Advertisement
E-Paper

অর্ধেক আকাশ আজ বিষক্রিয়ায় নীল

বার বার সংবাদ শিরোনামে আসছিলেন। আলোকবৃত্ত থেকে বেশি দিন দূরে থাকা বোধ হয় ধাতে সইত না তাঁর। তাই নিজের মতো করে, নিজ ভঙ্গিমায়, নিজ পদ্ধতিতে বার বার খুঁজে নিতেন আলোকবৃত্তে ঢুকে পড়ার দরজাটা।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ০১:৩০
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

বার বার সংবাদ শিরোনামে আসছিলেন। আলোকবৃত্ত থেকে বেশি দিন দূরে থাকা বোধ হয় ধাতে সইত না তাঁর। তাই নিজের মতো করে, নিজ ভঙ্গিমায়, নিজ পদ্ধতিতে বার বার খুঁজে নিতেন আলোকবৃত্তে ঢুকে পড়ার দরজাটা। সে পন্থা সব সময়ই যে সকলের জন্য খুব সুখদায়ক ছিল, তা বলতে পারি না। কিন্তু এই শেষ বার কান্দিল বালোচ আলোকবৃত্তে এলেন যে কারণে, তা যে সর্বৈব দুঃখদায়ক, সে নিয়ে কোনও সংশয় নেই।

বড্ড অবেলাতেই চলে গেলেন এই পাকিস্তানি মডেল। গেলেন বেশ মর্মান্তিক ভাবেই। নিজের ভাইয়ের হাতেই খুন হয়ে গেলেন তিনি। কান্দিলের ভাইয়ের স্বীকারোক্তি অন্তত তাই বলছে। বিষ খাইয়ে কান্দিলকে হত্যা করার জন্য কোনও পরিতাপও তার নেই বলেই সে ‘সদর্পে’ ঘোষণা করছে।

কেন এই ‘দর্প’ হত্যাকারীর? পরিবারের সম্মান নাকি ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছিলেন কান্দিল। তাই বেঁচে থাকার অধিকার তিনি হারিয়েছিলেন। বলেছে হত্যাকারী সহোদর। অর্থাৎ, কান্দিলের সহোদর নীতি পুলিশ হয়ে উঠেছিল। শুধু পুলিশ হয়েই থেমে থাকেনি, বিচারকের ভূমিকাও সে পালন করেছে একাধারে। উন্মুক্ত, অবাধ যাপন রুখতে না পেরে, পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে সে কান্দিল বালোচকে।

কান্দিলকে নিয়ে বিতর্ক কম ছিল না। কখনও নগ্ন নৃত্যের বাজি ধরে, কখনও শাহিদ আফ্রিদিকে দেশে ফিরতে বারণ করে,কখনও স্নান করতে করতে বিরাট কোহলির প্রতি প্রগাঢ় প্রেম নিবদনের ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে বার বার শিরোনামে এসেছেন কান্দিল। অনেকের মনে হত, কান্দিল চরম অশালীন। কিন্তু কান্দিল যে প্রতিবাদের প্রতিমূর্তি ছিলেন, তা কিছুতেই অস্বীকার করা সম্ভব নয়। পাকিস্তানের এক কঠোর রক্ষণশীল সামাজিক আবহের মধ্যে বেঁচে, ততোধিক রক্ষণশীল পরিবারে প্রতিপালিত হয়ে, রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে, গোঁড়ামির বিরুদ্ধে, অবান্তর বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে কান্দিল বালোচের যে দ্রোহ ছিল, তাকে নস্যাৎ করা যাবে না কিছুতেই। এ কথা ঠিক যে, মুক্ত সমাজের প্রতিচ্ছবি মানেই পোশাকের বন্ধনমুক্তি বা অবাধ শরীরি প্রদর্শনী নয়। মুক্ত সমাজ, উদার সমাজের আন্দোলন আরও অনেক পথে গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু এ কথাও মানতেই হবে যে,পাকিস্তানের রক্ষণশীল সমাজে কান্দিল বালোচ যা ঘটাচ্ছিলেন,তা বিপ্লবের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।

যে কোনও রক্ষণশীল সমাজে, এই দ্রোহ চরম অপরাধ আর অবমাননা হিসেবেই পরিগণিত। যে সমাজ নিজের সমস্ত অনুশাসন মূলত নারীর উপরেই প্রয়োগ করতে অভ্যস্ত, বিভিন্ন নিগড়ে শুধু নারীর হাতে-পায়ে নানা শৃঙ্খল পরাতে অভ্যস্ত, সেই সমাজে কান্দিল বালোচের জন্মই এক মাইলফলক। পাকিস্তানের মতো রক্ষণশীল দেশে সাধারণত রাষ্ট্রই কান্দিলদের জনসংযোগের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু কান্দিল বালোচের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে সক্রিয় হতেই হল না। সমাজই রাষ্টের হয়ে নিদারুণ আঘাতটা নামিয়ে আনল। তাও আবার সহোদরের মাধ্যমে।

কান্দিল হয়তো অবেলাতেই চলে গেলেন। যেতে বাধ্য হলেন। তবে দ্রোহের বীজ কিন্তু তিনি বপন করে গেলেন। অসংখ্য নিগড়ের ফাঁসে আড়ষ্ট হয়ে থাকা অর্ধেক আকাশটায় যে একটা বুকফাটা কান্না লুকিয়ে, তা প্রমাণ করে দিয়ে গেলেন। মুখ লুকিয়ে শুধু কাঁদার দিন যে শেষ, তাও দেখিয়ে গেলেন।

আঘাতটা কিন্তু শুধু ব্যক্তি কান্দিলের উপর তাঁর সহোদরের নয়। আঘাতটা সামাজিক গোঁড়ামির নিগড়ে হাঁসফাঁস করতে করতে মুক্তির জন্য আকুল হয়ে ওঠা সব নারীর উপরে গোটা পুরুষতন্ত্রের।

news letter qandeel baloch honour killing pak model murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy