, এই ওসমানই রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকির হত্যাকাণ্ডে জড়িত। সে জেএমবির বড় নেতা। রাজশাহিতে নিহত জঙ্গির নাম জামাল উদ্দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy